জুলাই সনদে এক শতাংশ ছাড় দেবো না বললেন নাহিদ ইসলাম


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ১২, ২০২৫, ১১:০১ অপরাহ্ণ /
জুলাই সনদে এক শতাংশ ছাড় দেবো না বললেন নাহিদ ইসলাম

ফাইল ছবি

জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিলেও জুলাই সনদে এক শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে, এই অভ্যুত্থানের প্রজন্মকে প্রতারিত করতে সকল ধরনের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সমীকরণ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। ফলে যারা এখনই মিলিয়ে ফেলেছে, তারা ভুল পথে হাটছে। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি, তারুণ্যের শক্তি এখনও রাজপথে আছে। গত এক বছর ছাড় দিয়েছি। জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি। জুলাই সনদে কোনো ছাড় হবে না। এক পার্সেন্ট (শতাংশ) ছাড়ও জুলাই সনদে দেওয়া হবে না।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ‘জাতীয় যুব সম্মেলনে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এনসিপির যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’ এর আয়োজন করে।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, যেই মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা জনগণের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, যেই নতুন বন্দোবস্তের কথা আমরা বলেছি, যেখানে গণতন্ত্র নিশ্চিত হবে, স্বৈরাচার আর ফিরে আসতে পারবে না, রাষ্ট্র কাঠামোকে গণতান্ত্রিক হিসেবে গড়ে তুলবো, সেই জুলাই সনদে আমরা এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেবো না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়েছে। আমরা হিসাব–নিকাশ করছি যে, এই এক বছরে আমরা কী পেলাম, দেশ কতটুকু পরিবর্তন হলো। এই হিসাব না করলে আমরা বুঝবো না আমাদের আগামীর দায়িত্ব কী। গণঅভ্যুত্থানের এক বছরের আমাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। যেই নতুন বন্দোবস্তের জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম, জীবন দিয়েছিলাম, সেই নতুন বন্দোবস্ত, নতুন বাংলাদেশ আমরা পাইনি। ফলে আমাদের গণঅভ্যুত্থান সমাপ্ত হয়নি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাকশাল কায়েম হয়েছিল। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা রক্ষা করা হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্যই আমাদের লড়াই ছিল। কিন্তু আমরা এও বলেছি যে, পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশকে যেতে হবে। এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সংকট হলো স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। যদি রাজনৈতিক শক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে না পারে, দেশের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে নিজেদের মধ্যে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা তৈরি না হয়, তাহলে আরেকটা এক–এগারো আসবে।

রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক দলগুলোকে বসেই করতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দলগুলো ব্যর্থ হলে লাভবান হবে ডিজিএফআই, লাভবান হবে অরাজনৈতিক শক্তি, লাভবান হবে বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি। গণঅভ্যুত্থানের পরে গত এক বছর ধরে এদেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে এনসিপি বারবার ছাড় দিয়েছে। কিন্তু ছাড় দিতে দিতে আমরা শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। আমরা এবার ছাড় দেবো না। আমরা এবার আদায় করে নেবো। গণঅভ্যুত্থানের পরে যে নতুন বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকার যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই প্রতিশ্রুতি আদায় না করে এই সরকার যেতে পারবে না। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

এ সময় তিনি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে এই প্রতিশ্রুতি পূরণে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা চাঁদাবাজ–সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলছি। চাঁদাবাজির সংস্কৃতি কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য ভালো না। প্রত্যেকটি দলকে সেই পরিশুদ্ধির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যারা সুবিধা নেওয়ার জন্য এনসিপিতে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ও সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও নাহিদা সারওয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা শেষে যুবশক্তির পক্ষ থেকে ‘যুব ইশতেহার’ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া নতুন বাংলাদেশের শপথ নেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।