রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, আওয়ামী পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে কেন টার্গেট করা হচ্ছে সেনাপ্রধানকে? অন্তর্বর্তী সরবারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন। তাহলে আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য কেন তাকে অপসারণ করার কথা বলা হচ্ছে না?
এমন সব প্রশ্ন রেখে সাম্প্রতিক সবচেয়ে আলোচিত বিষয় নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। যেখানে এনসিপি ও অন্তর্বতী সরকারে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের প্রভাবেরও সমালোচনা করেন।
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, রাজনীতির মাঠে খুবই উত্তেজনাকর একটা দিন গেছে। বেশ গভীর রাতে জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহর একটা স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। আমরা নানাজন নানান রকম কথা বলছি। গুজব ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে।
তিনি বলেন, শুধু এটাই নয়, উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়া একটা ইন্টারভিউ দিয়েছেন একটা টিভি চ্যানেলকে। সেখানে সেনাপ্রধান সম্পর্কে এমন সব মন্তব্য করেছেন যেটা একজন সার্ভিং সেনাপ্রধানের জন্য বেশ অবমাননাকর এবং সেটাতে তার উপরে বেশ চাপ তৈরি করার পরিস্থিতি আছে। সম্ভবত সেনাপ্রধানের উপরে তীব্র চাপ তৈরি করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। এখন এটা ভালো না খারাপ এটা যারা করতে চাইছেন, তারা ভালো করছেন না খারাপ করছেন সেটা নিয়ে আমাদের নিজস্বতাই থাকবে।
‘‘কিন্তু পরিকল্পিত এটার আমরা এক ধরনের স্বীকৃতি দেখতে পেলাম জনাব পিনাকী ভট্টাচার্য তার একটা ভিডিওতে। যখন এই ঘটনাগুলো ঘটছে পরবর্তীতে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে জনাব পিনাকী ভট্টাচার্য সে ভিডিওটা আমাদের সামনে আসে এবং সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে, দুদিন আগেই তিনি তার নিজস্ব ঢঙের ভাষায় এক ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন মিলিটারি চিফ ওয়াকারকে। তিনি কোন না কোন বার্তা দেবেন নেগেটিভ বার্তা তো বটেই। চাপ দেবেন এরকম একটা ইঙ্গিত ছিল এবং এরপর তিনি জনাব হাসনাতের এবং জনাব আসিফের ভিডিওকে যুক্ত করে তিনি বলছেন এটাই সেটা।’’
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, হাসনাতের স্ট্যাটাস এবং আসিফের ভিডিওর আগে একটা কথা একটু আমাদের ক্লিয়ার হয়ে নিতে হবে। আসলে যেদুজন এর সাথে নাম যুক্ত হয়েছে তাদের কাছে এই ব্যাপারটা আমাদেরও একটু জানা দরকার যে, জনাব পিনাকী ভট্টাচার্যের সাথে এই দুজন জনাব হাসনাত এবং জনাব আসিফ সংযুক্ত কিনাএই পরিকল্পনায়। এই আলাপটা আমার মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু তাই নয় সম্প্রতি জনাব পিনাকী ভট্টাচার্যকে আমরা সরকারের প্রতি বেশ সফট দেখছি যিনি সরকার শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে যাওয়ার পর সরকার গঠিত হওয়ার এক দু’সপ্তাহ সময় নেননি অলমোস্ট এই সরকারকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খুব কঠোর সমালোচনা করেছেন রীতিমত।বিভিন্ন উপদেষ্টাকে ধরে ধরে তিনি গত বেশ কিছুদিন থেকেই দেখছি যে, সেই সমালোচনার জায়গা থেকে সরে এসে সরকারকে নানান রকম পরামর্শ দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয় আমি তার দুটো ভিডিওর কথা মনে করতে পারি যেখানে তিনি নিজের গুরু বলেন মিস্টার খলিলুর রহমানকে। যিনি এখন রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় আছেন। তার নিয়োগ সম্পর্কে তিনি ক্রেডিট ক্লেইম করেছেন। একজন উপদেষ্টা যখন নেয়া হলো উপদেষ্টা বা বিশেষ সহকারী অর্থমন্ত্রণালয়ের তার ব্যাপারেও তার ইঙ্গিত হচ্ছে সেটার ব্যাপারেও তার রোল ছিল।
