ছিনতাই হওয়া মোবাইলে দেওয়া হয় ফ্ল্যাশ, পরিবর্তন করা হয় আইএমইআই নম্বর 


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৩, ২০২৫, ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ /
ছিনতাই হওয়া মোবাইলে দেওয়া হয় ফ্ল্যাশ, পরিবর্তন করা হয় আইএমইআই নম্বর 

প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন আমিনুল ইসলাম। তিনি তাঁর সমবয়সি স্থানীয় একজনের কাছ থেকে ২৩ হাজার টাকায় স্যামসাং সেকেন্ড হ্যান্ড একটি মোবাইল ফোন কেনেন। ফোনটি ব্যবহারের কিছুদিন পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পল্লবী থানার এক সদস্য তাঁকে কল দেন। মোবাইল ফোনসহ তাঁকে থানায় আসতে বলেন। এতে আমিনুল ভয় পেয়ে যান। পরে তাঁর এক স্বজনকে নিয়ে পল্লবী থানায় যান এবং ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের জানান, তাঁরা যে ফোনটি ব্যবহার করছেন সেটি চোরাই। শুনে তাঁরা হতবাক। আমিনুল জানতে পারেন পল্লবীর সিরামিক রোড থেকে ফোনটি ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় ফোনের মালিক পল্লবী থানায় মামলা করেন। ওই ফোনটির দাম ছিল ৬০ হাজার টাকা। ফোনটি ফেরত দেন আমিনুল।

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় গণপরিবহনে থাকা অবস্থায় সোনিয়া আক্তারের রিয়েলমি ফোনটি ছিনতাই হয়। এ ঘটনায় তিনি তেজগাঁও থানায় জিডি করেন। ওই জিডির তদন্তে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেন ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ফোনটি ছিনতাইয়ের পর অনলাইনে বিক্রির জন্য দেওয়া হয়। পরে একজন গ্রাহক ফোনটি কেনেন। এরপর ওই গ্রাহকের কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার করা হয়।

এভাবে গণপরিবহন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, ফাঁকা রাস্তা, অফিস-আদালত এমনকি বাসাবাড়ি থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাই বা চুরি হচ্ছে। মোবাইল ফোনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকায় অনেকে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। এসব খোয়া যাওয়া ফোন খুব অল্প লোকই ফেরত পাচ্ছেন। অধিকাংশ ফোন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ফোন ছিনতাই বা চুরির সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি হাত বদল হয়ে যায়। প্রথমেই চক্রের সদস্যরা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এরপর সিম ফেলে দিয়ে মোবাইল ফোনটি ফ্ল্যাশ দেন। দামি ফোন হলে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বর পরিবর্তন করে ফেলেন। এরপর মোবাইল ফোনগুলো বিভিন্ন দামে বাজারে বিক্রি করে দেন। অনেক সময় দামি ফোনগুলো দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

একাধিক মোবাইল ফোন উদ্ধারকারী ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলছেন, ‘ছিনতাই, চুরি বা খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনের ৩০ শতাংশ আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হই। ৭০ শতাংশ ফোন উদ্ধার করতে পারছি না। এসব ফোনের অনেক সময় আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা হচ্ছে, ফলে সেটা উদ্ধার সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া আইফোনের ক্ষেত্রে মাত্র ১০ শতাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও ৯০ শতাংশ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমরা ধরেই নিই এগুলো দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী একটু সচেতন হলেই ছিনতাই, চুরি বা খোয়া রোধ করা অনেকাংশে সম্ভব।’

২৫ আগস্ট মোহাম্মদপুরের আসাদগেট থেকে আবুল হাসানের ইনফিনিক্স মোবাইল ফোনটি খোয়া যায়। এ ঘটনায় ২৬ আগস্ট তিনি মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেন। ১৭ আগস্ট মতিঝিল থেকে বিলকিস আরা বানুর স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোনটি খোয়া যায়। ১৮ আগস্ট তিনি মতিঝিল থানায় জিডি করেন। একই দিন মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে রিফা তামান্নার রিয়েলমি ফোনটি খোয়া যায়। ওই দিনই তিনি মিরপুর থানায় জিডি করেন। ১৬ আগস্ট হাজারীবাগ থেকে আনোয়ার হোসেনের স্যামসাং মোবাইল ফোনটি খোয়া যায়।

১৮ আগস্ট তিনি হাজারীবাগ থানায় জিডি করেন। ২৫ মে ভাটারা থেকে ফজলে রাব্বির ওয়ান প্লাস মোবাইল ফোনটি খোয়া যায়। ওই দিনই তিনি ভাটারা থানায় জিডি করেন। উল্লিখিত ফোনগুলো এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এভাবে অসংখ্য মোবাইল ফোন প্রতিদিনই ছিনতাই ও চুরি হচ্ছে। জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ মোবাইল ফোন চুরি বা ছিনতাই হয়, যার খুব সামান্যই উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলছেন, ‘অসাবধানতা ও অসচেতনতার কারণে অনেকে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন হারিয়ে ফেলেন বা চুরি হয়ে যায়। ছিনতাইকারীরাও মোবাইল ফোন টার্গেট করে। ছিনতাই বা চুরির ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের আমরা নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। অন্যদিকে মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে জিডি করার জন্য অনুরোধ রইল। চুরি, ছিনতাই বা হারানো মোবাইল ফোন উদ্ধারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক মোবাইল ফোন উদ্ধার করে আমরা প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করেছি। মোবাইল ফোন চুরি, ছিনতাই বা হারানো রোধে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি।’