তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রস্তাব বিএনপির


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ১৩, ২০২৫, ১০:৫১ অপরাহ্ণ /
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগে প্রস্তাব বিএনপির

কথা বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ-সংগৃহীত  

বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায় যদি তার সেই যোগ্যতা থাকে। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের’ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এসব প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেন।

‘প্রধান বিচারপতি নিয়োগে বিএনপির প্রস্তাব’

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সীমাহীন ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন আছে আর্টিকেল ৯৫ -এ। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায় যদি তার প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য যোগ্যতা থাকে। সেখানে হাইকোর্ট ডিভিশন বা আপিল ডিভিশন বা অন্য কোনো ক্রাইটেরিয়া ওখানে কোনো কিছু উল্লেখ করা নাই। সাংবিধানিকভাবে সেই ক্ষেত্রে চিফ জাস্টিস নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে নিয়োগের জন্য আমরা বাধ্যবাধকতা রাখি। আপিল বিভাগের মোস্ট সিনিয়র তিনজনের মধ্য থেকে যেন করা হয়। আলোচনায় একটা জায়গায় এসছিলাম, সিনিয়র মোস্ট দু’জনের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি চিফ জাস্টিস নিয়োগ করেন।’

তিনি বলেন, ‘কোনো দল তার নির্বাচন ইশতেহারে উল্লেখ করে যদি ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হন। তখন তারা দু’জনের প্রভিশনটা সংবিধানে রাখতে পারবে। যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে চাই, এখানে আমরা একমত হয়েছি।’

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে বিএনপির প্রস্তাব’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় জুডিশিয়ারিকে বাদ রেখে তার আগে কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব রাখা যায় কিনা এ ব্যাপারে সবাই একমত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের ক্ষেত্রে তো দ্বিমত সারা জাতির মধ্যেই নাই। সবাই একমত। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আগের পুরোটাই হচ্ছে জুডিশিয়ারি নির্ভর। তো সেজন্য সে জুডিশিয়ারি নির্ভর প্রস্তাবগুলোর বাইরে যদি কয়েকটি প্রস্তাবে আমরা আগে একমত হতে পারি, সবাই মিলে তাহলে জুডিশিয়ারিকে বিতর্কের বাইরে রাখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে রাষ্ট্রপতিকে রাখা ঠিক হবে না। রাষ্ট্রপতিকে না রাখতে পারলেই ভালো, তারপরও যদি ঐকমত্যে আসা না যায় সেই ক্ষেত্রে একদম লাস্ট অপশন হিসেবে রাখা যায় একটা ইনস্টিটিউশন প্রধানকে।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার যদি সাধারণ নিয়মে বিলুপ্ত হয়। মেয়াদ শেষান্তে তার ৩০ দিনের আগে এই উদ্যোগ নিবেন সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে। আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের নাগরিক যিনি এই অনুচ্ছেদ অনুসারে উপযুক্ত উপদেষ্টা হওয়া যোগ্য হন, তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা করবেন।’

‘যদি সেই অপশন না পাওয়া যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নপক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার। সে ক্ষেত্রে ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দলে হবে। চারজনের সমন্বয়ে গঠিত হবে এবং এটার সভাপতিত্ব রাষ্ট্রপতিও করতে পারে, স্পিকারও করতে পারে। রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করলে সেখানে রাষ্ট্রপতির ভোটিং পাওয়ার থাকবে না। আর স্পিকার সভাপত্বি করলে স্পিকারের ভোটিং থাকবে। রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করলে শুধু শুনানি করবে। রাষ্ট্রপতির কোনো ভোট প্রয়োগ করতে পারবে না। চারজন মিলে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করতে পারেন তাহলে এখানে এটা সমাপ্ত হবে’।

‘আর যদি সেটা না হয় তাহলে প্রস্তাব হিসেবে, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার অবশ্যই বিরোধী পক্ষ থেকে যিনি হবেন। এই চারজন তার সাথে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় সর্বোচ্চ দল, মানে প্রথম দল তো সরকারি দল, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিরোধী দল অথবা তৃতীয় যদি কোনো বৃহৎ দল থাকে সেই তৃতীয় বৃহৎ দলের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রিজাইড করবেন এবং রাষ্ট্রপতির ভোটিং ক্ষমতা থাকবে। আলোচনার যদি ঠিক হয় বেটার।’

‘এটাও যদি না পাওয়া যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বিরোধী দলগুলোর মধ্যে- এখানে আবার প্রধান বিরোধী দল বাদে যারা ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে -তাদের পক্ষ থেকে একজন এখানে কিন্তু সবগুলো দল মিলে একজন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভোটিং ক্ষমতা থাকবে। এগুলো যদি না হয় তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে যা আছে সেখানে আমরা ফিরে আসতে পারি।’

‘এক্ষেত্রে একটা প্রস্তাব দিয়েছি, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বেশি হবে না। তাদের মধ্য থেকে যাদের পাওয়া যায় সিলেকশন হবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার এই কমিটি যাচাই-বাছাই করে একজনকে যদি মনোনীত-সিলেকশন করতে পারেন।’

‘এরপরেও যদি না হয় তাহলে রাষ্ট্রপতিকে রাখার বা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত যেটা হয় সেটা নিতে পারে। অথবা রাষ্ট্রপতি না হয়ে কোনো একটা ইনস্টিটিউশনের প্রধানকে করা যায় কিনা এটাও সিদ্ধান্তে আসবে অথবা হাউজে যে প্রস্তাবগুলো ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আসছে, আপার হাউস, লোয়ার হাউসের এবং র‌্যাঙ্কিং চয়েসের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমরা চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মধ্যে কয়েকটা বিকল্প আসুক- এক্সক্লুডিং জুডিশিয়ারি। যেহেতু জুডিশিয়ারিকে বিতর্কের বাইরে রাখাটাই হচ্ছে সবার উদ্দেশ্য।’

জরুরি অবস্থা জারি সর্ম্পকে বিস্তারিত তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানের আর্টিকেল ১৪১ এর ক’তে কী কী বিষয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যায় তা আছে। যুদ্ধ বহিরাক্রমণ এরপরে একটা আভ্যন্তরীণ গোলযোগের কথা বলা আছে। এ আভ্যন্তরীণ গোলযোগ যেহেতু একটা ব্যাপক অপব্যবহার হওয়ার বা করার একটা সুযোগ ছিল, তার পরিবর্তে যদি এখানে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রতি হুমকি, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারী বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তাব ছিল। এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা থাকবে, তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের বিধান আছে। এক্ষেত্রে শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের বিধান না রেখে কমিশনের প্রস্তাব ছিল মন্ত্রিসভার অনুমোদন। তো সেই বিষয়ে একমত পোষণ করেছিলাম। আজকে এই বিষয়ে সর্বসম্মত ঐকমত্য হয়েছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধীদলীয় উপনেতা যেন অংশগ্রহণ করেন। তাকে আহ্বান জানানো হয়। তো সেটা সংযুক্ত করা হয়েছে।’