জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে নয়াদিগন্তের অফিসে হামলা ও আগুন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫, ৩:৫৮ অপরাহ্ণ /
জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে নয়াদিগন্তের অফিসে হামলা ও আগুন
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩। আওয়ামী শাসনামল। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল পাঠকপ্রিয় দৈনিক নয়া দিগন্তে।আওয়ামী আমলে বলতে গেলে এই পত্রিকাটিই ছিল বিরোধী মতের একমাত্র মুখপাত্র। শুধুমাত্র এই একটি মাত্র কারণে পত্রিকাটির কণ্ঠ চেপে ধরতে চেয়েছিল পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদী সরকার।

কী ঘটেছিল সেদিন : ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টার দিকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি নটর ডেম কলেজের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় মতিঝিলের শাপলা চত্বর এবং আরামবাগ উভয় দিক থেকে পুলিশ মিছিলটি ঘিরে ফেলে। এ সময় উভয় দিক থেকে পুলিশ মিছিলটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

এ সময় জামায়াত-শিবিরের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন ওই এলাকায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। পুলিশের অ্যাকশনে এক পর্যায়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নেতাকর্মীরা আশপাশের রাস্তা ও গলি দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। নটর ডেম কলেজের উল্টো দিকে ইডেন কমপ্লেক্সের ভিতরে পাঁচতলা একটি ভবনে তখন অফিস ছিল নয়া দিগন্তের। ঘটনার ঠিক ওই সময়টাতে নয়া দিগন্তের মূল ফটক বন্ধ ছিল। ওই এলাকায় পুলিশের অ্যাকশন শেষ হলে হঠাৎ করেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ১০-১২ জনের একদল দুর্বৃত্ত নয়া দিগন্ত কার্যালয় লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

এ সময় কার্যালয়ের সামনে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এক পর্যায়ে তারা গাড়িতে এবং নয়া দিগন্তের প্রেসে অগ্নিসংযোগ করে। মুহূর্তে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলা শুরু করে। এতে আশপাশে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কার্যালয়ের ভিতরে এসময় যারা পত্রিকার নানা কাজে যুক্ত ছিলেন তারা আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন, কেউ কেউ ছাদে উঠে যান।

অগ্নিসংযোগের পরপরই বাইরে থাকা পত্রিকার কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। আগুন প্রেসে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে রাখা ১৫-১৬টি কাগজের রোলসহ বিপুল মুদ্রিত কাগজ পুড়ে যায়।

নয়া দিগন্তে আগুন দেয়ার ঘটনা শুনে ওই দিনই বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিক-পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ নয়া দিগন্তে ছুটে আসেন। বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে নয়া দিগন্তে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ঘটনার পরদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ নয়া দিগন্তসহ গণমাধ্যমে হামলা রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

হামলার ঘটনায় নয়া দিগন্ত বিশেষ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠতার ব্যাপারে আপসহীনতার কথা দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করে।

নয়া দিগন্ত প্রকাশনার শুরু থেকেই পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সাংবাদিকতা করে এসেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রে যা ঘটছে, নয়া দিগন্ত এখনো তাই প্রকাশ করে চলেছে। কখনো ‘অ্যাজেন্ডাবেইজড জার্নালিজম’কে নয়া দিগন্ত প্রশ্রয় দেয়নি।