নানা গুণে ভরপুর ভেষজ উদ্ভিদ আকন্দ হারিয়ে যাচ্ছে তাই সংরক্ষণের দাবি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ২৫, ২০২৪, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ /
নানা গুণে ভরপুর ভেষজ উদ্ভিদ আকন্দ হারিয়ে যাচ্ছে তাই সংরক্ষণের দাবি

আদিকাল থেকেই মানবদেহের নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসা ভেষজ উদ্ভিদ আকন্দ। একসময় গ্রামীণ সড়কের পাশে ও বাড়ির আঙিনায় এই উদ্ভিদটি সচরাচর দেখা গেলেও এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না।

এতে করে আগামী প্রজন্ম প্রাকৃতিক সম্পদ এই ঔষধ থেকে বঞ্চিত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তারা মনে করছেন আধুনিক চিকিৎসার উৎকর্ষ এবং রোগীরা দ্রæত সুস্থতা পেতে এলোপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি ঝোঁকার কারণে ঔষধি উদ্ভিদ প্রকৃতি থেকে হারাতে বসেছে।
আকন্দ এক প্রকারের ঔষধি গাছ। এটি একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ঈধষড়ঃৎড়ঢ়রং মরমধহঃবধ। গাছটির বিষাক্ত অংশ হলো পাতা ও এতে থাকা কষ। এর কষ রেচক, গর্ভপাতক। তবে এই গাছটির রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। এটি অঞ্চলভেদে নানা নামে পরিচিত। এই জনপদের মানুষ এটিকে আক্কন গাছ নামেই চেনে।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র ও ইউনানি চিকিৎসকদের তথ্যমতে, ঔষধি আকন্দ ব্যথনাশক ও বিষনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদ্দীপক, পাকস্থলীর ব্যথা, বায়ুনাশক, হজমকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও প্লীহা, দাদ, অর্শ, কৃমির সমস্যায় ও শ্বাস কষ্টের জন্য খুবই উপকারী ভেষজ ঔষধ। এই উদ্ভিদটির ফুল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে বলে মনে করা হয়।

আকন্দ পাতা মুখের ব্রণ সমস্যায় ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। পোকামাকড়ের কামড়ে সৃষ্ট জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। শরীরের ক্ষতস্থানে এর পাতা পানিতে সেদ্ধ করে ওই পামি নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করলে ক্ষতস্থান ভালো হয়ে যায়। সর্দি বসে গেলে পুরনো ঘি ভালো করে বুকে মেখে তার ওপর এর পাতা দিয়ে ছেঁক দিলে উপশম মেলে। খোসপাঁচড়া বা একজিমার ক্ষেত্রে আকন্দের কষের চার গুণ সমপরিমাণ সরিষার তেল মিশিয়ে কুসুম গরম করে খোসপাঁচড়া বা একজিমায় লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও বাত-ব্যথায় এই গাছের পাতা গরম করে ছেঁক দিলে উপশম মেলে। পা মচকে যাওয়া ব্যথায় এই গাছের পাতা দিয়ে গরম ছেঁক দিলে ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল অদুদ ইনকিলাবকে বলেন, একসময় এই এলাকার সড়কের পাশে প্রচুর পরিমাণে আক্কন ( আকন্দ) গাছ দেখতে পাওয়া যেত। এখন অবশ্য এই গাছ খুব বেশি একটা দেখা যায় না। আমাদের মায়েরা দেখতাম বাতের ব্যথায় এই গাছের পাতার ছেঁক নিতেন, এতে ব্যথা কমে যেত।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ছেলেবেলায় দেখেছি আক্কন (আকন্দ) গাছের পাতা দিয়ে মুরব্বিরা নানা রোগে চিকিৎসা নিতেন। সেসময় এই গাছগুলো সচরাচর দেখা যেত। তবে ইদানীং এই গাছ খুব একটা দেখা যায় না। দিন দিন মানুষ আধুনিক এলোপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি ঝোঁকার কারণে এই ধরনের ঔষধি গাছগুলো দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারাতে বসেছে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা বলেন, আকন্দ একটি উপকারী ঔষধি গাছ। এটি ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ উদ্ভিদ। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেষজ বাগানে এই গাছটি সংরক্ষিত আছে। তবে আগের মতো এই ঔষধি গাছটি এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদগুলোকে পরিবেশে টিকিয়ে রাখা। এতে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাবে এবং মানবদেহের নানা রোগ নিরাময়ে কাজে আসবে।