খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সর্বোচ্চ লোডশেডিং দেখা দেয়। খুলনার বিভিন্ন এলাকায় দিনের বিভিন্ন সময় চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। প্রতিবার কোথাও একঘণ্টা আবার কোথাও ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
জানা যায়, টানা লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে নগর জীবন। বিশেষ করে উৎপাদনমুখী ছোট কারখানাগুলোতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড জানিয়েছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটি এবং জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন কমেছে, ফলে কমেছে সরবরাহও।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চল নিয়ে গঠিত সার্কেল ওয়ান এলাকায় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ২৬৪ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ২৩০ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিলো ৩২ মেগাওয়াটের মতো।
বিদ্যুৎ সরবরাহ কম হওয়ায় খুলনার টুটপাড়া, শিববাড়ী এলাকা, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর এলাকায় লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে সবথেকে বেশি। প্রতিটি এলাকায় দিনের বেলায় তিন থেকে চারবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিলো। আর প্রতিবার বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।
এ বিষয়ে খুলনার খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী শামছুন নাহার বলেন, ‘সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্পের সাহায্যে পানিও ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। দুপুরে অসহনীয় গরমে বাইরে বের হয়ে আসতে হয়েছে।’
টুটপাড়া এলাকার আব্দুল কাদের বলেন, ‘বাচ্চারা দুপুর ১টায় বাড়ি ফিরে বিদ্যুৎ পায়নি। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। শুধু আজ নয়, গত তিনদিন ধরে এমন লোডশেডিং চলছে। দিনের বেলায় বিদ্যুৎ না থাকলে সহ্য করা যায়, কিন্তু রাতের বেলায়ও দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে অসহ্য লাগে।’
শেখপাড়া এলাকার মাসুদ ওয়ার্কশপের মালিক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘গত দুই-তিন দিন ধরে বারবার লোডশেডিং হচ্ছে। এতে আমাদের উৎপাদন কমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। সঠিক সময়ে উৎপাদন করতে না পারায় পণ্য সরবরাহও করতে পারছি না। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি আমরা।’
পাওয়ার গ্রিড লিমিটেডের ওয়েব সাইট ভিজিট করে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের সব থেকে বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট চালু থাকলেও বন্ধ রয়েছে অপরটি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে ইন্দোনেশিয়া থেকে জ্বালানি সরবরাহ না হওয়ায় একটি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়মিত উৎপাদনে থাকা আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় গত দুই-তিন দিন ধরে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আমরা আসলে যেমন বিদ্যুৎ পাবো, সেভাবেই সরবরাহ করতে পারবো। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
আপনার মতামত লিখুন :