খুলনা সংবাদদাতাঃ শিউলী বেগম (৫০) নামে এক গৃহবধূ খুলনায় নিজের ভাড়া বাড়িতে হত্যার শিকার হয়েছেন। পুলিশের ধারণা তাকে প্রথমে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে দুর্বল ও পরে বালিশ চাপা নিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর ট্যাংক রোডের রবিউল ইসলামের বাড়ি থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত গৃহবধূ প্রথম স্বামীর নাম মো. সালাউদ্দিন খান। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার বর্তমান স্বামী বাস ড্রাইভার মো. সাগর। গৃহবধু শিউলী বেগম তার প্রথম পক্ষের ছেলে রিয়াদ হোসেন খানকে নিয়ে ভাড়াবাসায় থাকতেন। শিউলী বেগমের প্রথম পক্ষের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
নিহতের বড় মেয়ে কেয়ার অভিযোগে জানাযায়, তার মা শিউলী বেগম তার ছেলে রিয়াদ হোসেনের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি ব্যাংক থেকে তোলা ওই নারীর ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার হদিস মিলছে না। রিয়াদ পেশায় একজন টাইলস মিস্ত্রী। গত মঙ্গলবার কাজ করে এসে তার পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা তার মায়ের কাছে এনে দেয়। সুত্রের দাবি এটা ছিল তার একটি ছলনা। মায়ের মন জয় করতে এ কাজ করেছে। সে সুকৌশলে এবং ঠান্ডা মাথায় তার সৎ মাকে হত্যা করে টাকা গুলো নিয়ে সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটের সময় একটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে যায় যাতে সহজে কেউ জানতে না পারে।
খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) শাহজাহান আহম্মেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শিউলীর মেঝ মেয়ে কেয়া খাতুন জানান, মাত্র একদিন আগে (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় তিনি মায়ের বাসায় রাতের খাবার খেয়ে নিজের বাসায় যান। বুধবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে তার সৎ বাবা মো: সাগর তাকে ফোন দিয়ে মাকে একাধিক বার মোবাইলে ফোন দিয়েও পাচ্ছেন না বলে জানান। এক পর্যায়ে কেয়া মায়ের বাসায় এসে ঘর তালাবদ্ধ দেখে ফিরে যান।
পরে আবার তার সৎ বাবা তাকে ফোন দেন। কেয়া বিকালে মায়ের খোঁজে ডুমুরিয়ায় নানা বাড়িতে যান। সেখানে না পেয়ে তার স্বামীকে নিয়ে ফের মায়ের বাসায় আসেন। তারা ডাকাডাকি করে মায়ের সাড়া না পেয়ে বাড়ির মালিককে বিষয়টি জানান। বাড়ির মালিক সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন ৭টা ৫০মিনিটের দিকে রিয়াদ হোসেন ঘরে তালা দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। পরে বিষয়টি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশকে জানানো হয়। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে আসেন।
কেয়া বলেন, ‘ছাড়াছাড়ির পর মা-বাবা দুজনেই বিয়ে করেছেন। আমরা দুই বোন ও একভাই। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাই মায়ের সঙ্গে থাকতো। ভাই-ই মাকে হত্যা করেছে। মা ৫-৬দিন আগে ব্যাংক থেকে ৬ লাখ ৭৫ হাজার তুলে ছিলেন। কিন্তু সেই টাকাও নেই, ভাইও নেই। বাবার (সৎপিতা) চাচা মারা যাওয়ায় তিনি গ্রামে গেছেন। মা একা ছিলেন। আর মারলে তো ও (রিয়াদ) এখানে থাকতো।
নিহতের স্বজনরা জানান, সৌদি ফেরত শিউলী বেগম ১০ দিন আগে ট্যাংক রোডে দুই কক্ষ বিশিষ্ট রবিউল ইসলামের বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেয়। একটি কক্ষে থাকতেন শিউলী বেগম দম্পত্তি। অন্য ঘরের ফ্লোরে থাকত তার প্রথম পক্ষের ছেলে রিয়াদ। রিয়াদ পেশায় একজন টাইলস মিস্ত্রী। ওই কাজে কষ্ট হয় জেনে ট্যাংক রোডের মাথায় একটি দোকান করে দেন শিউলী বেগম। একমাস ১০দিন আগে তিনি মো. সাগরকে বিয়ে করেন। গত ৬/৭ দিন পূর্বে নিহত ওই নারী ব্যাংক থেকে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা তুলে বাড়িতে নিয়ে আসেন। যেটি তার পরিবারের সকলে জানতো।
খুলনা সদর থানার ওসি তদন্ত শাহজাহান আহম্মেদ বলেন, পুুলিশ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শিউলী বেগমের মৃত্যুর পর থেকে তার একমাত্র ছেলে রিয়াদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা মেট্ট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার শিহাব করীম জানান, পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সিআইডি বিশেষজ্ঞ দল রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ঘর থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। তার মাথার তালুর বাম পাশে পুতো দিয়ে আঘাত করে দুর্বল করে ফেলে। পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিতের জন্য বালিশ দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে হত্যাকারী কে নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলা যাবে না।