দূর্নীতি নিয়ে উত্তপ্ত যেমন সংসদ, তেমনি দেশের পথ প্রান্তও


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ৫, ২০২৪, ৬:৪২ অপরাহ্ণ /
দূর্নীতি নিয়ে উত্তপ্ত যেমন সংসদ, তেমনি দেশের পথ প্রান্তও

আলহাজ¦ মোঃ রবিউল হোসেন

বলা বাহুল্য যে, শুধু দেশের গণমাদ্যমগুলোতেই নয় বরং দেশের নগর, শহর ছাড়াও প্রত্যন্তর অঞ্চল ব্যাপী হাটে, মাঠে-ঘাটে, চা এর স্টলে প্রায় সর্বত্রই লোক মুখে একই কথা দূর্নীতিতে ছেয়ে গেছে সারা বাংলাদেশ। দূর্নীতি এখন ঘরে-ঘরে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষদের ধারনা দেশে খুন-জখম, অরাজগতা, অপরাজনীতির মূলে নাকি সর্বগ্রাসী দূর্নীতি।

কিন্তু কথাটা কতটুকু সত্য? দেশের অল্পশিক্ষিত হলেও চিন্তাশীল মানুষদের কথাগুলো দেশ বিদেশের কবি সাহিত্যিক ও বিজ্ঞজনদের কথার মধ্যে কতটুকু মিল খুঁজে পাওয়া যায় সে প্রসঙ্গে একটি বাস্তব উদাহরণ দিয়েই অদ্যকার লেখাটি শুরু করতে চাই।

উল্লেখ্য কত টাকা দরকার? এই শিরোনামে গত ৯ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় লেখক মাজহারুল ইসলামের উপসম্পাদকীয় কলামে এক লেখায় উল্লেখ করেছিলেন রুড়ি আপ কিপলিংয়ের একটি কবিতায় ছিল- “ঐড়ি সঁপয সড়হবু ফড়বং ধ সধহ জবয়ঁরৎব”?
মীর মশাররফ হোসেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বিষাদ সিন্ধু গ্রস্থে লিখেছেন ‘হায়রে পাতকী অর্থ তুই জগতের সকল অনর্থের মূল”। কবি স¤্রাট রবী ঠাকুর লিখেছেন, এ জগতে হায় সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি।

দার্শনিক কবি সাহিত্যিক ও সমাজের গুনিজনদের সেকেলে কথা আজ একালে এসেও তার অকঠ্য সত্যতার প্রমান মিলছে। দেশে আগে-পরে ও বর্তমানে যারা বড় বড় দায়িত্বে ও প্রশাসনিক পদে ছিলেনও আছেন তাদের দূর্নীতির মাধ্যমে অর্থের ও সম্পদের পাহাড় গড়া সম্পর্কে অকঠ্য প্রমান যেভাবে উপস্থাপন করে চলেছেন দুদুক ও দেশে গণমাধ্যমগুলো তা জেনে শুনে দেশের চিন্তাশীল নীতিবান, লেখক, কবি ও ধর্মপরায়ণ লোকদের মন্তব্য হলো-
ক. খরগোস বাঁচে সাড়ে তিনশ বছর।
খ. শকুন বাঁচে একশ বছর।
গ. আল্লাহর শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানুষ বাঁচে মাত্র ৭০-৮০ বছর অথচ আমাদের বোধ হলো না?
বোধ হবে কীভাবে? আমরা এখন সবাই স্বাধীন। স্বাধীনতা ভোগ করছি সবাই যে যার মতন করে। বুঝিনা স্বাধীনতার মূল অর্থ কী? স্বাধীনতা মানেইতো অবাধ স্বাধীনতা নয় বরং স্বাধীনতার অর্থ হলো জীবন ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রেই জবাব দিহিতা এবং আইনের শাসন মেনে চলা কিন্তু দেশের অবস্থা এখন এমনই দেশের সর্বাধিক জনগুরত্বপূর্ণ মানব সেবা হলো স্বাস্থ্যখাত। স্বাস্থ্য খাতের গুরত্ব বুঝাতে প্রবাদ আছে-
ডযবহ সড়হবু রং ষড়ংঃ হড়ঃযরহম রং ষড়ংঃ ডযবহ যবধষঃয রং ষড়ংঃ বাবৎু ঃযরহমং রং ষড়ংঃ অথচ সেই স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্মানিয় সম্পাদক জনাব নঈম নিজাম গত ৩০ জুন ২০২৪ তার এক মূল্যবান লেখার উপসম্পাদকীয় কলামের শিরোনাম করেছেন- “স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতের ভয়াল সিন্ডিকেট ভাঙুন”

উক্ত শিরোনামের লেখার এ অধ্যায় তিনি উল্লেখ করেছেন, মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশে মোট কতটি বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক আছে কেউ জানে না। এর মধ্যে কতটি বৈধ? কতটি অবৈধ? আমার জানামতে (সম্পাদক) বৈধ প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অবৈধ বেশি। ডাক্তার নেই, নার্স নেই, হাসপাতাল খুলে বসে আছে। সরকারি হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড় থাকে। সিটের তুলনায় রুগী বেশি ভর্তি হয়। কেন এমন হবে? বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য টেষ্টের জন্য কত টাকা ফি তা নির্ধারন নেই। ইকুইপমেন্ট নেই। বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালে কোনো প্রফেসর নেই। বিষেষজ্ঞ বলতে সহকারী অধ্যাপক। বাকী সবাই ইন্টার্নি অথবা সাধারণ চিকিৎসক। অনেক হাসপাতালে তাও নেই। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সও নেই। চিকিৎসার নামে চলছে নৈরাজ্য। অসহায় মানুষকে করা হয় জিম্মি।

