জাতীয় মাছ ইলিশের কেচ্ছা, গবেষণায় যা জানা গেল


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ১৪, ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ণ /
জাতীয় মাছ ইলিশের কেচ্ছা, গবেষণায় যা জানা গেল

শেখ নাজমুল ইসলামঃ

গত ১৫ এপ্রিল হইতে ১১ই জুন ২০২৫ পর্যান্ত একযোগে ৫৮ দিন ইলিশ ধরা এবং বিক্রয় করা সরকারী নির্দেশ ক্রমে বন্ধ ছিলো ৷ ১২ জুন ২০২৫ থেকে উপকুলীয় অন্চলের মৎসজীবিরা জাল নৌকা নিয়ে রুপালী ইলিশ ধরার জন্য সাগরে পাড়ি জমিয়েছেন ৷ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬লক্ষ মেট্রিক টন ইলিশ আহোরন করে থাকে বাংলাদেশের জেলেরা , যার বাজার মুল্য প্রায় ১২০০০ কোটি টাকা ৷ এবং বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে আরোহিত হয়ে থাকে ৷

ইলিশ ক্নপিডি (Clupeidac) পরিবারের অন্তভূক্ত একটি সামুদ্রিক চর্বিযুক্ত মাছ ৷ ইলিশের বৈজ্ঞানিক নাম ,(Tenualosa) টেনুলোসা ৷ ইংরাজীতে বলে Hilsha fish . প্রায় ৫ হাজার বছর আগে থেকে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ইলিশ খাওয়ার প্রমান পাওয়া যায় ৷ সিন্ধু সভ্যতার খনন কাজে পাওয়া প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনে ইলিশ মাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ৷ এর থেকে প্রমানিত হয় প্রাচীন কাল থেকে এই অন্চলের মানুষ ইলিশ খেয়ে আসছে ৷

১৭৮৬ সালে ব্রিটিশ চিকিৎসক ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিলটন প্রথম ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানীক বর্ণনা দেন ৷ এবং তিনি এর বৈজ্ঞানিক নাম দেন টেনুলোসা (Tenualosa) . ১৮ শতকে কোলকাতা ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরে ইলিশ ব্যাবসায়িক প্রসার লাভ করে ৷ তখন থেকে মাছটি উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের প্রিয় আমিষের তালিকায় স্হান করে নেয় ৷ রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, বস্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় প্রমুখ সাহিত্যিকদের লেখনিতে ইলিশ মাছের উল্লেখ পাওয়া যায় ৷

একটি পুর্ণ বয়স্ক ইলিশ একবারে প্রায় ১থেকে ২মিলিয়ন ডিম দিয়ে থাকে ৷ডিম থেকে পোনা বের হওয়ার পরে পোন কিছু দিন মিঠা পানিতে থাকে ৷ এ সময় এদের ঝাটকা বলা হয় ৷ ১০ থেকে ১৫ সে:মি: হওয়ার পরে এরা নদী থেকে সমুদ্রের দিকে যাত্রা করে ৷

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও চীনের সাংহাই ওশান ইউনিভার্সিটি ডিপার্টমেন্ট অব হাইড্রো-বায়োলজির একদল গবেষক যৌথভাবে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ সম্পর্কিত তিনটি গবেষণা সম্পাদন করেছেন। গবেষণা তিনটি হলো- ইলিশের সেক্স রিভার্সাল, কমপ্লিট জিনোম এবং পপুলেশন জিনোমিক্স। এই গবেষণার ফল উপস্থাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা এবং বঙ্গোপসাগরের ছয়টি অঞ্চল থেকে বিভিন্ন আকার ও বয়সের মোট ২০৩টি ইলিশ মাছ সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত সাতটি ইলিশের জনন টিস্যুতে একসাথে শুক্রাণু ডিম্বাণুর সহাবস্থান দেখা যায় যা লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রমাণ বহন করে।

গবেষণার সামগ্রিক ফলাফল থেকে অনুমান করা যায়, ইলিশ মাছ জীবনের প্রথম বছর পুরুষ হিসেবে প্রজনন সম্পন্ন করে খাদ্যের সন্ধানে সমুদ্রে অবগাহন করে। সেখানে অবস্থানকালে উক্ত ইলিশ ধীরে ধীরে স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয় এবং দ্বিতীয় বছর প্রজননের উদ্দেশ্যে পুনরায় নদীতে ফিরে আসে। এ গবেষণা ইলিশের পূর্ণাঙ্গ জীবনচক্র, প্রজনন কৌশল এবং লিঙ্গ পরিবর্তনের রহস্য উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করেন বিজ্ঞানীরা।

ইলিশ ভোজন রশিকদের পছন্দের তালিকায় শীর্শে থাকলে ও উচ্চ মুল্যের কারণে বছরে হয়তো দুই এক বারের বেশী মধ্যবিত্ত , নিম্ম মধ্যবিত্তের পাতে উঠে না ৷ আর নিম্ম আয়ের মানুষের কাছে স্বপ্লের মতো ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায় ৷ লোভনীয় এই রুপালী ইলিশের দাম বাড়ার কারন গুলীর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কিছু কারন হলো , চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, প্রতি বছর উল্লেখ যোগ্য পরিমান ভারত সহ অন্যান্য দেশে রপ্তানী হওয়া , জ্বালানী তেলের মুল্য ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি চড়া সূদে দাদন প্রথা এবং সর্বপরি মাহাজনদের সিন্ডিকে ৷ প্রতিদিন ঐ সিন্ডিকেটের সিন্ধান্ত অনুযায়ী সকালে পাইকারী আড়ৎে ইলিশের দাম নির্ধারন হয়ে থাকে ৷

আষাঢ়-শ্রাবণ ইলিশের ভরা মৌসুম ৷ মৌসুম আসার আগে যথাযত কতৃপক্ষের নজর দারির মাধ্যমে কিছুটা হলে ও ইলিশের দাম কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল ৷