নির্বাচনের আগেই পাকিস্তান-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তির আগ্রহী-দাবি ইন্ডিয়া টুডের  


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫, ১০:২৪ অপরাহ্ণ /
নির্বাচনের আগেই পাকিস্তান-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তির আগ্রহী-দাবি ইন্ডিয়া টুডের  

আগামী নির্বাচনের আগেই ভারতের দিকে নজর রেখে সৌদি আরবের ন্যায় ‘ন্যাটো স্টাইলে’ পাকিস্তান-বাংলাদেশ একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে- এমন গুঞ্জন তীব্র হয়েছে বলে দাবি করেছে ইন্ডিয়া টুডে।

ভারতীয় গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইএসআই প্রধান সহ পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা ঘন ঘন বাংলাদেশ সফর করছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুকূল সরকারের অধীনে নির্বাচনের আগেই পাকিস্তান এই প্রতিরক্ষা চুক্তিটি স্বাক্ষর করতে আগ্রহী।

প্রতিবেদনা বলা হয়, “বিগত কয়েক মাসে পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা একের পর এক ঢাকা সফর করেছেন। পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান এবং নৌবাহিনী প্রধান থেকে শুরু করে আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক—সবাই এখন ঢাকার দিকে ঝুঁকছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে দিল্লির প্রভাব থেকে সরিয়ে ইসলামাবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এই তৎপরতা কারণহীন নয়। ভারতের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এখন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা ভাবছে, যা অনেকটা সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের করা চুক্তির মতো হতে পারে।”

গত সেপ্টেম্বরে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে একটি কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করে সৌদি আরব। তবে যে বিষয়টি সবার নজর কেড়েছে তা হলো এর ভাষা— “যেকোনো একটি দেশের ওপর আক্রমণ উভয় দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে।” পাকিস্তানে এই চুক্তিটিকে ভারতের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা হচ্ছে। মে মাসে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় ভারত যে চাপ তৈরি করেছিল, তার প্রেক্ষিতে ইসলামাবাদ অনেকটা আত্মরক্ষার পথ খুঁজছিল।

পাক-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন রসায়ন

“গুঞ্জন উঠেছে, পাকিস্তান এখন তাদের নতুন মিত্র বাংলাদেশের সাথে একই ধরনের ‘ন্যাটো-স্টাইল’ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে চাচ্ছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এটিই হবে এ ধরনের প্রথম কোনো ব্যবস্থা। অথচ এটি একটি ঐতিহাসিক পরিহাস যে, সেই একই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল।”

ইন্ডিয়া টুডে বলছে, প্রস্তাবিত এই চুক্তি নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তাই পাকিস্তান চাইছে বর্তমান ইউনূস সরকারের অধীনেই এই চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন করতে।

“বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, দুই দেশ ইতিমধ্যেই প্রস্তাবিত চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য একটি যৌথ মেকানিজম বা ব্যবস্থা গঠন করেছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে তা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় এবং এমনকি সামরিক মহড়া আয়োজনের পথ প্রশস্ত করবে”, দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।

আরো বলা হয়, তবে এই চুক্তিতে পারমাণবিক সহযোগিতার কোনো বিষয় থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। যদি তা অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে তা নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য একটি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সৌদি আরবের সাথে চুক্তির ক্ষেত্রে পাকিস্তান দাবি করেছিল যে তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা রিয়াদের প্রয়োজনে পাওয়া যাবে, যদিও রিয়াদ এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি।

নির্বাচনের আগেই চুক্তি চায় পাকিস্তান

ইন্ডিয়া টুডে বলছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং শরীফ উসমান হাদির হত্যার পর সৃষ্ট ভারত-বিরোধী মনোভাব পাকিস্তানকে এই প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য একটি শক্ত ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে।

মঙ্গলবার পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সামরিক জোটের দাবি জানিয়েছেন, যা এই জল্পনাকে আরও জোরালো করেছে। পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতা কামরান সাইদ উসমানি বলেন, “যদি ভারত বাংলাদেশে আক্রমণ করে, তবে পাকিস্তান পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঢাকার পাশে দাঁড়াবে… যারা বন্দর ও সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ করে, তারাই বিশ্ব শাসন করে।” তিনি যুক্তি দেন যে, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সামরিক অংশীদারিত্ব এই অঞ্চলের শক্তির ভারসাম্য উল্লেখযোগ্যভাবে বদলে দেবে।

ভারত এখনও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, তবে আইএএনএস-এর মতে কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। যদি এমন কোনো চুক্তি আসলেই স্বাক্ষরিত হয়, তবে তা ভারতের পূর্ব সীমান্তে একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে—বিশেষ করে যদি এতে পারমাণবিক সহযোগিতার কোনো দিক থাকে।