নাম রাখার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ /
নাম রাখার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা

কোনো মানুষের পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক মাধ্যম হচ্ছে তার নাম। এজন্য ইসলামে নাম রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে উম্মতকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। ভালো নাম চিহ্নিত করার পাশাপাশি মন্দ ও অসুন্দর নাম রাখা থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক করেছেন এবং অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে ভালো নাম রাখার মাধ্যমে বাস্তব জীবনে এর আমলি নমুনা পেশ করেছেন। নাম শুধু পরিচয়েরই বাহন নয়; বরং ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা ও রুচি-অভিরুচিরও আয়না স্বরূপ।

সুন্দর নাম মন-মানসিকতার উপর প্রভাব ফেলে এবং মন্দ নামেরও কিছু না কিছু প্রভাব ব্যক্তির উপর থাকে। একটু কল্পনা করুন এক ব্যক্তির নাম হচ্ছে কালু। উচ্চশিক্ষা লাভ করে সে বড় ডাক্তার বা প্রফেসর হয়ে গেলেন। এখন তাকে ডাকা হচ্ছে ডাক্তার কালু বা প্রফেসর কালু বলে। তাহলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে? তার নাম ও পদের মধ্যে কি কোনো সামঞ্জস্য থাকবে? এ ধরনের নাম দ্বারা ব্যক্তিত্বের মানহানি হয়। পাশাপাশি ব্যক্তির ধর্ম ও জাতীয় পরিচয়ও থাকে অস্পষ্ট।

তাই ঘরের ফুলবাগানে যখন কোনো শিশু কলি হয়ে আসবে তখন সতর্কতার সাথেই তার নাম নির্বাচন করা উচিত। যেন নামটি হয় ইসলামী, সুন্দর ও ভাবগম্ভীর। ভালো নাম রাখা পিতা-মাতার সর্বপ্রথম দায়িত্ব। আমরা এভাবেও বলতে পারি যে, পিতা-মাতার উপর সন্তানের সর্বপ্রথম হক হচ্ছে, তার জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন : সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার উপর সন্তানের হক। (মুসনাদে বাযযার (আলবাহরুয যাখখার) : ৮৫৪০)

মানসিকতা ও স্বভাবের উপরও নামের একটা প্রভাব থাকে। আবদুল হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়িবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার দাদা ‘হাযান’ একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার নাম হাযান। (হাযান অর্থ শক্তভূমি) নবীজী বললেন না, তুমি হচ্ছ ‘সাহল’ (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম জমিন) দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না। সাইদ ইবনুল মুসায়িব বলেন, এর ফল এই হল যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেজাজে রূঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল। (সহিহ বুখারি- ৬১৯৩)

কারো নাম অসুন্দর হলে নবীজী (সা.) তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখতেন। হাদিস শরিফে এ ধরনের অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে। মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আতা বলেন, আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম বাররা (নেককার, ভালো মানুষ)। তখন জয়নব বিনতে আবি সালামা বললেন : আমার নাম ছিল, বাররা।

নবীজী (সা.) বললেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের পবিত্রতা ঘোষণা কোরো না। (কারণ, বাররা অর্থ, ভালো, নেককার, পূত-পবিত্র) আল্লাহই জানেন তোমাদের মধ্যে ভালো ও পূত-পবিত্র কারা। জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আমরা তার কী নাম রাখতে পারি? তখন নবীজী বললেন, তার নাম জয়নাব রাখো। (নবীজীর আদেশে তখন বাররা নাম পরিবর্তন করে তার নাম জয়নাব রাখা হলো)। (সহিহ মুসলিম-২১৪২)।

জয়নাব হচ্ছে উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা রা.-এর মেয়ে। আবু সালামার ইন্তেকালের পর উম্মে সালামা রা. নবীজীর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ জন্য উম্মে সালামা রা.-এর সন্তানরা নবীজীর কাছে থেকে তারবিয়াত লাভের সৌভাগ্যে ধন্য হন। জয়নাব রা. ছিলেন অনেক বুদ্ধিমান এবং নেককার নারী। হাদিসের কিতাবে তার থেকে অনেক রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। জয়নাবের পাশাপাশি তার ভাই ওমর ইবনে আবি সালামাও নবীজীর তারবিয়াত লাভে ধন্য হন।

জয়নাব বিনতে আবি সালামার মতো উম্মুল মুমিনিন হযরত জুওয়াইরিয়া রা.-এর নামও ছিল বাররা। এ নাম পরিবর্তন করে নবীজী তার নাম রাখেন জুওয়াইরিয়া। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, জুওয়াইরিয়া রা.-এর নাম ছিল বাররা। নবীজী তার নাম পরিবর্তন করে জুওয়াইরিয়া রাখেন (জুওয়াইরিয়া অর্থ ছোট্ট বালিকা)। কেউ যদি বলত ‘বাররা এর কাছ থেকে বের হয়েছে’ তাহলে নবীজী (সা.) এটা অপছন্দ করতেন। (সহিহ মুসলিম-২১৪০)

এ রেওয়ায়েতে নাম পরিবর্তন করার অন্য একটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তা হল, ‘বাররা-এর কাছ থেকে এ বের হয়ে এসেছে’- নবীজী এ বাক্যটিকে নেকফালির বিপরীতে মনে করতেন। কারণ, বাররা অর্থ নেক, ভালো। সুতরাং বাররা (নেক)-এর কাছ থেকে বের হওয়া কেমন যেন ভালো কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার নামান্তর। তাই এমন নাম রাখা উচিত নয়, যার কারণে এরূপ নেতিবাচক বাক্য ব্যবহার করতে হয়। নেকফালির (শুভ লক্ষণ গ্রহণের) সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার দরুন অন্য আরো কিছু নামও নবীজী (সা.) অপছন্দ করেছেন।