‘‘কেবল এটাই নয়, জনাব সিআর আবরার সহ আরো দুই-একজনকে যখন নেয়া হলো তখনও তার আগে তিনি পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে এই উপদেষ্টা পরিষদ পাল্টাবে। সো ব্যাপারটা এইরকম জনাব পিনাকী ভট্টাচার্য এভাবে নিজেকে নিজেই পোর্ট্রে করতে চাইছেন যে, এই সরকারে তার বিরাট ইনফ্লুয়েন্স আছে এবং সর্বশেষ যেটা হলো তাতে শুধু সরকার না জাতীয় নাগরিক পার্টির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহর সাথেও তার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। এতে মনে হলো যে, অন্তত এই দুইজন সহ তিনি পরিকল্পনা করেই এই কাজটা করেছেন’’ বলেন তিনি।
ডা. জাহেদ বলেন, এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার এবং এটা আসলে জানা দরকার আছে পিনাকী ভট্টাচার্য যে পলিটিক্যাল আইডিওলজিতে বিশ্বাস করেন সেটাতে তাদের আস্থা থাকতে পারে বিশ্বাস থাকতে পারেই। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে একমত হতে হবে নট নেসেসারিলি। যেন পিনাকী ভট্টাচার্যের সাথে কিছু ক্ষেত্রে আমার একমত পোষণ করি কিছু ক্ষেত্রে আমি দ্বিমত পোষণ করি, উনিও নিশ্চয়ই করেন। সো এটা হতেই পারে। কিন্তু আমরা আসলে একটু জানতে চাই যে, এটা তারা এলাইনড কিনা? এলাইনমেন্ট এক জিনিস আর একটা পরিকল্পনা মিলিটারি চিফের বিরুদ্ধে একসাথে করা কিন্তু ভিন্ন ব্যাপার। এই ব্যাপারটা একটু ক্লিয়ার হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহর প্রসঙ্গে আসি। এই স্ট্যাটাসটা নিয়ে আমাদের একটু বিস্তারিত কথা বলতে হবে। যারা খোঁজখবর রাখেন তারা এর মধ্যে বিস্তারিত পড়েও ফেলেছেন। কিন্তু এখানে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কি টেকওয়ে আছে আমি সেটা বলবো। স্ট্যাটাসটা শুরু হয়েছে “১১ মার্চ সময় দুপুর ১২:৩০ কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম রিফাইন আওয়ামী লীগ নামে একটা আওয়ামী লীগের কথা” দিয়ে। ইয়েস জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহ ১২ তারিখেই আসলে এরকম একটা স্ট্যাটাস দিয়ে আভাস দিয়েছেন: সো এ ধরনের একটা মিটিং হয়েছে আমরা তার ওই স্ট্যাটাস থেকে বুঝতে পারি।
আবারো বলছি, জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহর একপাক্ষিক কথা বা জনাব আসিফ মাহমুদের একপাক্ষিক কথা নিয়ে। এখানে একটু আগেই একটা ডিসক্লেমার দিয়ে রাখা জরুরী। পৃথিবীতে কেউ ফেরেশতা নন। সুতরাং কারো কোন বক্তব্যকে শতভাগ সঠিক ধরে নেবার কিছু নেই। আমাদের গণঅভ্যুত্থানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারায় সামনে থেকেছেন। তারমানে এই নয় যে, তাদের কোন পলিটিক্যাল এজেন্ডা নেই। তারা
এখন রীতিমত পলিটিক্যাল পার্টি এবং জনাব আসিফ মাহমুদও এই দলেরই সদস্য। তারা খুব সহসাই বা যেদিনই হোক রিজাইন করেই দলে যুক্ত হবেন। সুতরাং তারা এখন রাজনীতি করছেন। রাজনীতিবিদদের কথা আমরা কিভাবে নেব সেটা মাথায় রেখেই শুনি।
এখানে তিনি বলছেন, ‘রিফাইনড আওয়ামী লীগ’ সেটাতে সাবের হোসেন চৌধুরী, শিমিন শারমিন, তাপসকে সামনে রাখা হবে। ‘রিফাইন আওয়ামী লীগ’ এটা আমার একটু অবাক লেগেছে। তাপস কিভাবে এই রিফাইন আওয়ামী লীগে থাকতে পারে! যাইহোক তারা এখানে কথা বলছেন, তারা এখানে বলতে চাইছেন যে, তাদেরকে ডেকে বলা হয়েছে শর্ত সাপেক্ষে নাকি অনেকেই আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। বলা হচ্ছে, একটি বিরোধী দল থাকার চাইতে অনেকগুলো দল আওয়ামী লীগ সহ থাকলে ভালো হবে।
