বন্যা ও ঝড়–বৃষ্টির মধ্যে প্রসবব্যথা ওঠায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মল্লিকপুর এলাকা থেকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে নৌকায় করে হাসপাতালে রওনা দেন সুমন মিয়া (৩৫)। পথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে নৌকাটি আটকে যায়। এরপর জেলা প্রশাসকের সহায়তা পেয়ে তাঁর কার্যালয়ে ফুটফুটে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন সুমন মিয়ার স্ত্রী জমিলা বেগম (২৭)।
গত শনিবার সন্ধ্যার এ ঘটনায় ওই দিন রাতে মা ও নবজাতকে দেখতে যান জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কল করলে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তাঁকে জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগে জন্ম নেওয়া এ শিশুর নাম রাখেন নূহ আলম প্লাবন।
আজ সোমবার জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, নবজাতক প্লাবনকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নতুন পোশাক, মশারি, তেল, লোশনসহ উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। মা ও নবজাতক বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভালো আছে।
সুমন মিয়া–জমিলা বেগম দম্পতির থাকেন জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে। সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুর এলাকায় জমিলার বাবার বাড়ি। সন্তান জন্মদানের জন্য জগন্নাথপুর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে সুনামগঞ্জে এসেছিলেন সুমন মিয়া। তিনি ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাসের চালক। এই দম্পতির তাহসিন মিয়া নামের আরেক ছেলেসন্তান রয়েছে।
আজ দুপুরে হাসপাতালের পাঁচতলায় শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় সুমন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্লাবনের জন্ম হয়েছে শনিবার সন্ধ্যায়। তাঁরা তখন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
রাতে জেলা প্রশাসক আবার তাঁকে দেখতে যান। তখন প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মুঠোফোনে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানান জেলা প্রশাসক। সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছেলের নাম রাখেন নূহ আলম প্লাবন।
নবজাতকের কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় গতকাল রোববার দুপুরে তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জানিয়ে সুমন মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসক ওই দিন হাসপাতালে প্লাবনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী নিয়ে আসেন। তিনি নিজেও তাঁদের ১০ হাজার টাকা উপহার দিয়েছেন।
শনিবারের ঘটনা তুলতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। তিনি বলেন, ‘ডিসি সাব যা করছেন, তা আমরা জীবনে ভুলব না। যে পরিস্থিতি আছিল, তাতে বাঁচতামই না। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নাম নিয়ে বড় হবে—এটা আমার জন্য বড় আনন্দের।’
কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন সুমন মিয়া। বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। নিজের কোনো ভিটা পর্যন্ত নাই। অন্যের বাড়িতে থাকি। আমার মতো গরিব মানুষ যে সহযোগিতা পাইছি, তা সারা জীবন মনে থাকব। প্রধানমন্ত্রী নিজে আমার ছেলের না রাখছেন, কত উপহার দিছেন—এরচে আর সৌভাগ্য কী হতে পারে।’