

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা যত শক্তিশালী হবে, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া ততই সহজ হবে। কিন্তু সীমিত সম্পদ ও জনবল দিয়ে কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই যথাযথ যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আশা করা হচ্ছে,এতে করে সেবা সংস্থার আয় ও নাগরিক সেবা দুটোই বাড়বে।
জানা গেছে, বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন করার কাজ চলছে। এটি হবে দেশের ১৩তম সিটি করপোরেশন। আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে। বগুড়া পৌরসভার রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড বেশ ইতিবাচক। সরকারি রাজস্ব নিয়ে আগেই শর্ত পূরণ করেছে এ পৌরসভা। তাই এটিকে সিটি করপোরেশন করা হচ্ছে। বগুড়া সদরের ১৮টি ওয়ার্ড এবং শাজাহানপুর উপজেলার ৩টি ওয়ার্ডের অংশবিশেষ নিয়ে এই সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এর পরের ধাপে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার সমন্বয়ে সাভার সিটি করপোরেশন এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জকে পৌরসভায় উন্নীতকরণের কাজ চলছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ উপজেলা, কুমিল্লার মুরাদনগরকে বিভক্ত করে ‘বাঙ্গরা’ উপজেলা করা হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য এবং গ্রামীণ মানুষের জীবনকে আরও আরামদায়ক, সুসংগঠিত ও অর্থপূর্ণ করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবাভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বর্তমানে দেশে ১২টি সিটি করপোরেশন, ৪৯৫টি উপজেলা, ৩২৭টি পৌরসভা শহর/ পৌর এলাকা রয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা মো. শাহজাহান মিয়া (অতিরিক্ত সচিব) বলেন, জনসংখ্যা ও এলাকার চাহিদা বিবেচনা করে সেবার মান আরও সহজ করতে উদ্যোগ নিয়ে থাকে সরকার। বর্তমানে সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভার ব্যাপারেও একই রকম কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, জনস্বার্থে গুরুত্ব বিবেচনায় ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়ন যথাÑ বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি ও সুয়াবিল ইউনিয়নের সমন্বয়ে ফটিকছড়ি উত্তর উপজেলা হতে পারে। এ ছাড়া মুরাদনগর উপজেলাকে বিভক্ত করে ‘বাঙ্গরা’ নামে নতুন যে উপজেলা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে মুরাদনগরের ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন যথাÑ শ্রীকাইল, আকুবপুর, আন্দিকোট, পূর্বধইর (পূর্ব), পূর্বধইর (পশ্চিম), বাঙ্গরা (পূর্ব), বাঙ্গরা (পশ্চিম), চাপিতলা, রামচন্দ্রপুর (উত্তর) ও টনকী ইউনিয়নকে যুক্ত করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, মাঠ প্রশাসনের গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সেবা সংস্থা সম্প্রসারণের বিষয়টি বিবেচনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ
বিভাগ থেকে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র এবং জনসংখ্যার চাপে সাভার পৌরসভা কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না। পৌরসভার সীমিত সম্পদ ও জনবল দিয়ে নাগরিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। সাভারের আশুলিয়া ইউনিয়নে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুবিধা, নিরাপদ পানি সরবরাহ কিংবা পরিবেশ সংরক্ষণের মতো নাগরিকসেবা নিশ্চিত করার সক্ষমতা নেই ইউনিয়ন পরিষদের। আশুলিয়ার জনগণ যানজট, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ কারণে সাভার পৌরসভা ও আশুলিয়া মিলিয়ে সাভার সিটি করপোরেশন গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভেড়িবাঁধ-সংলগ্ন বিরুলিয়া ব্রিজের পশ্চিম পাশের এলাকা বিরুলিয়া ইউনিয়নকে সিটি করপোরেশনের আওতায় আনা জরুরি। সত্যিকারের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে সাভার পৌরসভা, বিরুলিয়া ও আশুলিয়া ইউনিয়ন মিলিয়ে সাভার সিটি করপোরেশন করাটাই যৌক্তিক বলে মনে করছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কারণ এসব এলাকায় বহুতল আবসিক ভবন, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বড় বড় স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
অন্যদিকে ঢাকা শহরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং শহরের বিস্তৃতি বৃদ্ধি পাওয়ার মাশুল দিচ্ছে কেরানীগঞ্জ উপজেলা। সেখানে জনসংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। ফলে অপরিকল্পিতভাবেই গড়ে উঠছে ভবনের পর ভবন। পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠান না থাকায় সড়ক, ড্রেনেজ, পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তো বটেই, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাও যথাযথভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীর পাশে একটি আধুনিক ও প্রাণবন্ত উপশহর হিসেবে গড়ে উঠতে পারে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হলে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কেরানীগঞ্জকে ক শ্রেণির পৌরসভা বা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করা যেতে পারে। এমন অভিমত দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিষয়ে শিগগির পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
আপনার মতামত লিখুন :