‘‘রিফাইন আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে তারা এপ্রিল মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। এরকম একটা আওয়ামী লীগ আসলে আওয়ামী লীগের এবং শেখ হাসিনার বারোটা বেজে যাবে এবং আমি ধারণা করি শেখ হাসিনাই এমন একটা আওয়ামী লীগ হতে দেবেন না আমাদের এটা ঠেকাতে হবে না’’।
ডা. জাহেদ বলেন, যাইহোক সেই মিটিয়ে পরে তারা বিরোধিতা করেন এবং বিরোধিতা করে যখন তারা তাদের মতামত জানান তখন বলা হচ্ছে, বাধা দিলে দেশের সংকট সৃষ্টি হবে এবং দায় তাদেরকে নিতে হবে এবং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই আসতে হবে। ইংরেজিতে হাসনাত লিখছেন, আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক। তারপর তারা
বলছে ক্ষমা চায় নাই একটা দল অপরাধ স্বীকার করে নাই তাহলে কিভাবে ক্ষমা করবে? তার অপরপক্ষ থেকে রেগে উত্তর আসে ‘ইউ পিপল নো নাথিং ইউ ল্যাক উইজডম এন্ড এক্সপেরিয়েন্স। উই আর ইন দিস সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোরটি ইয়ার্স। তোমার বয়স থেকে বেশি।’’ তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না। তারপরে হাসনাত বলছেন যে, এটা হতে পারে না। মিটিং অসমাপ্ত রেখে আসেন।
তিনি আরও বলেন, গতকালই একটা সংবাদ সম্মেলন হয়েছিল সেখানে জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি কে সেটা বলেননি, অতি উচ্চ পর্যায়ের লোকজন সেটা বলেছেন। সো কে হতে পারে আমরা জানিনা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনাব হাসনাত একটা ছোট্ট ক্লিপ শেয়ার করেন জনাব আসিফ মাহমুদের। যেখানে তিনি সেনাপ্রধান সম্পর্কেও এক ধরনের বোমা ফাটিয়েছেন বলা যেতে পারে। যাই হোক সেনাপ্রধান ইনক্লুসিভ শব্দটা বলেছিলেন হুইচ ইজ রাইট এবং এখানে সংবাদ সম্মেলনেও সেনাপ্রধানের ইনক্লুসিভ শব্দ নিয়ে কথা হয়েছে। এনসিপির যখন যে সংবাদ সম্মেলন করেছে সেখানে এই আলাপটা এসেছে। সুতরাং সেনাপ্রধানকে ক্লিয়ারলি ইন্ডিকেট করেছে।
ডা. জাহেদ বলেন, পিনাকী ভট্টাচার্য ঠিক সেটাই করেছেন। অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা হলো। অল্প কিছুদিনের সময়ের মধ্যে জনাব আসিফ মাহমুদ ইনফ্যাক্ট দীর্ঘ একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যেটা ইম্পর্টেন্ট আসিফ বলছেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামানের পক্ষ থেকে মূল ভেটোটা ছিল প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনূস কেন? ইউনূসের পরিবর্তে অন্য যেকোনো কেউ আসতে পারে। ইউনূসের নামে মামলা আছে তিনি একজন কনভিক্টেড পার্সন। একজন কনভিক্টেড পার্সন কিভাবে একটা দেশের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন।
আসিফ মাহমুদকে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ একটা লোককে একেবারেই দেখতে পারছে না এবং বাংলাদেশে তো আল্টিমেটলি ৩০/৪০ শতাংশ লোক আওয়ামী লীগ সাপোর্ট করে। এই ৩০/৪০ শতাংশ লোকের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা লোককে প্রধান উপদেষ্টা করা উচিত। এই সরকারটা তো নির্বাচন করবে। সো আওয়ামী লীগের লোকজনের যদি এই সরকারের উপর আস্থা না থাকে তাহলে তারা কিভাবে নির্বাচন হবে? শেষে জনাব আসিফ বলছেন, সেনাপ্রধান সর্বশেষ আমাদেরকে বলেছিলেন, বুকে পাথরচাপা দিয়ে আমি এই সিদ্ধান্তটা মেনে নিয়েছি।
আসিফ মাহমুদ বা জনাব হাসনাত আব্দুল্লাহর কারো কথাই আমরা সঠিক বলে ধরে নেয়ার কিছু নাই। কারণ আমরা অপর পক্ষ জানিনা এবং এগুলোর রেকর্ড আমাদের নেই। আমি তার বই যখন বেরিয়েছিল কয়েকদিন আগে সেই বই প্রসঙ্গে বলেছি। প্রত্যেকের তার জায়গা থেকে তার ন্যারেটিভ সামনে আনা দরকার আছে। এমন একটা দিন সেনাপ্রধান সম্পর্কে এত মারাত্মক একটা বক্তব্য আসলো যেদিন সেনাপ্রধানকে একিউজ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে পুনর্বাসন করার আলাপে।
মাহফুজ আলম তথ্য উপদেষ্টা কথা বললেন একটা ভিডিও বার্তায়। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আলাপ করছেন। খুব ইন্টারেস্টিং সরকারে থাকা মানুষ কিভাবে এই ধরনের মন্তব্য করছে। কারণ সরকারের প্রধান বলছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না। আবার একটু মেটাফরিকলি বলছেন যে, এটা নাটাই থাকে ভারতে ঘুড়ি হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশে এই ঘুড়ি আর উড়তে দেয়া হবে না।
এখন আসলে যে প্রশ্নটা তাকে টার্গেট কেন করা হচ্ছে? আমরা খেয়াল করবো আজ না জনাব ওয়াকারুজ্জামানকে দীর্ঘদিন থেকে টার্গেটে পরিণত করা হয়েছে। এটা সত্য জনাব ওয়াকারুজ্জামানক শেখ হাসিনা নিযুক্ত একজন মানুষ, তার আত্মীয়। এটাও
সত্য এখন আত্মীয় হলেই অভিযোগ হয়ে যায়? উত্তর হচ্ছে না। ১/১১ যখন ঘটানো হলো জেনারেল মাসুদ বেগম খালেদা জিয়ার আত্মীয় ছিলেন। যাই হোক আত্মীয় বড় ব্যাপার না তিনি কি করলেন পরে এটা ফ্যাক্ট।
ডা. জাহেদ আরও বলেন, সেনাপ্রধানের উপর পুরো চাপিয়ে দেয়া যাবে না কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আসলে তার বাহিনীকে বিরত করেছিলেন এবং আমি যে কারণে এই ভদ্রলোককে অনেক সময় সমর্থন করা উচিত বলে মনে করি। ডেসপাইট অল দা ক্রিটিসিজম উনার অনেক সমালোচনা থাকতে পারে। উনার অনেক পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা আমরা করতেও পারি। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের একটা ডেমোক্রেটিক প্রসেস যেটা রেস্টোর করতে হবে সেটা নিয়ে কথা বলছেন।
খুবই অনেক পুরনো সময় থেকে রাইটার্সকে তিনি ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। সর্বশেষ তার যে বক্তৃতাটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে সেখানেও তিনি নির্বাচনের কথা বলেছেন। সো এটাই আসলে সংকটের জায়গা উনি নির্বাচন চাইছেন। কারণ বাংলাদেশের খুবই পাওয়ারফুল একটা পজিশনে থাকা মানুষ মোটা দাগে এই বছরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছেন। এটা অনেকেরই পছন্দ হচ্ছে না। ফলে অন্য ন্যারেটিভ গুলো আসছে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন।
এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, আচ্ছা আমি তাই যদি বলি, ডক্টর ইউনূস তো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করবে না বলছেন। ডক্টর ইউনূসের পদত্যাগ কেউ চাইছেন? এত কিছুতে যমুনা ঘেরাও হয় যমুনা ঘেরাও করে ডক্টর ইউনূসের পদত্যাগ চাওয়া উচিত তো। কারণ উনি স্পষ্টভাবে বলেছেন এবং আমি গতকালও ভিডিওতে বলেছিলাম যে এই আইন থেকেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। কোর্ট কি করবে পরের কথা আইন থেকেই বাদ দিয়েছে সরকার। এটা তো এত কিছু হলো ডক্টর পদত্যাগ চাওয়া উচিত। উনি তো আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সর্বোচ্চ কাজ উনি করছেন। তার চাইতে জরুরি কথা সরকার যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে আমরা একটু দেখতে চাই তো সেনাপ্রধান কি করে। কাজটা সরকারের।
