সম্প্রতি বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়মে কিছু পরিবর্তন এনেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। বহু বছরে এই প্রথম বাণিজ্য নিয়মে কোনো পরিবর্তন আনল সংস্থাটি। পাশাপাশি কভিডের টিকা সরবরাহ বাড়াতে একটি চুক্তিও করেছে ডব্লিউটিও। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি শতাধিক বাণিজ্যমন্ত্রী নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে ডব্লিউটিও। সম্মেলনের ষষ্ঠ দিনে এ চুক্তিগুলো করা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে ভূরাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বজায় রাখতে এ সম্মেলনকে একটি পরীক্ষাস্বরূপ দেখছেন বিশ্লেষকরা। এরই মধ্যে সাতটি বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছেছেন প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়েলা বলেন, আপনাদের এ চুক্তির ফলে বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসবে। এতে প্রমাণিত হলো, যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম। চুক্তিগুলোর প্যাকেজটিকে অভূতপূর্ব বলে সম্বোধন করেছেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধান কর্মকর্তা।
এর মধ্যে রয়েছে, মাছ চাষ বিষয়ে শর্তাধীন চুক্তি এবং কভিডের টিকা আবিষ্কারের জন্য মেধাস্বত্ব আংশিক মওকুফ করা। এছাড়া মাছ ধরায় ভর্তুকি রোধের বিষয়েও চুক্তিতে পৌঁছেছেন উপস্থিত প্রতিনিধিরা। এতে করে গত ২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় নতুন কয়েকটি বাণিজ্য বিষয়ক নিয়ম প্রবর্তিত হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয় উপস্থিত সব প্রতিনিধির সম্মতিতে। প্রত্যেক সদস্যেরই ছিল ভেটো দেয়ার অধিকার। এ বিষয়ে এনগোজি ওকোনজো-আইওয়েলা বলেন, এটি কোনো সহজ প্রক্রিয়া ছিল না। অনেক ধরনের বাধা ছিল, যা আমি আগেই অনুমান করেছিলাম। একটা রোলার কোস্টারের মতো ছিল, তবে শেষে আমরা একমত হয়ে চুক্তিতে পৌঁছতে পেরেছি।
এদিকে মাছ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার জন্য ভর্তুকি রোধ করার বিষয়েও চুক্তি হয়। এ বিষয়ে দ্য পিউ চ্যারিটিবল ট্রাস্টসের ব্যবস্থাপক ইজাবেল জ্যারেট জানান, অতিরিক্ত মাছ ধরা রোধে একটি সন্ধিক্ষণ ছিল এ চুক্তি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, ২১ বছর ধরে এ বিষয়ে আলোচনা চলেছে।
এদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় কভিডের টিকা তৈরি ও রফতানি করতে মেধাস্বত্ব আংশিক মওকুফের চুক্তিটি দুই বছর ধরে বিবেচনাধীন ছিল। অবশেষে এ প্রস্তাব বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে পাস করা হয়। তবে এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন দল। অনুষ্ঠিত সম্মেলনের আরো একটি চুক্তি ছিল ই-কমার্সে শুল্ক স্থগিতের বিষয়টি।
বিশ্বজুড়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহের জন্য ই-কমার্সে শুল্ক স্থগিতের বিষয়ে অনেক দিন ধরেই জোর দাবি করে আসছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ চুক্তিগুলোর মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বাড়বে। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, বাণিজ্যিক বিবাদ মেটাতে কোনো ভূমিকা নেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার।
এতে করে সমালোচনার শিকার হয় সংস্থাটি। তবে সম্প্রতি নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপস্থিতি সরব হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার ভালিদিস ডমরোভসকিস বলেন, বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন থেকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গিয়েছে। এছাড়া সংস্থাটির জরুরি পুনর্গঠন আবশ্যক বলে জানান তিনি।
রয়টার্স।