জেলার বেনাপোল সীমান্তে ১৫ বছরে ৭৯ টি ধর্ষন সহ ৪ জনকে হত্যা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ৫, ২০২৫, ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ /
জেলার বেনাপোল সীমান্তে ১৫ বছরে ৭৯ টি ধর্ষন সহ ৪ জনকে হত্যা

বেনাপোল প্রতিনিধি: বিচারহীনতার কারনে গত ১৫ বছরে যশোরের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা শার্শা উপজেলাতে ৭৯ জন নারী,শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে। এসময় ঘটনা আড়াল করতে ধর্ষন ও বলতকারের শিকার ৪ জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। ৭৯ টি ধর্ষন মামলায় অন্তত্য আসামী হয়েছেন শতাধিক

তবে সাক্ষীর অভাব আর দূর্বল তদন্ত রিপোর্টে প্রায় সব আসামী জামিনে খালাস পেয়েছেন। এতে বিচার ব্যবস্থার দূর্বলতাকে দায়ী করে নতুন করে ন্যায় বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। তবে পুলিশ বলছে নারী নির্যাতনের সব রোধে তারা সতর্ক রয়েছেন। আর মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের মত ঘটনা।

পুলিশ তথ্য বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শার্শা উপজেলায় ৭৯ টি ধর্ষন মামলার মধ্যে,

শার্শা উপজেলাধীন শার্শা থানায় ৪৮ টি ও এ উপজেলার অন্তগত বেনাপোল পোর্ট থানায় ৩১ টি মামলা দায়ের হয়।
ধর্ষনের পর হত্যাকান্ডের এসব ঘটনার মধ্যে আলোচিত ছিল, ২০১০ সালে বেনাপোলের গয়ড়া গ্রামের চৌকিদার নবিচ্ছদির মেয়ে কাজল রেখা ধর্ষনের পর হত্যা। অভিযোগ ওঠে সম্পতির বিরোধ নিয়ে রেশারেশিতে প্রতিবেশি শওকত মেম্বারের ছেলে যুবলীগ নেতা অহিদুল ইসলাম ওহিদ ও তার সহযোগী মিয়াদ আলী,নেদা কাজল রেখাকে গণধর্ষন করে। পরে ঘটনা ধামা চাপা দিতে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে মরদেহ মাঠে ফেলে দেয়। ন্যায় বিচার পেতে কাজল রেখার পিতা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তবে কয়েকদিন বাদেই ধর্ষনকারীদের জীবন নাশের হুমকিতে অসহায় বাবাকে মামলা তুলে নিতে হয়। মেয়ে হারানোর শোকে ঘটনার পর থেকে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে বাবা,মা। এখন বিচার চান অন্তবর্তীকালিন সরকারের কাছে।

কাজল রেখার বাবা নবিচ্ছদি জানান, মেয়ে ধর্ষন ও হত্যার বিচার পায়নি। মামলা করলেও প্রভাবশালীদের চাপে মামলা তুলে নিতে হয়েছিল। বর্তমান সরকারের কাছে মেয়ে হত্যা ও ধর্ষনের বিচার চাই।

কাজল রেখার প্রতিবেশিরা জানান, ওহিদুল ও তার সহযোগীরা ছিল দস্যু প্রকৃতির। প্রভাবশালীদের হয়ে অসহায় মানুষদের সম্পদ দখল করে দেওয়া তাদের কাজ ছিল। কেউ তাদের কাজে বাঁধা প্রদান করলে লুটপাট, ধর্ষনও হত্যার মত ঘটনা ঘটাতে পিছু হটতো না।

এছাড়া ২০১৪ সালের ২৭ মে উপজেলার বসতপুর গ্রামের চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী সেলিনা খাতুনকে প্রতিবেশি জাকিরও তার চার বন্ধু গণ ধর্ষনের পর গলা কেটে হত্যা করে। পরে লাশ বস্তায় ভরে খালে ফেলে দেয়।এঘটনায় আসামীরা গ্রেফতার হলেও কয়েক মাসের মাথায় তারা জামিনে ফিরে আসে।

২০১৯ সালের ১২ জুন বেনাপোলের কাগজপুকুর গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে শাহপরানকে বলৎকার করে মাদ্রাসা শিক্ষা হাফিজুর রহমান। পরে তাকে হত্যা করে শাহপরানকে৷ এঘটনায় তখন সে গ্রেফতার হলেও ফিরেছে জামিনে। একদিকে স্বজন হারানো ব্যাথা অন্যদিকে এসব অপরাধীরা ফিরে এসে চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো আরো ব্যথিত করছে স্বজনদের।

শাহপরানের বাবা জানান, বাবা, মার স্বপ্ন পুরনের আগেই লালশার শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে সন্তানকে । টাকা দিতে পারেনি বলে বিচার পক্ষে আসেনি।
আর ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই শার্শার স্বরূপদাহ গ্রামের কোরবান আলীর মেয়ে মাদ্রাসা ছাত্রী আর্জিনা খাতুনকে ধর্ষনের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছিল।

মানবাধীকার সংস্থা রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষনো মন্ডোল জানান, বিচারহীনতার কারনে দেশে হত্যা,ধর্ষনের মত ঘটনা বেড়ে চলেছে। তিনি বলেন, প্রভাবশারীদের হস্তক্ষেপের কারনে ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। এ অবস্থার অবসান হলে অপরাধ কর্মকান্ড সমাজে কুমবে।

শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহীর জানান, বিগত সরকারের আমলে বিএনপি পরিবারসহ সাধারন মানুষ যারা হত্যা ও ধর্ষনসহ বিভিন্ন ভাবে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন তাদের আইনী সহয়তা দিতে সব সময় পাশে থাকবে তার দল।।

যশোর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুরে আলম সিদ্দীকি জানান, ভুক্তভোগী পরিবার যে কোন সময় আইনী সহয়তা নিতে পারে। মালরার পর পুলিশ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেতবে ধর্ষনের মত ঘটনা এড়াতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতন মুলক কাজও করে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা।