ডম্বুর বাঁধে ঠিক কী হয়েছে? হঠাৎ ভারতীয় পানিতে বাংলাদেশে বন্যা!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ২৩, ২০২৪, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ /
ডম্বুর বাঁধে ঠিক কী হয়েছে? হঠাৎ ভারতীয় পানিতে বাংলাদেশে বন্যা!

     – ছবি : বিবিসি

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় গোমতী জেলায় অবস্থিত গোমতী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডম্বুর স্লুইস গেট খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে। গোমতী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো গেট খুলে দেয়া হয়নি- ভারতের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও ফারাক্কা ব্যারেজে নদীর জলস্তর বুধবার থেকে কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে বলে ব্যারেজের সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরায় গত তিন দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সেখানকার সরকার। রাজ্যের এক মন্ত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন আগস্ট মাসে যা বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা স্বাভাবিকের থেকে ১৫১ শতাংশ বেশি।

এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন সাতজন। প্রায় ১৭ লাখ মানুষ সেখানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে রাজ্য সরকার।

ডম্বুর বাঁধে কী হয়েছে? এই বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেসব জেলা, তার মধ্যে আছে গোমতী। গোমতী জেলাতেই গোমতী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডম্বুর স্লুইস গেট খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের অধীন ওই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পটি। তবে ভারতের মন্ত্রী রতন লাল নাথ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যে প্রচারটা করা হচ্ছে ডম্বুর গেট খুলে দেয়া নিয়ে, সেটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু না।’

তিনি বলেন, গোমতী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোনো গেট খুলে দেয়া হয়নি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানিধারটির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৯৪ মিটার। পানিস্তর এর বেশি উঠলেই নিজের থেকেই পানি গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবে। পানিস্তর আবার নিচে নেমে গেলে নিজের থেকেই গেট বন্ধ হয়ে যাবে। পানিস্তর সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে যেতেই পানিধারের দুটি গেট দিয়ে পানি বেরোচ্ছে। এর মধ্যে একটি গেট দিয়ে ৫০ শতাংশ হারে পানি বেরোচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে আগে থেকেই মাইকিং করে সতর্ক থাকার অনুরোধও জানানো হয়েছিল। তিনি আরো বলছিলেন যে গত তিন দশকে এরকম বন্যা হয়নি ত্রিপুরায়।

ভারতীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা ও মিজোরামের কিছু এলাকায় অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে এবং ফ্ল্যাশ ফ্লাডেরও সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরপূর্ব ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে।

তিস্তা-ফারাক্কাঃ সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীতেও পানিস্তর বিপজ্জনক বলে বাংলাদেশের নানা সংবাদমাধ্যমে জানানো হচ্ছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় নদী বিশেষজ্ঞ এবং ওই অঞ্চলে পরিবেশ সংরক্ষণের সাথে যুক্ত রাজ বসু বলছেন যে সিকিমে দু’দিন আগে একটি বড়সড় ভূমিধসের ঘটনা হয়েছে, তবে নদী অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে না।

তার কথায়, কোনো দিন বৃষ্টি হচ্ছে, আবার কোনো দিন রোদ উঠছে। ফলে ভূমিধসের সম্ভাবনা বেড়েছে। কিন্তু এখনো কোনো বিপদ সঙ্কেত দেখানো হয়নি নদী অববাহিকা অথবা গজলডোবা ব্যারাজে।

রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের সূত্রে বলা হয়েছে যে গজলডোবা এবং কালীঝোড়া-তিস্তার ওপরে এই দুটি বাঁধে পানিস্তর স্বাভাবিক রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গজলডোবা দিয়ে ১০৪৫.৯২ কিউমেক পানি ছাড়া হয়েছে এবং কালীঝোড়া বাঁধ থেকে একই সময়ে ১০২৭ কিউমেক জল ছাড়া হয়েছে বলে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে রাজ বসু বলছিলেন তিস্তার সমস্যাটা অনেক দীর্ঘমেয়াদী।

তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসে গ্লেশিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাডের ফলে যে বিপুল পরিমাণ পাথর, মাটি, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি-গাড়ি বা অন্যান্য স্থাপনা তিস্তা দিয়ে নেমে এসেছে, সেগুলো নদীবক্ষেই জমে আছে। এর ফলে নদীবক্ষের গভীরতা কমে গেছে। কিছুটা বেশি বৃষ্টি হলেই নদীর পাড় ছাপিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে সেই অবস্থাটা নেই। এই সমস্যার সমাধান একদিনে হবে না, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। সেরকম কোনো উদ্যোগ না কেন্দ্রীয় সরকারের দেখছি, না দুটি রাজ্য সরকার সিকিম আর পশ্চিমবঙ্গের তরফে দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে ফারাক্কা ব্যারেজে নদীর পানিস্তর বুধবার থেকে কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানে কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে বলে ব্যারেজের সূত্রগুলো জানিয়েছে। কিন্তু ঠিক কতটা পানিস্তর বেড়েছে বা কটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারের ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সাথে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

সূত্র : বিবিসি