২৪ জানুয়ারি, আনাদোলু ,গাজা নাউ, নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স: গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দিন সকালে, হামাসের সামরিক শাখার মুখোশধারী সদস্যরা সাদা পিকআপে হামাসের পতাকা ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে শহরের রাস্তায় টহল দেয়। ১৫ মাসের যুদ্ধে হামাস দুর্বল হলেও টিকে আছে এবং গাজার সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে এটাই ছিল তাদের স্পষ্ট বার্তা।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে হামাস গাজায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। ইসরাইলের বোমা হামলায় হাজারো সদস্য নিহত এবং সুড়ঙ্গ ও অস্ত্র কারখানা ধ্বংস হলেও সংগঠনটি টিকে আছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধের সময় হামাস নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিকল্প প্রশাসনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারেননি, যা শূন্যস্থান তৈরি করেছে। তবে গাজার অনেক বাসিন্দার কাছে যোদ্ধাদের দ্রুত উদ্ভব ছিল বিস্ময়কর। হামাসের প্রতিশোধের ভয়ে নামের শেষাংশ প্রকাশ করতে না চাওয়া মোহাম্মদ (২৪) বলেন, যুদ্ধ চলাকালে এরা কোথায় ছিল, আমরা জানতাম না।
যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন, হামাস গাজার সরায়া স্কয়ারে তিনজন পণ বন্ধীকে মুক্তি দিয়ে ইসরাইলে ফেরত পাঠায়। এ সময় তাদের পরিচ্ছন্ন ইউনিফর্ম ও ভালো অবস্থায় দেখা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মখাইমার আবুসাদা বলেছেন, এটি এমন একটি অঞ্চল, যা ইসরাইল প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। ইসরাইলী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা হামাসের সামরিক শাখা ধ্বংসের লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। পণ বন্ধীকে মুক্তির পর যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনার কথাও জানান তারা।
হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী বর্তমানে গাজার রাস্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাণ সরবরাহ সুরক্ষায় কাজ করছে। গাজা সিটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেনারেল মাহমুদ আবু ওয়াতফা বলেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের বাহিনীর। তবে অনেক সমস্যাও রয়ে গেছে। পুলিশ সদস্যরা কাগজপত্র ব্যবহার করছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত কার্যালয়ে হেঁটে কাজ করতে যাচ্ছেন। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলগুলো অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। হামাসের ক্ষমতা অনেক কমলেও তারা পুরো গাজায় নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস হয়তো ভবিষ্যতের প্রশাসনে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে চায়।
ইসরাইলী পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার জানিয়েছেন, হামাসের শাসন ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। গাজায় হামাস সমর্থকেরা আশ্বস্ত হলেও নিরপেক্ষ নাগরিকরা আরও যুদ্ধের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। এক বাসিন্দা বলেন, যতদিন হামাস ক্ষমতায় থাকবে, নতুন যুদ্ধ শুরু হওয়া সময়ের ব্যাপার। এখানে ভবিষ্যৎ নেই।
তিন ইসরাইলী সহযোগীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর : দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা করায় গাজায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসা। স্থানীয় জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘গাজা নাউ’ গত বৃহস্পতিবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে ‘গাজা নাউ’ টিভির ১৭ লাখ ফলোয়ার রয়েছে। সেখানেই ভিডিওটি প্রকাশ করেছে তারা।
এতে দেখা গেছে, হামাসের কয়েক ডজন যোদ্ধা, যাদের অনেকের গায়ে পোশাক ছিল, তারা মাটিতে শুয়ে থাকা তিনজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন। এই তিনজনের সবাই ফিলিস্তিনি। কিন্তু গত ১৫ মাস গাজায় ইসরাইলী বাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছে, এতে সহযোগিতা করেছেন তারা। ভিডিওটির শিরোনামে লেখা হয়েছে, “ইহুদিবাদী দখলদারদের এজেন্টদের শাস্তি দেওয়ার মুহূর্ত। যারা আমাদের কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে।”
এদিকে ইসরাইলের সঙ্গে যারা কাজ করে বা কোনো ধরনের সহযোগিতা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে থাকে হামাস। এর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। আর এসব দোষীদের দণ্ড প্রকাশ্যে গুলি করার মাধ্যমে কার্যকর করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন অসংখ্য ইসরাইলী সহযোগীদের গুলি করে দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপরও যেন থামছে না ইসরাইলের হামলা। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে ইসরাইলী সামরিক বাহিনীর হামলায় আরও ২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা । যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও দক্ষিণ ও মধ্য গাজা উপত্যকায় ইসরাইলী হামলায় বৃহস্পতিবার দুই ফিলিস্তিনি নিহত ও অন্যরা আহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার পশ্চিম রাফাহের তেল আল-সুলতান এলাকার একটি বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরাইলী আর্টিলারি হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে।
ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে চুক্তির অধীনে আশপাশের এলাকাটিকে ‘নিরাপদ’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে ফিলিস্তিনিরা ফিরে যেতে পারে। আরেকটি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, আল-বুরেজ শরণার্থী শিবিরের পূর্বাঞ্চলে অবস্থানরত ইসরাইলী বাহিনীর গুলিতে আহত একজন ফিলিস্তিনিকে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :