নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখতে ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে সভা-সমাবেশ লরবে বিএনপি


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ /
নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখতে ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে সভা-সমাবেশ লরবে বিএনপি

নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখবে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান দলটির কাছে এখনো সুস্পষ্ট না হওয়ায় সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে নতুন কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দলটির চিন্তা অনুযায়ী, সভা সমাবেশের মতো কর্মসূচি একদিকে যেমন নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে কাজে লাগানো যাবে, অন্যদিকে জনগণ যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত সেটিকেও তুলে ধরা হবে।

সরকারের তরফ থেকে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য নির্বাচনের যে ধারণা দেয়া হয়েছে, সেটিকে ‘অস্পষ্ট ও হতাশাজনক’ বলে মনে করে বিএনপি। দলটি মনে করে, ফ্যাসিবাদীদের দেশবিরোধী নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় নির্বাচনই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং সেদিকেই তাদের ফোকাস করা দরকার। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত হয়েছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ না বলায় প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারছে না ইসি। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সরকারের ওপর রোডম্যাপের চাপ অব্যাহত রাখার অংশ হিসেবে বড় বড় সভা-সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। গত বুধবার অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা এমন প্রস্তাব দেন।

সরকারের অবস্থান স্পষ্ট না হওয়ায় ইসি গঠনের পরও নির্বাচন নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা। বিএনপি এখন রাষ্ট্র মেরামতের দলীয় রূপরেখা ৩১ দফাকে নতুন করে ব্র্যান্ডিং করছে। বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার পর এখন জেলাভিত্তিক কর্মশালা চলছে, যেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হচ্ছেন। জেলা পর্যায়ের এই কার্যক্রম শেষ হলে নির্বাচনের দাবিতে আরো সোচ্চার হবে দলটি। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এর দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগামী ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ মাঠে নামতে পারে বিএনপি।

জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্ভাব্য কী কর্মসূচি দেয়া যায়, সে ব্যাপারে কয়েকজন প্রস্তাব দেন। এ সময় কেউ কেউ বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া উচিত হবে না। কারণ, সরকার ফেল করলে সেটি হবে সামগ্রিক ব্যর্থতা। বিএনপি এই সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না। তারা চান, সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাদের কাজ সম্পন্ন করুক।

যে কারণে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে আমরা যেতে পারব না। কারণ, এই সরকারকে ব্যর্থ করানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এই সরকার ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার ফসল। তারা ব্যর্থ হলে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। এ কারণে আমাদের উচিত হবে, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং জনগণ যে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে সেটি তুলে ধরে সারা দেশে বড় বড় সমাবেশ করা।

বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত দাবির মধ্যে বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে একটা ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। সেখানে তিনি বলেন, ‘মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’

প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ নিয়ে দলের কোনো নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেননি। নেতারা মনে করেন, সরকার নির্বাচনের জন্য ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত যে সম্ভাব্য সময়ের ধারণা দিয়েছেন সেটি দীর্ঘ সময়, যা নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের সময়ক্ষেপণ এবং নির্বাচনকে প্রলম্বিত করারই অংশ।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোই প্রাথমিকভাবে এবং প্রধানতম সংস্কার বলে মনে করি। এই সরকারের প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া। আর সে জন্য কিছু আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও মাঠের সংস্কার দরকার আছে। আমরা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এ ক্ষেত্রে সংস্কারে চার থেকে ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান, গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে আমরা যেন কোনো কৌশল প্রয়োগ না করি। ভোটের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ভোটের আয়োজন করতে হবে। তার মতে, নির্বাচনমুখী সংস্কারকার্যক্রম শেষে নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য তিন থেকে চার মাসের বেশি যৌক্তিক সময় লাগার কথা নয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, সরকার দ্রুত নির্বাচন চায়। তবে এ ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা সরকারের ওপর অযাচিত চাপ তৈরির চেষ্টা করছে। নির্বাচন বিলম্বের এটিও অন্যতম কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। তাই বিএনপি মনে করে, এ বিষয়টি সরকারকেই মোকাবেলা করতে হবে। পতিত ফ্যাসিবাদের দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র এবং জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশার আলোকে ছাত্রদের রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝিয়ে আস্থায় নিতে হবে এবং এটি সরকারের দায়িত্ব।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে তারা কোনো তাড়াহুড়া করছেন না। বরং সরকারকে তারা সহায়তা করতে চান এবং সেটা করছেনও। এজন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিচ্ছেন। তবে ১৫-১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ এখন ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছে, তা ছাড়া এতদিন নির্বাচনের ওপর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোও যেহেতু আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তাহলে দলগুলো একদিকে যেমন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারবে, অন্যদিকে সরকারের সংস্কারকার্যক্রমেও সহায়তা করতে পারবে। কারণ, মেয়াদের প্রায় সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও সরকার সুনির্দিষ্টভাবে কী করতে চায় সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচনের ব্যাপারে তারা এখনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেনি, এটিই দলটির হতাশার জায়গা। কারণ একটাই, বিএনপি এই সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনই এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য এবং এ সংক্রান্ত সংস্কারই প্রধানতম সংস্কার হওয়া উচিত। সেদিকে ফোকাস করে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে খুব দ্রুত আলোচনায় বসা উচিত। কারণ, কয়েক দফা বৈঠক হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নির্বাচন নিয়ে সরকারের এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।

এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের ধারা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন বিএনপি সেটিকে স্বাগত জানিয়েছে। দলটি মনে করে, ওই রায়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলেও সেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার ফরম্যাট কী হবে সেটি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার প্রয়োজন আছে। নেতারা বলছেন, দেশে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয় সেটা যাতে আর না হয় সেজন্য রাজনৈতিক মতৈক্য প্রয়োজন। যাতে এই ব্যবস্থাকে আরো গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী করা যায়।