বিভিন্ন দেশের বিমান ব্যবহার করছে বাংলাদেশের আকাশ; অথচ দিচ্ছে না কোনো রাজস্ব। অনেক ক্ষেত্রে আবার আকাশ ব্যবহারের প্রমাণ পেলেদায় করতে হচ্ছে ম্যানুয়ালি। আধুনিক রাডার না থাকায় স্বাধীনতার পর থেকে এমন বহু ঘটনায় কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে বাংলাদেশ।
যদিও হাত গুটিয়ে বসে নেই পাশের দেশ ভারত। আধুনিক রাডার থাকায় এর পুরো ফায়দা লুটে নিচ্ছে দেশটি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন বলছে, দেশের আকাশসীমার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত এক বছর। দক্ষিণ এশিয়ায় রুট হিসেবে লাভজনক হওয়ায় অনেক এয়ারলাইন্স ব্যবহার করে বাংলাদেশের আকাশপথ শূন্যে ভেসে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাত্রী ও পণ্য নিয়ে যায় বাংলদেশ বিমান। গন্তব্যে পৌঁছতে যেসব দেশের আকাশ ব্যবহার করতে হয়, আন্তর্জাতিক আইন মেনে সর্বনিম্ন ৫০০ ডলার অর্থ পরিশোধ করতে হয় সেসব দেশকে।
তথ্য বলছে, হযরত শাহজালাল র. আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৯৮০ সালে বসানো হয়েছে প্রথম প্রজন্মের একটি রাডার। যেখান থেকে মেলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আকাশসীমার তথ্য। সীমিত ক্ষমতার এ রাডারে চলছে বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচলের আকাশ সুরক্ষা। স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে বিরাট আকাশের বিশাল অংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপত্তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল হক বলেন, রাডারে কোনো ঘাটতি থাকলে সেটি যত দ্রুত সম্ভব কাটিয়ে উঠতে হবে। না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের এভিয়েশন খাত।
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে অবশ্য ৭ বছর আগে একটি রাডার বসানো হয় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে। অথচ সেটি এখনও রয়েছে কমিশনিংয়ের বাইরে অর্থাৎ অকার্যকর। এদিকে, গত অক্টোবরে প্রায় ৭শ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে থ্যালাসের চতুর্থ প্রজন্মের একটি রাডার। এর কমিশনিংও হয়েছে দুটি; মিলছে তথ্যও।
কন্ট্রোল টাওয়ার প্রস্তুতির কাজ শেষ দিকে। এতে যেমন মিলবে সব বাণিজ্যিক বিমানের তথ্য, তেমনি সরাসরি কথা হবে পাইলটের সঙ্গে। অগ্রগতির এ তথ্য সিভিল এভিয়েশনের। বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেন, কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণ শেষ হলে দেশের সব বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কন্ট্রোল রুমে বসেই কোন্ বিমানবন্দরে কোন্ কোন্ উড়োজাহাজ উঠানামা করছে, সেটি তদারকি করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশের আকাশ কোন উড়োজাহাজ ব্যবহার করলে ভাড়া বাবদ ম্যানুয়ালি বিল পাঠায় বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। নতুন রাডার কার্যকর হলে দেশের আকাশ ব্যবহার করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হবে রাজস্ব আদায়। তবে চোখের সামনে হাজার হাজার কোটি টাকা বাতাসে উড়ে গেলেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কেনো এতো ধীরগতি, এর কোন উত্তর নেই সিভিল এভিয়েশনের কাছে।