ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলমান। একাডেমিক পরিবেশ রক্ষার কথা বলে অনেক শিক্ষার্থী রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধের পক্ষে, আবার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম এবং কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই উত্তেজনা তৈরি হয়। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—হল রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আগের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে একই দিন দুপুরে ঢাবি শাখা ছাত্রদল বিভিন্ন হল ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। অথচ ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই থেকেই একাডেমিক ও হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা বিকেল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন, যা রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য হলেও ছড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ রাত ১২টার পর তীব্র আকার ধারণ করে। সবগুলো হল থেকে শিক্ষার্থীরা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন এবং পরে সেখান থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। তারা উপাচার্যের কাছে ছয় দফা দাবি পেশ করেন—
১. কেন কমিটি দেওয়া হলো, উপাচার্যকে জবাব দিতে হবে।
২. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস, বামসহ সব বিদ্যমান গুপ্ত কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের হল একাডেমিক এলাকায় রাজনীতির সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে ছাত্ররাজনীতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দিতে হবে।
৪. ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব হল কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে।
৫. হল প্রভোস্টদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. দ্রুত ডাকসু বাস্তবায়ন করতে হবে।
ব্যাপক হট্টগোলের মধ্যে রাত ২টার দিকে উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, গত বছরের ১৭ জুলাই হলে হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা বহাল থাকবে। এই নীতিমালার অধীনে প্রতিটি হল প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি, ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটি নিয়ে সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করবেন।
তার ঘোষণায় স্পষ্ট করা হয়—২০২৪ সালের ১৭ জুলাইয়ের ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী গুপ্ত ও প্রকাশ্য, উভয় ধরনের হল রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে হল পলিটিক্সের সম্পূর্ণ অবসান দাবি করেন।
আপনার মতামত লিখুন :