শেখ নাজমুল ইসলাম: “ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত”- কবি সুভাস মুখোপাধ্যায়ের কবিতার এই শব্দগুলো কেউ শুনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তরুণদের কাছে হাল আমলের “ বসন্ত এসে গেছে” গানটিও খুব জনপ্রিয়। শহুর থেকে গ্রাম সবখানেই পহেলা ফাল্গুন পালিত হয় সাড়ম্বরে। তরুন-তরুণীরা বাসন্তী রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তোলে।
হলুদ শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে। দিনভর আড্ডা, গান, কবিতায় মুখর করে রাখে চারপাশ৷ হ্যাঁ এতক্ষন বলছিলাম ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুনের কথা ৷ ঋতু বৈচিত্রে ভরা সবূজ শ্যামলে ঘেরা আমাদের এ বাংলাদেশ ৷ ষড় ঋতুর মধ্যে সর্ব শেষ ঋতু বসন্ত ৷
শীতের বিদায় লগ্নে ঝীর ঝীর হিমেল হাওয়া ও নাতিশীতোন্ষ অনুভুতি নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয় বসন্ত কাল ৷ বসন্ত মানেই গাছে গাছে নতুন ফুল, সবুজ কচি পাতা, কোকিলের ডাক পাখির কলোরব ৷ সব মিলিয়ে প্রকৃতি সাজে নতুন সাজে ৷সেই প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন রঙে ঢঙে সজ্জিত হয়ে কিশোর কিশোরী, যুবক যুবতী সহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎযাপন করে থাকে ৷
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে আসছিলো৷ যাতে অংশ নেয় বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে আসা হাজারো মানুষ। ১৯০৭ সালে বিশ্বকবির ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম জেলার বোলপুর শহরের শান্তিনিকেতনে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই উৎসব।
তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ‘ঋতুরঙ্গ উৎসব’। ঐ উৎসবের বছরে মাত্র ১১ বছর বয়সে মৃত্যু বরন করেন শমীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ ১৯২৫ সালে ঋতুরঙ্গ উৎসব পরিবর্তিত হয়ে শান্তি নিকেতনের বিখ্যাত ‘বসন্ত উৎসব’ নামে পরিচিতি লাভ করে ৷ বাঙ্গালীর জাতি সত্ত্বা জেগে ওঠে এই বসন্তের ঋতুতেই, ১৯৫২’র ভাষার দাবীতে যখন বাংলার মানুষ পথে নেমেছিলো, গুলি খেয়েছিলো, জহির রায়হানের সঙ্গে দৃঢ় প্রত্যয়ে বলেছিলো, আগামী ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হবো।
প্রতিবাদ স্বরূপ বাঙালি আপন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে আগ্রহী হয়। ষাট দশক থেকেই পহেলা ফাল্গুনে হলুদ শাড়ি পরা নতুনভাবে শুরু হয় বলে জানা যায়। তবে অনেক আগে থেকেই ছোটখাটোভাবে একেক জায়গায় এই উৎসব পালন করা হতো। বাংলাদেশে বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদ্যাপনের রীতি চালু হয়।
সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। এ ছাড়া তরুণ-তরুণীরা বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমণ্ডি লেক, বলধা গার্ডেনসহ নানা জায়গায় আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নেয় সারাদিন।
বাঙ্গালীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে পহেলা বৈশাখ এর পরেই এই বসন্ত উৎসবকে ঢাক ডোল পিটিয়ে জাকজমক পুর্ণ ভাবে পালন করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :