দ্রুত শেয়ার করুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ রক্ষায় টেকসই উন্নয়ন অর্জনে প্রকৃতিভিত্তিকি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পরিবেশেরে সঙ্গে সমন্বয় না করলে উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না। সুতরাং, আমাদের এটি মাথায় রেখে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের দিকে যেতে হবে।
গতকাল ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২২’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষ রোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা ২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি গণবভন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে উন্নয়নের পথে যেতে হবে, তবে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান নীতি অনুসরণ করতে হবে। এটি জরুরিভাবে প্রয়োজন। সরকার যখনই কোনো উন্নয়ন কর্মসূচি নেয় প্রতিটি প্রকল্পে একটি শর্ত থাকে, তা হলো এই উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো গাছ কাটা হলে পাঁচগুণ বেশি সংখ্যক গাছ সেখানে লাগাতে হবে।
দেশের বনভূমি ১১ ভাগ থেকে সরকার আজকে ২২ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবাদি জমি সংরক্ষণের জন্য সরকার নির্বিচারে কল-কারখানা স্থাপন রোধে সারাদেশে ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় দেশের বনভূমি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাবার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের বনভূমি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নের কাজও করে যেতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য দেশটাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামাজিক বনায়নের কাজটাও ব্যাপকভাবে করে যেতে হবে। এতে যেমন দরিদ্র জনগোষ্ঠী লাভবান হয়। এখানে তারা কেবল গাছ লাগায় না- এর সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। তাই এখন ৭০ ভাগ লভ্যাংশ প্রদান করা হচ্ছে। কাজেই এই কাজগুলো আরো ব্যাপকভাবে করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ জুন আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারের মত এবারেও বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন করবো। আমাদের কৃষক লীগ, যুব লীগ, স্বেচছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগসহ প্রত্যেকটি সহযোগি সংগঠন ব্যাপক ভাবে এই বৃক্ষরোপণ করে। আর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে সরকার ও দলের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের যত স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত যা রয়েছে এর সীমানা চত্বরে আমরা যদি ব্যাপকভাবে বৃক্ষ লাগাতে পারি তাহলে পরিবেশটা যেমন রক্ষা হবে তেমনি ফল-ফলাদিও গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা বিধানে তার সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এবং পর্েিবশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংস্দীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং অংশী জনের মাঝে ‘পরিবেশ পদক ২০২০ ও ২০২১,’ ‘বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন, ২০২০ ও ২০২১’, ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার, ২০১৯ ও ২০২০’ এবং বিজয়ীদের মঝে সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বৃহৎ ঘনবসতী পূর্ণ ছোট্ট একটি ভূখন্ডের দেশে বন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করাটা দুরুহ। প্রায় ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় তারা এক সময়কার ঘন বনভূমি সমৃদ্ধ উখিয়া অঞ্চলের বনভূমি বিনষ্ট হয়েছে বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পরই সরকার হেলিকপ্টারে বীজ ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি সারাদেশে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বৃক্ষরোপনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে এরফলে সোনাদিয়াসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল এবং সুন্দরবন এলাকায় যে প্রাকৃতিক বন্য পরিবেশ গড়ে ওঠে তা পরবর্তীকালের বিএনপি সরকার কেটে সেখানে মাছের ঘের করতে শুরু করে। শুধু তাই নয় সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র রক্ষায় জাতির পিতার কাটা ঘাঁসিয়ার খালসহ প্রায় আড়াইশো খালের মুখ বন্ধ করেও সেখানে চিংড়ি চাষ শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সরকার সেখান থেকে বর্তমানে প্রায় শতাধিক খাল উন্মুক্ত করতে হয়েছে এবং বাকী খালগুলো উন্মুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণেও তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আহবান জানান। বলেন, আমরা সরকারে আসার পর ঘাঁষিয়ার খাল আবার কেটে দিয়েছি তবে, সুন্দরবনের জীবজন্তুর চারণভূমি এই ঘাঁষিয়ার খাল টিকে থাকবে তখনই যখন সুন্দরবনের বাকী খালগুলো উন্মুক্ত করা হবে আর সালনা নদী জাহাজ চলাচলের জন্য ব্যবহার হলে জীব বৈচিত্রের ক্ষতি হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকার সারাদেশের নদ-নদীর নব্যতা বৃদ্ধিতে ড্রেজিং করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেখান থেকে যে ভূমি উত্তোলিত হচ্ছে, সেখানে বনায়ন করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে আমরা প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যেমন মুক্তি পাব তেমনি মৎস ও জলজ সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি লবণাক্ততা থেকেও বাঁচতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনায় তাঁর আহবান পুণর্ব্যক্ত করে ছাদ বাগানকেও উৎসাহিত করেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় দারিদ্র্য দূরীকরণে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভীন্ন শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করে এ অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য দূর করতে একসাথে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রধান শত্রু হচ্ছে দারিদ্র্য। তাই, দারিদ্র দূরীকরণে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশনের (সার্ক) মহাসচিব এসালা রুয়ান উরাকুন ও তার স্ত্রী গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সার্কের মহাসচিব সার্ক খাদ্যব্যাংক শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারে অবদান রাখায় তিনি বাংলাদেশের ব্যাপক প্রশংসা করেন। শ্রীলংকায় জন্মগ্রহণকারী এসালা উইরাকুন বলেন, তার দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য মহামারিও দায়ি। তিনি এই সংকটময় মুহূর্তে শ্রীলংকার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
এর আগে, সার্ক মহাসচিব বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং প্রশংসা করেন। অ্যাম্বাসেডর এট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।