আবারো বলছি যে সেনাপ্রধানকে বলা হচ্ছে, সেনাপ্রধান হাসনাতকে ডেকে এরকম কিছু বা সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কেউ এরকম কিছু বলে নাই আমি তা বলছি না। কিন্তু কি আসে যায়। ডক্টর ইউনূস করুক এবং সরকার বলুক যে সেনাপ্রধান তাকে এটা করতে দিচ্ছে না। আমরা একটু শুনি আমরা একটু দেখি। আওয়ামী লীগকে একটা রাজনৈতিক ফুটবল দলে পরিণত করা হয়েছে। এনসিপি এটা নিয়ে রাজনীতি করবে আমি কিন্তু বলেছি। তারা সংবাদ সম্মেলনের প্রধান উপদেষ্টাকে সমালোচনা করেছেন। এটা করারই কথা। কারণ এটুকু না হলে মুখ থাকছে না। তারা করেছেন এটাই তাদের এখন রাজনৈতিক ক্যাপিটাল।
ডা. জাহেদ মন্তব্য করেন, এটাকেই ব্যবহার করে আসলে ওয়াকারুজ্জামানকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে। কেউ এই স্বপ্ন দেখছেন যে, তাকে সরাতে পারলে নির্বাচন থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নেয়া যায়। এটা ১/১১ মতো কিছু একটা হোক বা সরাসরি সেনা শাসন। কিংবা যে খোয়াবটা আসলে প্রচুর দেখা হয় সেটা হচ্ছে, একটা বিপ্লবী সরকার। একটা বিপ্লবী সরকার ঘটিয়ে দিতে পারলে দেশের ক্ষমতা নিয়ে নেয়ার এর চেয়ে সহজ উপায় নেই যেটা বহু দীর্ঘ সময় বা কতদিন ধরে রাখা যাবে সেটা কেউ বলতে পারবে না। এই আলাপ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে ছিল আছে এবং ক্রমাগত চলছে।
আসলে প্রথম থেকে সেই বিপ্লব নাকি বিপ্লব না ডিবেটটা করতাম এবং জনাব ওয়াকার এই পথেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং ঠিক একই কারণেই বিএনপির উপর অ্যাটাক আছে। কেউ নির্বাচন চাইলে তাকেও টার্গেট করা। যেমন আমাকে প্রচুর লিখেছেন আবারও লিখবেন আমি জানি আমি বলেছি আমি আমার কমেন্ট বক্স খোলা রাখি। লিখতে পারেন। আমাকে বিএনপির দালাল বানাতে পারেন। ভারত নির্বাচিত সরকারের সাথে তারা সম্পর্ক করতে চায় বলেছে। সো ভারতের দালাল বানাতে পারেন।
আস্তে আস্তে সম্ভবত এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে সরকার যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না বলে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেছেন। কুড ইট বি দা পার্ট অফ এ গেম। আমাদের এই প্রশ্নগুলো আসলে আস্তে আস্তে করা শুরু করতে হবে। তার আগে সবচাইতে জরুরি ব্যাপার সরকারের দিক থেকেও এই জিনিসগুলো ক্লিয়ার করতে হবে যে, নির্বাচনের ব্যাপারে এবং যে ঘটনাগুলো ঘটছে সে ব্যাপারে তাদের অবস্থান কী।
জনাব আসিফ মাহমুদ বলছেন প্রধান উপদেষ্টা একটা স্ট্যাটাস দিয়ে নির্বাচনের সময়সীমা বলে দিয়েছেন। সুতরাং যাবতীয় এগুলোর সাথে নির্বাচন পেছানোর কে কেউ যাতে না মেলায়। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা বসলে তাদেরকে নিজেদেরকে অনেক বুদ্ধিমান মনে করতেন আমি একই ঘটনা এখন আবার দেখছি মানে ডক্টর ইউনূস বলেছে বলে এই নির্বাচনটা ঘটবেই হবেই আর কিছু হবে না এটা বেদবাক্য হয়ে গেছে এটা আল্লাহ বলেছেন, কথাটা কি এই রকম।
ডক্টর ইউনুস বলছেন তারপরও নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি করা যেতে পারে- এটুকু বোঝার জ্ঞান বুদ্ধি আমাদের আছে জনাব আসিফ আমাদের বোঝা উচিত। আমরা এত স্টুপিড না। সবাইকে এত স্টুপিড মনে করার কিছু নাই।
সবশেষ ডা. জাহেদ বলেন, যাই বলুন বাংলাদেশে খুব দ্রুত একটা নির্বাচন চাই আমরা। এই নির্বাচনটা হতে হবে এবং বিএনপিকেও টার্গেট করা হচ্ছে।বিএনপিকে টার্গেট করার সমস্যা নেই। করা যেতেই পারে, রাজনীতি হতেই পারে। জনাব নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাকে নিয়ে তাদেরকে নিয়ে সেখানে খুব ইন্টারেস্টিং কিছু ফাইন্ডিং আছে এটা নিয়ে আলাদা কথা বলতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :