

৯ ডিসেম্বর নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যু দিবস। দিবসটি ঘিরে রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দে তিন দিনব্যাপী ভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকার মাত্র ৯টি দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
পত্রিকাগুলো হলো, দৈনিক আমার দেশ, দেশ রূপান্তর, যুগান্তর, যায় যায় দিন, প্রথম আলো, ঐষী বাংলা, ডেইলি স্টার, নিউএজ ও দি পিপল। এদিকে, বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর ৯৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাঁর বসতভিটার সাড়ে তিন শ বিঘা জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ওই জমি কারা দখলে রেখেছে তার কোনো তালিকা নেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর এলে কলকাতার সোদপুর থেকে রোকেয়ার দেহাবশেষ পায়রাবন্দের মাটিতে সমাহিত করার দাবি জোরালো হয় স্থানীয় এবং রোকেয়ার পরিবারের কাছে। এরপর আবার সবাই এক বছর নিশ্চুপ থাকে। স্থানীয় বেশ কজন জানান, রোকেয়া দিবস এলে ধোয়ামোছার কাজ হয় এখানে।
রোকেয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে জমি উদ্ধারের দাবি জানানো হলেও কোনো কাজই হয়নি। বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, বেগম রোকেয়ার ৩০০ বিঘার ওপরে লাখেরাজ সম্পত্তি ছিল। কিন্তু তাঁর নামে এখন ১ শতক জমিও নেই। স্মৃতি কেন্দ্রটি রয়েছে মাত্র ৩ একর ২৫ শতকের মধ্যে এবং বসতভিটার ধ্বংসস্তূপটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাত্র ৩০ শতকের ওপর। সেটিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইনবোর্ড রয়েছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে স্মৃতি কেন্দ্রকে বিকেএমই গার্মেন্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হয়।
সেনাসমর্থিত সরকার চলে যাওয়ার পর এটি দখলমুক্ত করে রোকেয়াচর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার দাবি থাকলেও বাস্তবে তেমন কিছু হয়নি। তবে স্মৃতি কেন্দ্রে আজ থেকে চালু হচ্ছে মহিলাদের সেলাই প্রশিক্ষণ, শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন ও সংগীত প্রশিক্ষণ। ১৯৯৭ সালে রোকেয়ার জন্মভিটায় একটি স্মৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। স্মৃতি কেন্দ্রে রয়েছে একটি অফিস ভবন, গেস্টহাউস, মিলনায়তন, ডরমেটরি, গবেষণাকক্ষ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গ্রন্থাগার, আবাসিক সুবিধাসহ বিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়। স্মৃতি কেন্দ্রের ভিতর মনোরম পুকুরপারে তৈরি করা হয় বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য।
রংপুরের পায়রাবন্দের খোর্দমুরাদপুর গ্রামে বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের। খানবাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয়। ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। ১৯১০ সালের শেষ দিকে তিনি কলকাতায় যান। অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন, অর্ধাঙ্গী, মতিচূর ছাড়াও অসংখ্য বই লিখে তিনি সারা বিশ্বে সমাদৃত হন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। কলকাতার সোদপুরে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক, বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবিদ করিম মুন্না বলেন, ‘বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র ঘিরে নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত স্মৃতি কেন্দ্রটি আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে।’
আপনার মতামত লিখুন :