মাসুম খলিলী
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আগামী নির্বাচনের সময় সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। সে অনুসারে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচন কমিশনও এরই মধ্যে জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার দেয়া সূচি অনুসারে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বিভিন্ন সদস্য ও সেনাপ্রধান রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে যে সময়ে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় তার বাইরে নয়। যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচনের সময় সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে চূড়ান্ত হিসেবে ধরতে হবে।
সেনাপ্রধান যে সময়ে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলেছিলেন, সে সময় থেকে দেড় বছর মানে ’২৬-এর প্রথমার্ধই হয়। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ২০২৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। নৌ ও বস্ত্র উপদেষ্টা জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন ২০২৬-এর জুনে নির্বাচনের কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে যে সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে একটি ধারণা প্রচারিত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা তার বাইরে নয়।
তবে যে সময়ে এসে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা দিলেন সেটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধান ছয়টি বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই তাদের সুপারিশ জমা দেবে। সবক’টি কমিশনই তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করে এনেছে। ফলে বাড়তি সময় নেয়ার সম্ভাবনা এক রকম নেই বললেই চলে। তবে যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের সাথে কমবেশি সাংবিধানিক সংস্কার জড়িত সেগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন সাংবিধানিক সংস্কারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে চূড়ান্ত সংস্কারের জন্য সব কমিশনের প্রধানদের নিয়ে যে ঐক্য কমিশন গঠন করা হয়েছে সেটি বাস্তবসম্মত কারণেই নেয়া হয়েছে।
সংবিধান যেহেতু সব সংস্কারের জন্য এখন কেন্দ্রীয় বিষয় তাই এই কমিশনের প্রধান প্রফেসর আলী রীয়াজকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ঐক্য কমিশনের সমন্বয়কারী করা হয়েছে। এই কমিশনের সুপারিশটা হয়তো পর্যালোচনা করে ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হবে। আর তা বাস্তবায়ন করা হবে নির্বাচনের আগে। সংস্কারের মোটামুটি বাস্তবায়ন করে নির্বাচনে যেতে চাইলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব আর কিছু তাৎপর্যপূর্ণ সংস্কার শেষ করে নির্বাচনে যেতে চাইলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সেটি সম্ভব হতে পারে।
সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সাথে আলাপ করে যতটা জানা যায়, তাতে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান নতুন করে লেখা অথবা বিদ্যমান সংবিধানে বড় ধরনের সংশোধনী আনার প্রয়োজন হবে। জানা যায়, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান এক সময় নতুন করে সংবিধান লেখার কথা বললেও সেটি স্বল্প সময়ে করা কঠিন। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি সময়সাপেক্ষ কোনো সংস্কারের পক্ষে নয় এখন। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার মতো কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। অন্যদিকে ছাত্র সমন্বয়করা এবং আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল বলছে, শুধু ক্ষমতায় দলের পরিবর্তন আনার জন্য সংস্কার কাক্সিক্ষত নয়, এ জন্য ছাত্ররা রক্ত দেয়নি।
এ ধরনের টানাপড়েনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মাঝামাঝি একটি পথ নেবে বলে ধারণা করা যায়। এই পথ হতে পারে নির্বাচন, সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের কিছু মৌলিক বিধান সংবিধানে সন্নিবেশ করার মতো শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন আনা। এই পরিবর্তন আনার সাংবিধানিক ব্যবস্থা যেহেতু এখন নেই তাই সংস্কারের প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত করে ঐকমত্যের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সভা ডাকা হতে পারে। এরপর যারাই ক্ষমতায় আসীন হোক না কেন, এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাদের পূর্ব অঙ্গীকার গ্রহণ করা হতে পারে। আর সংবিধানের মৌলিক সংশোধনী বাস্তবায়নের ব্যাপারে গণভোটের যে বিধান ছিল, সেটি অনুসরণ করে এসব সংস্কারের পক্ষে গণভোট নেয়া হলে এটি বাস্তবায়নের বিষয়ে পরবর্তী সরকারের জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে।
কী সংস্কার আসতে পারে
ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এ কলাম লেখার সময় সংস্কারের বিষয়ে কিছু মৌলিক ধারণা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রথমত, সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে চার বছর করা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের মেয়াদ চার বছর রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই এক বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠা। নিম্নকক্ষের বর্তমান আসন সাড়ে ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ করা এবং এর মধ্যে ৩০০ আসনে প্রচলিত ব্রিটিশ পদ্ধতিতে নির্বাচন করা। বাকি ১০০ আসন আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে অথবা পরোক্ষভাবে এমপিদের ভোটে নির্বাচন করা। এই ১০০ আসনের মধ্যে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের পাশাপাশি অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য ১০ ভাগ আসন সংরক্ষণ করা। এ ক্ষেত্রে বিকল্প প্রস্তাব হলো এই ১০০ আসনেও সরাসরি ভোটে নির্বাচন করা। তবে এই আসনগুলোতে সংরক্ষিতরাই শুধু প্রার্থী হতে পারবেন মর্মে বিধান করা।
তৃতীয়ত, উচ্চকক্ষের সদস্যরা দলভিত্তিক আনুপাতিক ভোটে নির্বাচিত হবার বিধান করা। সেখানে যে দল যত ভোট পাবেন সে ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে আসন সংরক্ষিত থাকবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের সময় দু’টি ব্যালট থাকবে- একটি এমপি নির্বাচনের ব্যালট, আরেকটি থাকবে দলকে নির্বাচনের ব্যালট। এর বিকল্প হিসেবে দলের প্রার্থীরা যে পরিমাণ ভোট পাবেন সেটির ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে আসনবিন্যাসের প্রস্তাবও রয়েছে।
চতুর্থত, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে করা। এ ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন অথবা প্রতীকে নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকবে না। প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে একই সাথে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের একটি প্রস্তাবও রয়েছে। নির্বাচনে ভোট ডাকাতি রোধের যুক্তি দেখানো হয়েছে তাতে।
পঞ্চমত, বিচার বিভাগীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা, যাতে সুপ্রিম কোর্টকে নিম্ন আদালতে তদারকির কাজে সরকারের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। মাজদার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে। এর বাইরে কমিশনে আইন কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য আলাদা সার্ভিসের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ষষ্ঠত, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে কিছু সংস্কারের বিষয় বিবেচনা করা। এখন শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া প্রেসিডেন্টের হাতে কার্যকর কোনো ক্ষমতা নেই। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ও এখতিয়ারের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকেও ন্যস্ত করার একটি প্রস্তাব রয়েছে। এক্ষেত্রে সংসদের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অথবা প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দুই ধরনের প্রস্তাবই বিবেচনায় রয়েছে।
সপ্তমত, জনপ্রশাসনের শীর্ষ স্তরে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র প্রবেশপদের জ্যেষ্ঠতাকে একমাত্র মানদণ্ড না করে এর সাথে মেধা ও দক্ষতা নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট কিছু বিধানের চিন্তা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পিএসসি বা এনডিসি অথবা ব্যাংক খাতের ডিপ্লোমার মতো পরীক্ষার বিষয় প্রবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে চাকরির জ্যেষ্ঠতাকে সমন্বয় করে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য একটি তালিকা করা হবে। সিনিয়র সার্ভিস পুল গঠনের মতো বিষয় আগেও বিবেচনা করা হয়েছিল, কিন্তু পরে বাস্তবায়ন হয়নি।
একটি বড় প্রশ্ন
সরকারের সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো ঐক্য কমিশন চূড়ান্ত করার পর প্রধান কোনো রাজনৈতিক দল এর সাথে দ্বিমত পোষণ করলে কোনো অচলাবস্থা তৈরি হবে কিনা সে প্রশ্নটি বড়ভাবে দেখা দিতে পারে। প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে পদত্যাগের ব্যাপারে ছাত্রদের দাবির সাথে অন্তর্বর্তী সরকার একমত হওয়ার পরও বিএনপির বিরোধিতার কারণে সেটি কার্যকর হয়নি। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর জাতীয় সরকার গঠনের একটি প্রস্তাবে বিএনপি সম্মত না হওয়ায় সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। বিবেচ্য সুপারিশের ক্ষেত্রে একই পরিস্থিতি দেখা দিলে তখন কী হবে সে ইস্যুটি সামনে আসছে।
এক্ষেত্রে দু’টি সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে, যার একটি হলো- সাংবিধানিক কাঠামোতে সরকার পরিচালিত হওয়ার বর্তমান যে ব্যবস্থা চলছে সেটির বিচ্যুতি ঘটিয়ে সামরিক ফরমানবলে দেশ চালানো অথবা সংবিধানের বাইরে সেনা নিয়ন্ত্রিত একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা। পঞ্চদশ সংশোধনী হাইকোর্ট বাতিল করার পর এই সুযোগ নতুনভাবে সামনে এসেছে। হাইকোর্টের নতুন রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আবার সংবিধানে ফিরে এসেছে। একই সাথে শেখ মুজিবকে জাতির পিতা ঘোষণার বিধানও সংবিধানে থাকছে না। এর পাশাপাশি সংবিধান বাতিল বা এর ধারাবাহিকতা ব্যাহত করার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানও সংবিধানে আর থাকছে না।
