ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারনে তিস্তা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে সর্বগ্রাসী তিস্তা দুই কুল ছুইয়ে টইটম্বুর হয়ে বিভিন্ন স্থানে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকায় বানের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে তিস্তা অববাহিকার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে।
অস্বাভাবিক হারে পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর ও তুলনামুলক নিম্নাঞ্চল গুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তিস্তা ছাড়াও মানাস, টেপা, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী, আখিরা নদীসহ জেলার অন্যান্য নদ-নদী ও খাল-বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইতিমধ্যে তিস্তার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের ফসলের ক্ষেত মাছের পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে করে বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী, নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়া, পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে অনেক বাডি-ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। সম্ভাব্য ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ আগাম মজুত করে রাখা হয়েছে।
লক্ষীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানিয়েছেন, ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে যাওয়ায় আমরা মাইকিং করে বয়স্ক, অসুস্থ নারী-পুরুষ এবং শিশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে নৌকা দিয়ে অনেককে উঁচু স্থানে নেয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত পানিবন্দি কোনো মানুষকে আমরা সহযোগিতা করতে পারিনি। তবে ইউএনও মহোদয়কে জানানো হয়েছে। কিন্তু সাহায্য এখনো পাওয়া যায়নি। এই ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ডে অন্তত ১০ হাজার বাড়ি-ঘর হাঁটু বা কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে।
গজঘন্টা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, প্রতিদিনই তার ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বানের পানিতে অনেক ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়রম্যান আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিনবিনিয়াচরের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশঝাড়, জমি, বসতবাড়ি।
বেড়িবাঁধটির পূর্বের অংশ এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। এখন খৈ খাওয়া অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যদি এই ভাঙন রোধ করা না যায়, তাহলে খৈ খাওয়া, পাঙ্গাটারি, মধ্যপাড়া, আমিনগঞ্জসহ আশপাশের প্রায় ১১ থেকে ১২টি গ্রামে ভাঙন শুরু হবে।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উজানের ঢল আর অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘটসহ এ অঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।
এতে নীলফামারীর জলঢাকা, ডোমার, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, রৌমারী, সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
রংপুরে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, ভাঙ্গন কবলিত কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়ার চর ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে।