রাজধানী ঢাকায় বাস্তবে উধাও হয়ে যাওয়া ৫৮টি সরকারি পুকুর চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপে পুকুর থাকলেও সেসব স্থান ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে দখলদারেরা। এসব পুকুরের বেশির ভাগ মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও তেজগাঁও রাজস্ব সার্কেলে।
সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের পর এই ৫৮ পুকুর চিহ্নিত করা হয়েছে। পুকুরগুলো উদ্ধার করে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে ঢাকার জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক)। রাজউকের সূত্র বলেছে, পুকুরগুলো সংস্কারে প্রকল্প তৈরি করে দ্রুত দখলদার উচ্ছেদ শুরু করা হবে।
রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেন, ‘জেলা প্রশাসন থেকে পুকুরগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা এসব পুকুর দ্রুত দখলে নেব। কিছু পুকুর ভরাট করে স্থাপনা করা হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করব। এরপর সেখানে ওয়াকওয়ে ও গাছ লাগানো হবে। এমনভাবে উন্নয়ন করা হবে, যাতে আগামী ১০০ বছরেও সেখানে কোনো দখলদার হাত না দিতে পারে।’
রাজউকের সূত্র জানায়, রাজধানীতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন পুকুরগুলোর নথিপত্র ঘেঁটে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে রাজউককে হস্তান্তর করা হয়েছে। নথিতে এসব পুকুরের মধ্যে কোতোয়ালি মৌজায় রয়েছে সূত্রাপুরের আরএস ৭৩৯৬ দাগে ৮০ শতাংশ, সিটি জরিপ ২০০০৫ দাগে ৭০ শতাংশ, আরএস ১৪০২৪ দাগে ১৮ শতাংশ, ওয়ারীর আরএস ৪১১৫ দাগে ৫০ শতাংশ, রমনা মৌজায় আরএস ৩৯৫ দাগে ১ একর ৮৫ শতাংশ, আরএস ৭৮৩ দাগে ৭০ শতাংশ, আরএস ৭৯৮ দাগে ১৮ শতাংশ আয়তনের পুকুর রয়েছে।
সরকারি নথিতে মতিঝিল রাজস্ব সার্কেলে ১৩টি পুকুর থাকলেও এখন সেসব স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এই ১৩টির মধ্যে যাত্রাবাড়ী মৌজায় সিটি জরিপ ৪৮০৮ দাগে ৮৫ শতাংশ ও সিটি জরিপ ২৭৫২ দাগে ১৪ শতাংশ, মাণ্ডায় ১৮২৫ দাগে ১৭ শতাংশ, দনিয়ায় ৭৭৮২ দাগে ২১ শতাংশ ও ১৭৬০ দাগে ২১ শতাংশ, কদমতলীতে ৯৩০১ দাগে ১ একর ৯৭ শতাংশ ও ৯৭১৩ দাগে ৪ একর ৮৮ শতাংশ, ব্রাহ্মণচিরণে ২৪৩৩ দাগে ২০ শতাংশ ও ২১১০ দাগে ২৬ শতাংশ, মতিঝিলে ২১০৮ দাগে ১ একর ৯২ শতাংশ, রাজারবাগে ৯০১০ দাগে ৪৭ শতাংশ ও ৭৩৪০ দাগে ১১ শতাংশ এবং ১৯০৪ দাগে ২৬ শতাংশে পুকুর ছিল। লালবাগ রাজস্ব সার্কেলের কালুনগরে আরএস ৫৮০ দাগে ২০ কাঠা, আরএস ১৫৩০ দাগে ৬১ শতাংশ এবং আরএস ১৬৬৫ দাগে ২০ শতাংশ, লালবাগে আরএস ৫৬৫৭ দাগে ১ একর ২০ শতাংশ এবং সিটি জরিপ ১৭১১ দাগে ৫৮ শতাংশ, হাজারীবাগ মৌজায় আরএস ৬০৩৪ দাগে একটি পুকুর, ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলে আরএস ২৮২৭ দাগে ৪৩ শতাংশ, দক্ষিণখান ভূমি অফিসের আওতায় আরএস ৫৬৮২ দাগে ২৯ শতাংশ, আরএস ১১৬৬৩ দাগে ৫৯ শতাংশ, দক্ষিণখানে ৫০ শতাংশ, আরএস ১১৫৬২ দাগে একটি, ১১৫১২ দাগে ৩৬ শতাংশ, আরএস ৫৭৪৭ দাগে ১ একর ২৯ শতাংশ, ১১২৭০ দাগে ৩০ শতাংশ, উত্তরখানে এসএ ১৯২৩ দাগে ৩৪ শতাংশ, আনুলে আরএস ৪১ দাগে ৪৩ শতাংশ, আরএস ৯৩ দাগে ৪৮ শতাংশ, উত্তরখানে সিটি জরিপ ৫৫১৬ দাগে ৩৫ শতাংশ জমিতে পুকুরের তথ্য রয়েছে।
সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুর রাজস্ব সার্কেলের লালমাটিয়া মৌজায় সিটি জরিপে ২ একর ১১ শতাংশ, মিরপুর রাজস্ব সার্কেলের বসুপাড়া মৌজায় ১১৩৫ দাগে ৬৮ শতাংশ, ছোট দিয়াবাড়িতে ২৩৪ দাগে ৭৫ শতাংশ, মিরপুরে ৩৪৩ দাগে ১৫ শতাংশ, গড়ান চটবাড়িতে ২৪৩৪ দাগে ১৩ শতাংশ, বাউনিয়া মৌজায় ১২৫৫২ দাগে ৭৮ শতাংশ, চণ্ডালভোগে ৩০ দাগে ৬৩ শতাংশ এবং দিয়াবাড়িতে ২০২৫ দাগে ৪৫ শতাংশ আয়তনের পুকুর রয়েছে। তেজগাঁও রাজস্ব সার্কেলে ছোট বেরাইদে সিটি জরিপে ৪৪২ দাগে ১৮ শতাংশ, গজারিয়ায় ১০৩৫০ দাগে ৪০ শতাংশ, বাড্ডায় ৫৪০৮ দাগে ৬৮ শতাংশ, সাতারকুলে ৩৮৬০ দাগে ২৮ শতাংশ, ৮৪৯ দাগে ৯৩ শতাংশ, ৪৯৪৪ দাগে ৪০ শতাংশ, ২১৯১৩ দাগে ১১ শতাংশ, ২১৯১৫ দাগে ১৭ শতাংশ এবং ২১৯১৮ দাগে ২৪ শতাংশে পুকুর ছিল।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) এক সমীক্ষা অনুযায়ী, তিন-চার দশকে ঢাকার প্রায় ১ হাজার ৯০০ পুকুর ও জলাশয় দখল এবং ভরাট হয়েছে। ১৯৮৫ সালেও রাজধানীতে ২ হাজারের বেশি পুকুর ছিল। ২০২১ সালেও আরডিআরসির হিসাব অনুযায়ী, ছোট-বড় মিলিয়ে পুকুরের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪১। তবে বাস্তবে এসব পুকুরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
অন্তর্র্বতী সরকারের আমলে এই ৫৮ পুকুর উদ্ধার করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নেওয়া হলে তা মাইলফলক অর্জন হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান স্থপতি মো. মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘পুকুরগুলো সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য আমরা প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছি। এটি পাস হয়ে এলে কাজ শুরু হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :