পলাতক স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি- তারেক রহমান


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১১:১৮ অপরাহ্ণ /
পলাতক স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি- তারেক রহমান

তিস্তা নদী আমার মা, শুকিয়ে যেতে দেব না। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে, “জাগো বাহে তিস্তা বাছাই” আন্দোলনে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু গত ১৭ এবং ১৮ তারিখ দুইদিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির যে ডাক দিয়েছেন সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৪৮ ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করলেও এ অঞ্চলের ৫ জেলায় তিস্তা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশে ১১টি পয়েন্টে এক যোগে প্রচার করা হয়। ৪৮ ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সবাই মুখে একই আওয়াজ জাগো বাহে তিস্তা বাছাই ধ্বনিত হয়। ৪৮ ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি র‍্যালি,পদযাত্রা, নেতাদের বক্তব্য, বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কান, নাটিকা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো হয়।

জাগো বাহে তিস্তা বাছাই ৪৮ ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচির শেষ দিনে বিকাল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন। তার ভার্চুয়ালি বক্তব্য একই সময় এলইডির মাধ্যমে ১১টি পয়েন্টে সম্প্রচার করা হয়। প্রধান অতিথির সমাপনী বক্তব্যের তারেক রহমান বলেন, পানি বণ্টন নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অপ্রতিবেশীমূলক আচরণ করেই চলেছে। আপনাদের সকলের জানা আছে, আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর হলো ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায়নি। এখন আবার তিস্তা বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে আমাদের প্রতিবেশী উজানের গজলডোবায় একটি বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। তাদের এই অপ্রতিবেশীমূলক আচরণের কারণে আজকে উত্তরাঞ্চলের লাখো-কোটি জনগণ বন্যায় খরায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।

তিনি আরও বলেন, পানির অভাবে তিস্তার বুকে জুরে শুধুই ধূধূ বালুচর। একদিকে পানির অভাবে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল। আবার কখনো হঠাৎ করেই উজান থেকে ছেড়ে দিচ্ছে পানি, দুদিন আগে যেমনটা হয়েছে। আর সেই পানির কারণে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি। কৃষকের আবাদি ফসল। এমনকি বছরে তিনবারও বন্যা হয়েছে এই অঞ্চলে। প্রত্যেক বছর বন্যার কারণে নদীভাঙন হচ্ছে। শস্যের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে লক্ষ-কোটি টাকা।

উত্তরাঞ্চলের তিস্তাপাড়ের পানিবঞ্চিত মানুষেরা আজ সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চায় যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ৫৪টি অভিন্ন নদী, এসব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি কারও করুণার বিষয় নয়। এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্য, এটি বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য। অথচ আমরা দেখছি, আন্তর্জাতিক তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য আজকে আমাদেরকে আন্দোলন করতে হচ্ছে।

শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানো প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্ট এই দেশ থেকে একজন পালিয়ে গেছে। একটা খুনি এই দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। স্বৈরাচার এই দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এই স্বৈরাচার একটা কথা বলেছিল_‘ভারতকে যা দিয়েছি সেটি তারা সারাজীবন মনে রাখবে’। এই ভারত শুধু পলাতক স্বৈরাচারকেই মনে রেখেছে বাংলাদেশের জনগণকে তারা মনে রাখেনি। পলাতক স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া ভারত বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সারা বিশ্বজুড়ে সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যা, সমাধান কিংবা পারস্পরিক স্বার্থ জড়িত থাকে। নিজ নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা করে প্রতিটি দেশই কিন্তু সমস্যার সমাধানগুলো নিরসন করে। এটিই হচ্ছে কূটনৈতিক রীতি। পলাতক খুনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনা জোর করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখতে গিয়ে নিজেকে সে তাদের (ভারতের) সেবাদাসীতে পরিণত করেছিল। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে সম্পূর্ণ অকার্যকর রেখেছিল।

তিনি আরো বলেন,প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয় বা দিতে যদি দেরি করে, তিস্তা চুক্তি করতে অনিহা দেখায়, তাহলে দেশ এবং দেশের মানুষের স্বার্থে, কৃষকের স্বার্থে, কৃষককে বাঁচাতে, নদী বাঁচাতে, নাব্যতা রক্ষা করতে এই সমস্যা সমাধানকল্পে আমাদেরকে আমাদের পথ খুঁজে নিতে হবে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সকল বিকল্প কাজে লাগাতে হবে এবং এ কারণে জাতিসংঘ সহ সংশ্লিষ্ট সকল আন্তর্জাতিক ফরামে জোরালোভাবে বাংলাদেশের দাবী তুলে ধরতে হবে। একই ভাবে প্রতিবেশী দেশের সাথে কূটনৈতিকভাবে আলোচনা শুরু করতে হবে। উত্তর অঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে বাঁচাতে তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনই বিকল্প নেই।