ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজে না থেকেও বেতন খাচ্ছেন গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী সেই শিক্ষকরা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ১০:১৭ অপরাহ্ণ /
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজে না থেকেও বেতন খাচ্ছেন গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী সেই শিক্ষকরা

নীলক্ষেত সড়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ-ফাইল ফটো

শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ‘পথভ্রষ্ট’, ‘শিবির’ ইত্যাদি ট্যাগ দেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকরা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পতন হলে আত্মগোপনে যান এসব শিক্ষক।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানো থেকে শুরু নানামুখী তৎপরতা চালান একদল শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের ‘পথভ্রষ্ট’, ‘শিবির’ ইত্যাদি ট্যাগ দেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকরা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার হাসিনার পতন হলে আত্মগোপনে যান এসব শিক্ষক। কিন্তু ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উল্টো বেতন-ভাতা নিচ্ছেন পলাতক হাসিনার এই দোসররা। বিষয়টি নিয়ে নানা অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

প্রশাসনের এই নীরবতাকে দ্বিচারিতা হিসেবে দেখছেন অনেকে। যদিও প্রশাসন বলছে অভিযুক্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির কাজ শেষের দিকে। খুব দ্রুতই অভিযুক্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে থাকা শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে জনস্বার্থবিরোধী অবস্থানে থাকা এসব শিক্ষক কেন পাবেন সুযোগ-সুবিধা?

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিরোধিতাকারীসহ আগে থেকেই যাদের ওপর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রয়েছে এমন অর্ধশতাধিক শিক্ষকের ক্লাস বর্জনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০ শিক্ষকের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে যাদের ক্লাস পরীক্ষা শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছেন। যারা বিভাগে ক্লাস নিতেও আসছেন না। তবে ক্লাস না নিয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।

যা বলছেন শিক্ষার্থীরা : ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে জনগণের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ। তাই নয় আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামী মদদে যখন রাস্তায় পুলিশ, রথ্যাব, সেনাবাহিনীর গুলিতে শিক্ষার্থীদের লাশ পড়ছিল, তখন তারা আওয়ামী লীগকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষকদের ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং তাদের বিচারের আওতায় না আনা শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এমন আচরণকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করা।

জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, গণহত্যায় মদদদাতা শিক্ষকরা যেখানে শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার কথা সেখানে তারা এখনো বেতন-ভাতা পেয়ে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু তাই নয়, দর্শন বিভাগের শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানার তো প্রমোশনও হয়ে যাচ্ছে। এ সমস্ত ঘটনা জুলাই-আগস্টে জীবন দেয়া দুই হাজারের অধিক শহীদের ত্যাগের সাথে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। আমরা অবিলম্বে এর অবসান চাই। ফ্যাসিবাদের সহযোগী সব শিক্ষকদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দলের অনুসারী শিক্ষকরা নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছেন। এ ধরনের শিক্ষক শিক্ষাঙ্গনের জন্যই ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। বর্তমান সময়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সমাজে পক্ষপাতিত্ব ও দ্বৈত নীতির উজ্জ্বল একটি দৃষ্টান্ত ।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের দায়িত্ব নিজের নিরপেক্ষ থাকা, কিন্তু তারা যখন জনগণের আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তখন সেই নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তবুও তারা পাচ্ছেন সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা, যেটি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোভিসি (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু শিক্ষকের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসেছে। প্রাথমিক অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রশাসনের মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া হয়েছে। বিভাগীয় প্রশাসনের বৈঠকে বেশ কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ শিক্ষার্থীরা তুলে নিয়েছেন। তারপরেও বেশ কিছু শিক্ষক আছে যাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে অনুষদ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সত্যানুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। যারা কেস বাই কেস শিক্ষকদের অভিযোগের ব্যাপারে অনুসন্ধানের কাজ করে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে এই কমিটির কাজ শেষের দিকে। উক্ত কমিটিতে প্রতিটি কেসের ব্যাপারে একজন ডিন, প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্য, আইন বিশেষজ্ঞ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষ কমিটিদ্বয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিবেন। সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে উঠবে। সিন্ডিকেট সদস্যদের সাথে আলোচনা-পর্যোলচনা শেষে প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে। সার্বিক প্রক্রিয়াগুলো প্রায় শেষের দিকে, আশা করি খুব দ্রুতই কমিটিগুলোর কাজ শেষ হবে। সেই সাথে দোষিদের ব্যাপারে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।