নবীন-প্রবীণে অনন্য, উজ্জীবিত তৃণমূ্‌ল তারেক রহমানের প্রার্থী মনোনয়ন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:১৪ অপরাহ্ণ /
নবীন-প্রবীণে অনন্য, উজ্জীবিত তৃণমূ্‌ল তারেক রহমানের প্রার্থী মনোনয়ন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এবার প্রার্থী মনোনয়নে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রার্থী তালিকায় নবীন ও প্রবীণের সমন্বয় যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে এবারের প্রার্থী মনোনয়ন দলটির বর্তমান নেতৃত্বকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পরিচালিত এই মনোনয়ন দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে বড় ধরনের সংস্কারের ইঙ্গিতও বহন করছে।

দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াটি এবার কয়েকটি সুসংগঠিত স্তরে পরিচালিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই করা হয়েছে পাঁচ স্তরের সতর্ক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক অবস্থান, নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের কাছে তার জনপ্রিয়তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে তার সক্রিয় অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রত্যেক প্রার্থীর বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সামনে উপস্থাপন করেছেন। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য দলের পক্ষ থেকে পাঁচটি ভিন্ন ধরনের জরিপ চালানো হয়েছে। এই জরিপগুলো আন্তর্জাতিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়েছে এবং প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে ভোটারদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা হয়েছে।

জরিপের তথ্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, যেখানে প্রতিটি প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে জনমত অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
জরিপের পাশাপাশি তারেক রহমান সরাসরি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা, নির্বাচনী এলাকার ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিস্থিতি, ভোটারদের কাছে তার জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ভূমিকা এবং দলের প্রতি তার ত্যাগের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য ছিল প্রার্থী বাছাইকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, বিজ্ঞানভিত্তিক এবং দলের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা।

এদিকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রার্থী তালিকায় নবীন ও প্রবীণ নেতাদের সমন্বয় প্রমাণ করে যে, দল কেবল রাজনৈতিক দাপট বা প্রভাব নয়, বরং যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। তারা বলছেন, তিন-চারটি আসন ছাড়া বাকি তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তেমন নেই বললেই চলে, যা দলের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।

নেতাকর্মীরাও বেশ উজ্জীবিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে প্রচারণা শুরু করেছেন। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন এবং নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দু-তিনটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রার্থী ঘোষণার পর বড় কোনো বিতর্ক বা অসন্তোষ দেখা যায়নি, যা তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি দলের আস্থার প্রতিফলন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

এবার ৫ স্তরের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ সম্ভাব্য প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা। এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তারেক রহমান ছিলেন অত্যন্ত কঠোর ভূমিকায়। ঘোষিত প্রার্থী তালিকা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, এবারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে দলীয় নিয়ম, প্রার্থীর ব্যক্তিগত যোগ্যতা, নির্বাচনী এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা এবং রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে তার আত্মত্যাগমূলক অবদানের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। অতীতে দলের অভ্যন্তরে বিভিন্ন মহলের তদবির বা পারিবারিক প্রভাবের যে অভিযোগ উঠত, তারেক রহমানের কঠোর অবস্থানের কারণে এবার তার কোনো অবকাশ রাখা হয়নি। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী ৬৩টি আসন এখনও ফাঁকা রাখা হয়েছে। এসব ফাঁকা আসন কৌশলগত কারণে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মিত্র দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা এবং সামগ্রিক নির্বাচনী কৌশল অনুযায়ী পরবর্তীতে এসব আসনের প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। এই ফাঁকা আসনগুলো ভবিষ্যৎ দর কষাকষির জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১৫টি আসনের মধ্যে নয়টিতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। অবশিষ্ট ছয়টি আসনের মধ্যে ঢাকা-১৩ ও ঢাকা-১৭ উল্লেখযোগ্য। এই আসনগুলোতে এনডিএম (জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন), জাতীয় পার্টি, এলডিপি (লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি), গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য এবং গণঅধিকার পরিষদ প্রার্থী দিতে পারে বলেও জানা যায়।
আসন নিয়ে আলোচনা চলছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সঙ্গেও। দলটি অন্তত ২০টি আসনে বিএনপির সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করতে আগ্রহী বলে রাজনৈতিক মহলে খবর পাওয়া গেছে। দলটি অনানুষ্ঠানিকভাবে এমনই আলোচনা চালাচ্ছে, পাশাপাশি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নিরাপত্তার বিষয়েও আগ্রহী। জানা গেছে, এনসিপির নেতারা চাইছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভায় তাদের অন্তত তিনজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

এনসিপির সঙ্গে চলমান এই আলোচনাগুলো এখনো আনুষ্ঠানিক নয়। কার সঙ্গে জোট হবে বা কোন আসনে সমঝোতা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে আলোচনা অনুযায়ী, ঢাকার চারটি আসনসহ মোট অন্তত ২০টি আসনে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা চায় এনসিপি। এই আসনগুলোর মধ্যে অনেক স্থানে বিএনপি ইতোমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তবে প্রাথমিক সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী প্রত্যাহারের সম্ভাবনাও রয়েছে, যা চূড়ান্ত জোটের রূপরেখা নির্ধারণ করবে। বিএনপি সূত্র জানায়, আসন ভাগাভাগি ছাড়াও তারা চাইছে, এনসিপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো নির্বাচনী সমঝোতায় না যায়, যা জোটের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন নির্দেশ করে। যদিও এনসিপি ২০টি আসনের দাবি তুলেছে, বিএনপি এখন পর্যন্ত তাদের জন্য ৮টি আসন ছাড়ার কথা বলছে।

শরিকদের মধ্যে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করা হলেও ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ইতোমধ্যেই বিএনপির ‘গ্রিন সিগনাল’ নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন, যা একটি অনানুষ্ঠানিক সমঝোতার ইঙ্গিত। অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলনের হয়ে প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। বগুড়া-২, পিরোজপুর-১, লক্ষ্মীপুর-১, কিশোরগঞ্জ-৫ ও ঝালকাঠি-১ আসনেও মিত্র দলের প্রার্থীদের সম্ভাবনা রয়েছে।