ড. আবদুল লতিফ মাসুম
রবীন্দ্রনাথের ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়, ছোট ছোট গ্রামগুলো’কে বড় বড় অশান্তির কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। হাজার বছর ধরে এই বাংলার মাটিতে প্রীতি আর সম্প্রীতিতে বসবাস করে আসছে মানুষেরা। সেখানে শাসক শ্রেণীর শোষণ ছিল ত্রাসন ছিল কিন্তু ছিল না ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া। এই প্রশ্ন ছিল না যে, কে হিন্দু কে মুসলমান কিংবা বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সবারই পিতৃভূমি ছিল অবারিত বাংলা। এই দেশটি যখন থেকে অধীন হতে শুরু করে তখন থেকেই সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়াতে শুরু করে বিদেশী প্রভুরা। অবশেষে ভেদ বুদ্ধি এবং সাম্প্রদায়িকতা এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে, ভাগ হয় দেশ। তবুও স্থানীয় পর্য়ায়ে ন্যূনতম শান্তিশৃঙ্খলা ও সমতা দীর্ঘকাল বহমান ছিল। কবি ফজলুল করিম বলেন,
‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহু দূর?
মানুষেরই মাঝেই স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগ্লানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদেরি কুঁড়েঘরে।’
বাংলার সেই আবহমান বেহেশতি পরিবেশকে আওয়ামী শাসকরা দোজখে পরিণত করেছে। মনে পরে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির শাহসী উক্তি ‘আপনারা তো দেশটাকে জাহান্নামে পরিণত করেছেন’। সেই জাহান্নাম থেকে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলন মানুষকে রক্ষা করেছে। শত কষ্টের মধ্যেও সুখ শান্তির স্বপ্ন দেখছে তারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। গঠিত হয়েছে নানাবিধ কমিটি ও কমিশন। জাতীয় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য হলেন তোফায়েল আহমেদ। আবার তিনিই স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনেরও প্রধান। স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংস্কারব্যবস্থা সম্পর্কে তার বিশেষ জ্ঞান, গবেষণা ও অভিজ্ঞতা থাকার ফলে তিনি এই দায়িত্ব লাভ করেছেন।
জনাব তোফায়েল এবং কমিশন স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সম্পর্কে নানা সংস্কার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছেন। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিক, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। কমিশন ও প্রদত্ত মতামত থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, তারা গ্রাম-বাংলার সেই হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করছেন। গ্রাম-বাংলার মানুষেরা ‘আমগাছ জামগাছ বাঁশঝাড় যেন মিলেমিশে আছে ওরা আত্মীয় হেন’। সেই পরিবেশ ও সেই আত্মীয়তা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তোফায়েল কমিশন। কিন্তু কাজটি বাংলাদেশের জটিল ও কুটিল জনমনস্তত্ত্বের মতোই কঠিন। কোনো বিষয় ঐকমত্য অর্জন করা প্রায় অসম্ভব বিষয়। যাযাবরের দৃষ্টিতে এ অঞ্চলের লোকেরা দ্বন্দ্বমুখর। অন্যান্য জাতির গুণাগুণ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শেষে তিনি বলেছেন দলাদলি বাঙালি জাতির বৈশিষ্ট্য।
এখনো দেখা যায় তিনজন একত্র হলে দুই দল হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ আমাদের যেমন উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিয়েছিল, তেমনি দলাদলির পাক পংকে নিমজ্জিত করেছিল। এর বড় প্রমাণ হলো দীর্ঘকাল থেকে চলে আসা গ্রামীণ সরকারব্যবস্থা তথা স্থানীয় সরকারব্যবস্থার দলীয়করণ। ২০১১ সালে ঘোষিত এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। এর ফলে শহরের দলীয় কর্তৃত্ব গ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। এতদিন ধরে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হতো, তা নিরঙ্কুশভাবে দলীয় প্রভাবমুক্ত ছিল না। সেখানে গ্রামীণ নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা হতো। দলীয় পরিচয়টি মুখ্য হয়ে দেখা দিতো না। ব্যক্তির পরিচয়, গোষ্ঠী ও এলাকাকেন্দ্রিকতা লাভ করত। আওয়ামী লীগ যেমন কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এক দল এক দেশ নীতি অনুসরণ করছিল, এবার তারা গ্রামেও একদল, এক মত ও এক নেতা চাপিয়ে দিয়েছিল। গ্রামে নির্বাচনের সময় সেøাগান উত্থিত হয়েছে ‘চেয়ারম্যান ওপেনে মেম্বার গোপনে’।
