ধ্বংসযজ্ঞকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে বললেন প্রধানমন্ত্রী


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২৪, ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ /
ধ্বংসযজ্ঞকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে বললেন প্রধানমন্ত্রী

সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় মেট্রোরেল স্টেশনসহ সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে এমন উল্লখ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি, সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করলো তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে, দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘যেগুলো (প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা) মানুষের সেবা দেয়, মানুষের জীবন যাত্রা সহজ করে, মানুষের জীবনকে উন্নত করে, ঠিক সেগুলো ভেঙে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেওয়া কি ধরনের মানসিকতা !’ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমে এমন কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

মেট্রোরেল স্টেশনে ভাংচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যে ধ্বংসের চিত্র দেখলাম, এটা বিশ্বাস করা যায় না এই দেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু সেই কাজই করেছে।’ তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল নির্মাণ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের আজকে চোখে পানি পড়ছে, এটা (ক্ষয়ক্ষতি) দেখে। যে কিভাবে একটা দানবিক কর্মকাণ্ড এদেশে হলো। কেন করলো?’

মেট্রোরেল স্টেশনে হামলাকারীদের বিচারের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আঘাত করলো, মেট্রোরেল এভাবে ভাংচুর করলো। প্রায় দুই লক্ষ, আড়াই লক্ষ মানুষ চলাচল করতেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে। এদেশের মানুষ কত খুশি ছিল। তাদের সব আনন্দ যারা নষ্ট করলো, আরামে চলা ফেরা করতে পারতো সেই চলাফেরার পথ যারা রুদ্ধ করে দিলো তাদের বিচার এদেশের জনগণকেই করতে হবে। আমি নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মন্ত্রণালয়ের যারা এবং এই মেট্রো রেল নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত প্র্রত্যেকেরই চোখের পানি পড়ছে। এটা দেখে যে কীভাবে এই দানবীয় কর্মকান্ড হলো, আর কীভাবে করলো? শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছি এবং করেছিও। যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কী অবস্থা ছিল? আর আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নে একধাপ উচ্চধাপে উঠে গেছে। সেখান থেকে নামাতে হবে কেন? আমার প্রশ্ন সেটাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। এই অ্যালাইনমেন্টে (মেট্রোরেলের) আমি পরিবর্তন এমনভাবে করে দিয়েছি যাতে দ্রæত সময়ে হয়।

মেট্রো স্টেশন ভাংচুরের ঘটনায় জনগণই ক্ষতিগ্রস্থ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মেট্রোরেলে কি আমি চড়বো। শুধু আমরা সরকার চড়বো? শুধু আমাদের মন্ত্রীরা চড়বে না সাধারণ জনগণ চড়বে? সেটাই আমার প্রশ্ন। এর উপকারিতা কারা পাচ্ছে। এদেশের মানুষ, সাধারণ জনগণ পাচ্ছে। তাহলে এর ওপর এত ক্ষোভ কেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্ষতি কার হলো? আজকে মেট্রোরেল বন্ধ, এই স্টেশন যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল সিস্টেম, ইলেকট্রনিক সিস্টেম, সম্পূর্ণ আধুনিক, এটা কত দিনে ঠিক হবে আমি জানি না। কিন্তু কষ্ট পাবে তো মানুষ, দেশের মানুষ কষ্ট পাবে, এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। দীর্ঘ সময় বসে ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া। আপনাদের কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম। আমি আপনাদেরকেই বলবো, যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি, সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করলো তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে, দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, এর বিচার করতে হবে। আমি তাদের (জনগণ) কাছেই বিচার চাই। ’

বিগত বছরগুলোতে সরকারের নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো দেশের মানুষের জীবন মান উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছি, করেছি তো, কেউ তো অস্বীকার করতে পারবে না। ১৫ বছর আগে ২০০৮ পর্যন্ত এদেশের কি অবস্থা ছিল। একবার চিন্তা করে দেখেন। আজকে বাংলাদেশ উচ্চ ধাপে উঠে গেছে। তো সেখান থেকে নামাতে হবে। কেন? আমার প্রশ্ন সেটাই। জানি না এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে আমি যেভাবে দেশটাকে গড়ে তুলেছি। কি না করেছি মানুষের জন্য, খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, যোগাযোগের ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, পুল-ব্র্রিজ, সব ক্ষেত্রে আমাদের যে কাজ তাতে কারা লাভবান? দেশের জনগণ।’

কোটা আন্দোলনের সুযোগেই ধ্বংসযজ্ঞের পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে এমন উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আমরা বার বার অনুরোধ করা সত্তে¡ও আন্দোলন, কোটা বিরোধী আন্দোলন। উচ্চ আদালত রায় দিলো। আমরা বার বার কথা বলেছি, বোঝাতে চেষ্টা করেছি। এর পরও আন্দোলন করতে হবে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমে এক দফা কোটা সংস্কার করতে হবে। কোটা বাতিলও করে দিয়েছিলাম। আচ্ছা কোটা সংস্কার হবে। আপিল করলাম। উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। সে পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে হবে। যে কোন নাগরিককে তো আইন আদালত মেনেই চলতে হবে। সেটা না, ঐ এক দফার পরে আসলো ৪ দফা, তারপর আসলো ৬ দফা, তারপর আসলো ৮ দফা, তার পর আবার ৪ দফা। আবার ৪ দফাও হবে না। আরও ৮ দফা। এই ভাবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি। আর সেই সাথে সাথে এই ধ্বংসযজ্ঞ। মানে ধ্বংসযজ্ঞের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।’

তিনি বলেন, ‘আমি কোটা আন্দোরনকারি থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এটাতো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ্বাস দিয়ে তাদেরকে বললাম বিরত থাকতে। একটুতো ধৈর্য ধরতে হবে। যে কোন নাগরিককেইতো আইন আদালত মেনে চলতে হবে। আর এই এর সুযোগ নিয়ে সেই ১৭ জুলাই থেকে যেভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ভাংচুরে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন। তিনি ব্যাপক ভাংচুরের শিকার মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনের ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। এ সময় ক্ষয়ক্ষতি দেখে তাকে আবেগাপ্লæত হতে দেখা যায়। পরিদর্শনকালে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতি এবং এ দুটো স্টেশন পুনরায় চালুর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।