দেশ বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে জাতীয় স্বার্থে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪, ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ /
দেশ বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে জাতীয় স্বার্থে

আলহাজ¦ মোঃ রবিউল হোসেন

বলা বাহুল্য যে, বেশ কিছুদিন হলো রেডিও বেতার এবং স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকাগুলোতে কোনো লেখা হয়নি । কিন্তু কেনো? কোন কিছু লিখতে চাইলেও কিছুটা আত্মবিশ^াসের অভাবে লিখতে পারেনি। জনৈক বিশিষ্ট এক সুনাম খ্যাত রাজনীতি বিদের রাজনীতি সম্পর্কে কঠিন মন্তব্যের কথা স্মরণে আসার কারণে।

কী সেই মন্তব্য? ১৯৭১ সাল। যখন দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছি এমনই এক যুগসন্ধিক্ষনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের সুনামখ্যাত রাজনীতিবিদ কমরেড মীর মারুফ হোসেন, কলারোয়া উপজেলার ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের খন্দকার নজরুল ইসলাম গোরা সাহেবদের বাড়িতে একরাত অবস্থান শেষে ভারতে গমনের প্রাক্কালে স্থানীয় গ্রামবাসীদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, “রাজনীতিতে ভুল করলে আগুন হয়”। অপেক্ষা করছিলাম রাজনৈতিক ভুলের পরিণতি কী তা দেখতে ও শুনতে।

উল্লেখ্য ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে গত ৫ই আগষ্ট ২০২৪ বা পরবর্তী সময় গুলোতে যে লোমহর্ষ ঘটনা ঘটেছে যেমন- অসংখ্যা শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও পথচারি মানুষের মৃত্যু সর্বোপরি জ¦ালাও পোড়াও অভিযানের তান্ডব লিলা চোখে সবগুলো না দেখলেও খবরের কাগজের খবর পড়ে বাস্তবে এখন বুঝতে পারছি বা দেশের বহু মানুষও নিশ্চই বুঝতে পারছেন।

রাজনীতিতে ভুল করলে সত্যই আগুন হয়। ভুল করেছেন আওয়ামীলীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভুলের পেছনের প্রধান কারণ ২টি। এক দেশে একনায়কতন্ত্র কর্তৃক প্রতিষ্ঠা এবং দুই শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন চলাকালে অসাবধানতা বসত বাংলা ভাষার ভুল শব্দ চয়ন বা প্রয়োগে (রাজাকার)।

মনে রাখা প্রয়োজন শব্দের যথাযথ ব্যবহার বা প্রয়োগে ভুল বা অসঙ্গতি হলে তার পরিণতি হয় ভয়ঙ্কর। হতে পারে ধ্বংসাত্মক বিচিত্র অঘটন। যা কামানদাগার গোলাগুলির ক্ষয়-ক্ষতি অপেক্ষাও মারাত্মক।

এমুহুর্তে দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটকালে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু চিন্তাশীল ধীর গতি সম্পন্ন মানুষদের মন্তব্য তাই ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের পূর্ণস্বাধীনতা অর্জন হয়নি। হিংসাত্মক পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক বিরোধের কারণে অপর পক্ষে রাজনৈতিক মেধার ও দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক সুনেতৃত্বের অভাবেও। দেশের বিগত রাজনৈতিতেও মনে হয়, করুনাময় সর্বশক্তিমান আল্লাহপাকও নারাজ ছিলেন।

যে কারণে দেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অছিলায় একজন সুদক্ষ অরাজনৈতিক অথচ মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব উড়ে এসে জুড়ে নিয়েছেন বিল। তিনি হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের নেতৃত্ব অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। “ভেরি অনেস্ট ম্যান।”

কিন্তু হলে কি হবে দেশের অবস্থা যেন এখনও এমন কে শোনে কার কথা? পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন, শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক হ্যারেজমেন্ট, চাঁদাবাজী, লুটতরাজ, চুরি-ডাকাতি অনেক হয়েছে। আজও কমবেশি হচ্ছে এ কারণে অনেকেরই অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পথে বসেছেন অনেকেই।

এমুহুর্তে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের মনে সংশয় তাই দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী হবে? দেশে কী আবারও প্রতিশোধের রাজনীতি চলমান থাকবে? না বিশ^খ্যাত উদার রাজনীতি বিদদের রাজনৈতিক দুরদর্শিতা কাজে লাগিয়ে দেশের রাজনীতি এগিয়ে চলবে?