২৫জুন জাতীয় সংসদে প্রশ্ন উত্তর পর্বে জনাব স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানান কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের জোড্ডা ইউনিয়নের গোহারুয়া গ্রামে স্থাপিত সরকারি হাসপাতালটি ২০০৬ সালে স্থাপিত এটি নাকি জনবসতিহীন বিলের পাশে। অথচ লেখকের বক্তব্য হাসপাতালের ধারে কাছে কোন বিল নেই। গোহারুয়া ঘন বসতিপূর্ণ একটি গ্রাম। আশপাশের গ্রামগুলোতেও একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পৃক্ত। ইউনিয়নের দুটি অংশের জনসংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব নাসিম সাহেব ও সরেজমিন হাসপাতালটি প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি মাননীয় বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়কেও উক্ত হাসপাতালটি পরিদর্শন ও মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন।

গত ১লা জুলাই ২০২৪ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শিক্ষাখাতে দূর্নীতি নিয়ে সে সংবাদ শিরোনাম করা হয়েছে সেই শিরোনামটি ছিল “শিক্ষা খাতে দূর্নীতি নিয়ে উত্তপ্ত সংসদ” জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে শিক্ষাখাতে লাগামহীন অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। বিরোধীদল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন শিক্ষার দূর্নীতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এমপিও ভুক্তির জন্য টেবিলে টেবিলে টাকা দিতে হয়। একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার ২০-২৫ বছর পরে বেতন পাচ্ছে। শিক্ষকদের অবসর ভাতা পেতে বিলম্বিত হচ্ছে। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে কলারোয়া জি.কে.এম.কে পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক জনপ্রিয় সর্ব বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক প্রয়াত নূরানী স্যার টাকার গুরত্ব সম্পর্কে বলতে যেয়ে রশিকতা করে বলতেন “আই ওয়ান্ট টাকা উইদাউট টাকা আদার ওয়াইজ ফাকা” অর্থ্যাৎ টাকা ছাড়া আজকাল আর কিছুই হয় না। তবে দিনে দিনে টাকার চাহিদা ও দূর্নীতি এতই তীব্র আকার ধারন করেছে যে, দেশের সর্বস্তরে সর্বক্ষেত্রেই দূর্নীতি, অনিয়ম এখন যেন হালালে পরিণত হয়েছে। বেড়ায় কাকুড় খাচ্ছে সর্বত্রই। যে কারণে সমাজের ধর্মপ্রান ব্যক্তিরাও এখন দূর্নীতির কূট কৌশলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন ও পড়ছেন। হায়রে দুনিয়া! কবি আসাদ চৌধুরী তাঁর লেখা এক কবিতায় তাই সত্যই লিখেছেন:

কোথায় পালালো সত্য?/ দুধের বোতলে ভাতের হাঁড়িতে, নেইতো?/ রেষ্টুরেন্টে, হোটেলে, সেলুনে/ গ্রন্থগারের গভীর গন্ধে/ টেলিভিশনে বা সিনেমা বেতারে/ নৌকার খোলে, সাপের ঝাপিতে নেইতো!/ গুড়ের কলসী, বিষের কৌটা/ চিনির বয়েম, বাজারের ব্যাগ/ সিগারেটের কেস, পানের ডিব্বা/ জর্দার শিশি, লক্ষীর সরা/ নকশি পাতিল, চৌকিরতলা/ সবই খুঁজলাম, খুঁজে দেখলাম নেই তো!/ সাংবাদিকের কাঠের ডেক্স/ কাগজে কেতাবে, পুঁথিতে কলামে/ ইনজেকশনে, দাদের মলমে/ ভ্যানিটিব্যাগ বা পকেটে, আঁচলে/ ড্রয়ারে, ব্যাংকে, আয়রন সেফে, সত্যনামক মহান বস্তু, নেইতো!/ কবিতায় নেই, সঙ্গীতে নেই/ রমনীর চারু ভাষীতে নেই/ পাগলের গাঢ় প্রলাপেও নেই/ নাটকের কোন সংলাপে নেই/ শাসনেও নেই, ভাষনেও নেই/ আঁধারেও নেই, আঁলোতেও নেই/ রেখাতেও নেই, লেখাতেও নেই/ উত্তরেও নেই, প্রশ্নেও নেই / লেবাসেও নেই, সিলেবাসেও নেই/ পারমিটে নেই, বোনাসেও নেই/ হতাশায় নেই, আশাতেও নেই/ এমনকি কালোবাজারেও নেই/ কোথায় গেলেন সত্য? এ এক অনন্য সত্যের অন্বেষণ।
তবে দেরিতে হলেও দূর্নীতির বিরুদ্ধে দৃশ্যত সকলের যেন সম্বিত ফিরিছে। “হিসাব দিতেই হবে সম্পদের” নির্দেশ মহামান্য হাইকোর্টের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ইতোমধ্যে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ সহায় হউন।

লেখকঃ কলামিষ্ট ও সাংবাদিক
(প্রেসক্লাব,শার্শা’র সাবেক সভাপতি, শার্শা,যশোর।)