ডিসমিসল্যাবের গবেষণা প্রতিবেদনঃ আওয়ামীলীগের ভুল তথ্যের কারখানা সোশ্যাল মিডিয়া!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ /
ডিসমিসল্যাবের গবেষণা প্রতিবেদনঃ আওয়ামীলীগের ভুল তথ্যের কারখানা সোশ্যাল মিডিয়া!

হাসিনা রেজিমে দেশের গণমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগই তাবেদারী করায় জনপ্রিয় হয়ে উঠে সোশ্যাল মিডিয়া। আর এই জনপ্রিয়তার সুযোগে সোশ্যাল মিডিয়ার ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার যেন গুজন ছড়ানোর কারখানায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মিথ্যা তথ্যে ভরে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেইক নিউজ ভাইরাল হচ্ছে দ্রুত। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ভুল তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

দেশে সংসদ নির্বাচন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, রাজনৈতিক উত্তেজনাসহ চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গত বছর ভুল তথ্য, অপতথ্য ছড়িয়েছে বেশি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে এসব তথ্য বেশি ছড়িয়েছে। হাসিনার অনুসারী কিছু ব্যাক্তি গুজব ছড়াচ্ছে বাধাহীন ভাবেই। তথ্য ব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তারা ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ছড়ানো ভুল তথ্যের প্রবণতা ও বয়ান নিয়ে সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, তাদের ডেটাবেজের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে কাজ করা আটটি তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ২০২৪ সালে ৪ হাজার ৫০০ এর বেশি ভুয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে ভাইরাল ৩ হাজারের বেশি একক ভুল তথ্য যাচাইয়ের প্রতিবেদনকে চিহ্নিত করেছে ডিসমিসল্যাব, যা এর আগের বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে ৫৮ শতাংশ বেশি ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই ছিল রাজনৈতিক। কারণ, ২০২৪ সালে ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেষ দিকে এসে ধর্মীয় উত্তেজনার মতো বিষয়। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিএনপিকে নিয়েও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

২০২৩ সালের মতো ২০২৪ সালেও ভিডিওর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ৩৯ শতাংশ ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এরপরে ছবি ছিল ২৮ শতাংশ ও গ্রাফিক কার্ড ১৪ শতাংশ। গত বছর কী পরিমাণে ভুল বা অপতথ্য ছড়িয়েছিল, তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা কঠিন জানিয়ে ডিসমিসল্যাব বলেছে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কিছু তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়েছে।

গত বছর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ায় জুলাইয়ে শেষ দিক থেকে ও আগস্ট মাসে। সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলে, যা পরবর্তী সময়ে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এ ছাড়া আগস্টে বন্যা হয়েছিল, ফলে বন্যা সম্পর্কিত ভুল তথ্যও ছড়ায়।
সবচেয়ে বেশি ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ ভুল তথ্য ছড়িয়েছে রাজনীতি নিয়ে।এরপরে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ হচ্ছে ধর্মীয় ইস্যুতে।

গত বছর ধর্মীয় ভুল তথ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও নিপীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে, ইসলামী চরমপন্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে, হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে এমন দাবি নিয়ে। এসব দাবির ক্ষেত্রে পুরোনো ও অপ্রাসঙ্গিক ছবি ভিডিও যুক্ত করা হয়েছিল। জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত ধর্মীয় বিষয়ের ওপর তথ্য-যাচাই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ডিসমিসল্যাব দেখেছে, আগস্টের পরে ধর্মীয় ভুল তথ্য ঘৃণা ছড়ায় ও বিভেদ সৃষ্টির কারণ হয়ে ওঠে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও জুনে ভুল তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয় তুলনামূলক কম ছিল। এ সময় খেলাধুলা সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছড়ায় যার প্রধান বিষয় ছিল ক্রিকেট ও ক্রিকেট তারকারা। সে সময় বিপিএল, আইপিএল ছিল। এ সময়ে জুয়ার প্রচারে তারকা ক্রিকেটারদের ছবি এবং তাদের নামে মিথ্যা বিবৃতিও ব্যবহার করা হয়েছিল। জুনে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে তখন খেলা সম্পর্কে ভুল তথ্য বৃদ্ধি পায়।

২০২৪ সালে প্রকাশিত তথ্য-যাচাই প্রতিবেদনের শিরোনামে ভারতের নাম এসেছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম ও সে দেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বাংলাদেশ নিয়ে প্রচারে অনেক বেশি সরব ছিলেন। তাঁদের প্রচারে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সম্পর্কে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য এবং বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টার পাশাপাশি বিভেদ ছড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয় ছিল।

এরপর ফিলিস্তিন, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানসম্পর্কিত ভুল তথ্যও ছিল। যেসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের নাম ভুল তথ্যে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় এই ভুল তথ্যের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ প্রচারিত হয়। যেমন বিক্ষোভকারীদের হামলায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিহত, ছাত্রলীগ বা যুবলীগের হয়ে যাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান, তারা মূলত শিবিরের সদস্য।

আওয়ামী লীগের পতনের পর দলটি ও সহযোগী সংগঠনের সমাবেশ, মিছিল ও বিভিন্ন কর্মকা-ের পুরোনো ছবি ও ভিডিও সাম্প্রতিক বলে প্রচার করা হয়েছিল। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর সংগঠনটির পক্ষে-বিপক্ষে দুই ধরনের ভুল তথ্যই ছড়ায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএনপিকে নিয়েও গত বছর নানা ভুল তথ্য ছড়ানো হয়।