উপরোক্ত দু’টির যেটিই বাস্তবে ঘটুক না কেন তাতে নির্বাচনের বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে সে সরকারের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী উপদেষ্টারা থাকবেন, নাকি নতুন কোনো অবয়ব তৈরি হবে সেটি নিশ্চিত নয়।
নিরাপত্তার শঙ্কা
আগস্ট বিপ্লবের পরে বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিবর্তনে কূটনৈতিক অংশীদারদের মধ্যে কোনো কোনো পক্ষকে ক্ষুব্ধ দেখা যায়। এর প্রভাব দেশের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই নিরাপত্তা সঙ্কটের কেন্দ্রে রয়েছে দক্ষিণ সীমান্তের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। নিরাপত্তা সূত্রগুলোর তথ্যানুসারে, মিয়ানমার সীমান্তের রাখাইন রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১২টি আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যেও মংডুর পর রাখাইন বিদ্রোহীরা তাংআপ টাউনশিপের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। উল্লেখযোগ্য অঞ্চলের মধ্যে সিটওয়ে কিউকফিউ ও মুয়াং জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর আন ও গুয়াতে দুই পক্ষের তীব্র লড়াই চলছে। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন উত্তেজনা এমন এক সময় ঘটছে যখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর ত্রিপুরায় ভারতীয় বাহিনীর যৌথ নিরাপত্তা টহল নিয়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সা¤প্রতিক সময়ে ভারতে বাংলাদেশী কনস্যুলার ভবনে হামলার মতো ঘটনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে।
আরাকান আর্মি মংডুর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর বান্দরবান এবং টেকনাফে অনুপ্রবেশের ঝুঁকি বেড়েছে। কক্সবাজার ক্যাম্পগুলোতে নানা ধরনের হতাশা রোহিঙ্গা যুবকদের প্রতিরোধে যুক্ত হবার প্রবণতা বাড়াছে। পার্বত্য বান্দরবান রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির পাহাড়িদের মধ্য থেকে আরাকান আর্মির যোদ্ধা নিয়োগে বাংলাদেশের জন্য আন্তঃসীমান্ত হুমকি বাড়ছে। একাধিক নিরাপত্তা সূত্র নতুন পরিস্থিতিতে অনিরাপদ রুটগুলোকে কাজে লাগিয়ে বান্দরবানের আশপাশে সশস্ত্র আরাকান আর্মির অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে বলে আভাস দিচ্ছে। গত ৭২ ঘণ্টায় টেকনাফ অভিমুখে উদ্বাস্তুদের আনাগোনা ২০ শতাংশ বেড়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ সংহত করতে স্থানীয় যোদ্ধা গোষ্ঠীগুলির ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাচালান বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এতে বান্দরবান একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট হাব হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের শেষার্ধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হবে এবং রোহিঙ্গা জনসংখ্যার পালিয়ে যাওয়ার সাথে জড়িত আন্তঃসীমান্ত সঙ্ঘাতের ঘটনা ঘটবে।
বান্দরবান এবং টেকনাফের আশপাশে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার একটি কারণ হলো আরাকান আর্মি তার দখল সুসংহত করছে। এ সময়ে বান্দরবান ও টেকনাফের গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলোতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল বাড়াতে হবে। উদ্বাস্তুদের সম্ভাব্য আগমনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নিতে হতে পারে।
সর্বশেষ খবর অনুসারে, জাতিগত আরাকান আর্মি গত শনিবার সেখানে শাসকের শেষ শক্ত ঘাঁটি দখল করে দক্ষিণ রাখাইন রাজ্যের তাংআপ টাউনশিপের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উত্তর রাখাইনের মংডু টাউনশিপের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার মাত্র ছয় দিন পর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এই বিজয় এসেছে। এর সাথে, বিদ্রোহীরা এখন বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তের সম্পূর্ণ দায়িত্বে রয়েছে। এরপর আরাকান আর্মির এক বিজ্ঞপ্তিতে নাফ নদীতে যেকোনো পক্ষের নৌচলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশে সেন্টমার্টিনে যোগাযোগ ব্যাহত হতে শুরু করে।
আরাকান আর্মির পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের মধ্যে থেকে যোদ্ধা সংগ্রহে বিচ্ছিন্নতাপ্রবণ পাহাড়িদের মধ্যে মারণঘাতী আধুনিক সমরাস্ত্র বিস্তৃত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। শান্তিবাহিনীর একটি অংশের ত্রিপুরায় নতুন করে প্রশিক্ষণ শুরু করার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এই অবস্থায় যেকোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা রাষ্ট্রের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। যৌক্তিক একটি সময়ের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ এ সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে সহায়ক হতে পারে। এ ব্যাপারে সরকার ও রাজনৈতিক দল- দুই পক্ষেরই দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
[email protected]
আপনার মতামত লিখুন :