বলবার অবকাশ নেই দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বপ্রথমে প্রয়োজন রাজনীতিবিদদের ধৈর্যশীল হওয়ার। এছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। ধৈর্যশীল বলতে কি বুঝায়? উদাহরণ:

প্রথম পৃষ্টায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় এক খবর শিরোনাম করা হয়েছে- “ঐক্যবদ্ধ হতে হবে জাতীয় স্বার্থে।” খবরে উল্লেখ করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামী আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থেই দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন, আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ^াস করি না। রাজনৈতিকভাবে আমাদের ওপরে যারা জুলুম নির্যাতন করেছে আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। তবে কোনো ভিকটিম বা ভিকটিমের পরিবার আইনের আশ্রয় নিলে আমরা তাদের সহযোগীতা করব। দল হিসাবে আমরা কোন প্রতিশোধ নেব না।

বাহঃ খুব সুন্দর মানসিকতা।

জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমানের উপরিউক্ত কথার সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে- আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ “নেলসন ম্যান্ডেলার” রাজনৈতিক মতাদর্শের মধ্যে । নেলসন ম্যান্ডেলার মতে If you want to make peace with your enemy you have to work with your enemy. Then he becomes your partner. (অর্থ্যাৎ যদি তুমি শান্তি স্থাপন করতে চাও তোমার শত্রæর সঙ্গে, তাহলে সেই শত্রæর সঙ্গে মিশে কাজ করতে হবে তবেই পরবর্তীতে সে তোমার সহযোগীতা করবে বা পাটনার হবে।)

শান্তির জন্য কাজ করে যাওয়া একালের বিষয়। শান্তিকামী নোবেল বিজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলা বয়স পান ৯৫ বছর চারমাস ১৭ দিন। জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। ১৯৯৩ সালে তিনি নোবেল শান্তিপুরষ্কার পান। তাঁকে বলা হয় বর্ণবাদ মুক্ত, রঙধনু দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার জনক। দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা কালোসহ সবজাতির দেশ হবে এ ঘোষণা করে রঙধনু দেশ’ নামটি দেন ম্যান্ডেলা। এজন্য তাঁকে ২৭ বছর কারাভোগ করতে হয়েছে।

কিন্তু তারপরও ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সবাই ধরে নিয়েছিল এবার শে^তাঙ্গদের ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হবে।

কিন্তু না ম্যান্ডেলা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন এবং বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিলেন। সাদা-কালো ভেদাভেদ ভুলে দেশ গড়ার কাজে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে অংশ নিতে বললেন। মহৎ মানুষের এমন বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে দক্ষিণ আফ্রিকার ভয়াবহ দাঙ্গার হাত থেকে রক্ষা পেল দেশটি। ম্যান্ডেলার এই জাদুকরী ব্যক্তিত্ববল যা জাতীয় জীবন ছাড়াও বিশ^রাজনীতিতে ও আজীবন প্রভাব ফেলবে বৈকি। মনে রাখার দরকার ম্যান্ডেলার ব্যক্তিত্বই ম্যান্ডেলার চরিত্রবল।

রাজনীতি ছেলে খেলা নয়। রাষ্ট্রনীতি ও স্বাধীনতা প্রবন্ধে লেখক মীর মোশাররফ  হোসেন তাই সত্যই লিখেছেন এই যে রাষ্ট্রনীতি এতই জটিল ও কুটিল যে এর মর্মভেদ করা বড়ই দুরহ। ওগোরাজনীতি তোমার অদৃশ্য শক্তি বোঝা দায়? মানুষ ইতিহাস পড়ে কিন্তু কাজে লাগায় না। হয়তোবা ৫ই আগষ্ট হবে তাই বিশে^র এক নতুন ইতিহাস। দেশের জনসাধারনের মধ্যকার অনেকেরই আশা তাই শান্তিকামী নোবেল বিজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলার যাদুকরী প্রভাব খাটিয়ে আমাদের দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস ও দেশে স্থায়ী শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারেন যদি দেশবাসীসহ দেশের রাজনীতিবিদরাও তাঁর মহৎ উদ্দেশ্য সফল করতে সহযোগীতার হাত বাড়ান বা পার্টনার হন। আল্লাহ সহয় হউন।

আলহাজ¦ মোঃ রবিউল ইসলাম

অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি

প্রেসক্লাব শার্শাযশোর।