স্থানীয় সরকার সম্পর্কে গতানুগতিক বর্ণনা এরকম বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা একটি বহুমুখী এবং বহুতলীয় কাঠামো যা বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক ইউনিট দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি স্থানীয় জনগণের সেবা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে নির্ধারিত একটি সিস্টেম। স্থানীয় শাসনব্যবস্থার মূল কাঠামোতে রয়েছে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় স্তর, যা জনগণের মধ্যে সরকারের কার্যক্রম পৌঁছানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হয়ে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে জনপ্রতিনিধিত্ব বা কার্যকর স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরে আরো সর্বনাশ এই ভালোমন্দ নির্বাচনব্যবস্থাটিও নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এ সম্পর্কে তোফায়েল আহমেদের মন্তব্য নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার আমাদের মনোজগৎ থেকে ‘নির্বাসনে’ চলে যায়। পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন এলে একই ‘হইচই’ বৃত্তাকারে ফিরে আসে।
এ কয় বছর নির্বাচিত পরিষদ চেয়ারম্যান বা মেয়রদের এক ধরনের তালুক বা জমিদারির মতো চলে। দেশে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন আইনে পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন কাঠামো, সাংগঠনিক কাঠামো, কর্মপদ্ধতি, কর্মচারী কাঠামো, অর্থায়ন, আন্তঃপ্রতিষ্ঠান সম্পর্ক এরকম অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু কোনো সংস্কার বা প্রতিকার নেই; বরং রয়েছে এক ধরনের সর্বগ্রাসী উদাসীনতা। নবগঠিত কমিশন স্থানীয় সরকারব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে চায়। এ লক্ষ্যে নানা ধরনের প্রক্রিয়া, নীতিগত ও আইনগত সংস্কার প্রস্তাবনা রয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে ভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা ও প্রস্তাবনার অবকাশ রয়েছে। আজকে এই মুহূর্তের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে গত ৮ ডিসেম্বর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাথে বৈঠকে জনপ্রতিনিধিদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে বক্তব্য প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, এসব প্রতিনিধি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার প্রস্তাব দিয়েছেন। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ২০ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনব্যবস্থা কমিশনে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, মতবিনিময়ে প্রায় সবাই বলেছেন, স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হওয়া উচিত। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা এবং এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছয় মাস করা, জেলা প্রশাসকদের বদলে নির্বাচন কমিশনে নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার প্রস্তাব এসেছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। এ ছাড়া মতবিনিময় করে তারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সংসদ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা এবং স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছেন। মতবিনিময়কালে প্রতিনিধিদের প্রায় সবাই স্থানীয় সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন।
এসব নীতিগত প্রস্তাবনার বাইরে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, তা হচ্ছেÑ জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। এর আগে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে মত দিয়েছে নাগরিক সমাজ। তিনি বলেন, ‘আমরা যে মতবিনিময় করেছি সেখানে নাগরিক সমাজের অভিমত হচ্ছেÑ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত।’ তবে সংস্কারের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেতে নারাজ জনাব তোফায়েল। তিনি মনে করেন, ‘এখন সংস্কারের আগে যদি নির্বাচনে যাই, তাহলে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা ঝুলে যাবে।’ স্থানীয় সরকার কাঠামো সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন যে কাঠামো রয়েছে তা কোনোভাবেই সিস্টেম নয়। আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান, আলাদা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। কোনো কম্প্র্রিহেনসিভ সিস্টেম নেই। এই সংস্কারের বড় কাজ হবে একটি সিস্টেম ডেভেলপ করে দেয়া। এই সিস্টেম করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কে তোফায়েল আহমেদ মোক্ষম সময় মনে করেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, একটি কম্প্রিহেনসিভ আইন হবে। সেই আইনের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠান চলে আসবে। একটি তফসিল নিয়ে সবগুলো নির্বাচন করা যাবে। স্থানীয় সরকারের বারবার নির্বাচন করার ব্যবস্থার তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি তথ্য দেন, গত নির্বাচন কমিশন যে স্থানীয় নির্বাচন করেছে এতে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯-২০ লাখ লোক লেগেছে। ২২৫ দিনের মতো সময় লেগেছে। তাই স্থানীয় নির্বাচন যদি পার্লামেন্টারি সিস্টেমে নিয়ে আসি এবং ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন যদি একই সিস্টেমে করতে পারি, তাহলে খরচ আসবে ৬০০ কোটি টাকার মতো। লোক লাগবে আট লাখ। সময় লাগবে ৪৫ দিন। এই সিস্টেমে যাওয়ার জন্য যদি একটি অধ্যাদেশ জারি করা যায়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব।
এখন যে ব্যবস্থা আছে তাতে পাঁচটি আইন দিয়ে পাঁচটি নির্বাচন করতে হবে। জনাব তোফায়েল স্থানীয় সরকার বিষয়ে এমপিদের তদারকি এবং তহবিল তছরুপের তীব্র সমালোচনা করেন। গত সংস্কার কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যে শেষ স্থানীয় নির্বাচন করেছে তাতে ২৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অর্থহীনভাবে ১৯-২০ লাখ লোকের এরেজমেন্ট হয়েছে। একটি শিডিউল করতে গিয়ে প্রায় ২২৫ দিন সময় লেগেছে। তিনি অভিমত দেন, লোকাল গভর্নমেন্ট পার্লামেন্টারি সিস্টেমে এলে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন একই শিডিউলে করতে পারলে খরচ চলে আসবে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে। লোক লাগবে মাত্র আট লাখ। সময় লাগবে মাত্র ৪৫ দিন।
এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব কি না! বর্তমান বিধিব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করতে গেলে পাঁচটি শিডিউলে পাঁচটি নির্বাচন করতে হবে। সঙ্গতভাবেই যা সম্ভব নয়। তবে এখনই যদি একটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংস্কার সাধনপূর্বক স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেয়া হয় তা বর্তমান অস্থিরতা দূরীকরণ, স্থিতিশীলতা অর্জন ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বিধানে অবদান রাখবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচন আগে করতে পারলে সরকারের সক্ষমতা বাড়বে। নির্বাচন কমিশনের টেস্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে স্থানীয় সাপোর্ট দরকার তা নিশ্চিত হবে।
যেকোনো রাজনৈতিক সরকার যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করে তাহলে সেই রাজনৈতিক দলের প্রভাব-প্রতিপত্তি স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। আওয়ামী লীগ যেভাবে স্থানীয় নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছে এবং নির্বাচনকে শত্রুতায় পরিণত করেছে তার প্রভাব সমাজ থেকে দূরীভূত হতে সময় লাগবে। বাংলাদেশে যদি কেউ গণতন্ত্রের সত্যিকার নির্মাণ চায়, সমঝোতা ও জাতীয় সংহতি নির্মাণ চায় তাহলে অতি অবশ্যই স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে হবে।
জাতীয় সরকার নির্বাচন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ন্যস্ত করার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐকমত্য পরিলক্ষিত হয়েছে। সর্বোচ্চ কোর্টের আদেশ যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুকূলে আসে তাহলে গোটা জাতি নির্বাচনব্যবস্থার স্থায়ী সংস্কারের লক্ষ্যে বড় একটি ধাপ অতিক্রম করবে। সেই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংস্কার সাধনপূর্বক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ন্যস্ত হলে গ্রামগঞ্জের শান্তির নীড়ে আওয়ামী আয়োজিত ঝগড়া ফ্যাসাদের অবসান ঘটবে। গ্রাম-বাংলা আগের মতো না হলেও অধিকতর শান্তি, শৃঙ্খলা ও সহমর্মিতার পথে এগিয়ে যাবে।
সুতরাং জাতীয় নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সবারই জানা কথা, এই সময়ে বিপ্লব-পরবর্তী পর্যায়ে স্থানীয় সরকার কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এসব পর্যায় ও প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ না করে, সরাসরি স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে পারলে গোটা জাতি সত্যিকার গণতন্ত্রের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
লেখক : অধ্যাপক (অব:), সরকার ও রাজনীতি বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]