পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ উভয় দিক থেকে সমন্বিত বা প্রায়-একযোগে কথিত সন্ত্রাসী চ্যালেঞ্জ আসার ক্রমবর্ধমান আশঙ্কা নিয়ে ভারতকে সতর্ক করেছেন দেশটির বিমান বাহিনীর (আইএএফ) প্রাক্তন প্রধান অরূপ রাহা। সম্প্রতি ইউএনআই এর সাথে একটি একান্ত আলাপচারিতায় তিনি ভারতের পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক ‘বিস্তৃত সতর্কতা ও কৌশলগত মূল্যায়ন’ তুরে ধরেন।
এসময় ভারতের প্রাক্তন বিমান বাহিনী প্রধান দুই-ফ্রন্টের ‘সন্ত্রাসী হুমকির’ ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেশীয় যুদ্ধবিমান তৈরির প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতির আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে সাম্প্রতিক মতাদর্শগত পরিবর্তন নিয়ে একটি পরিমিত মতামত দেন।
অরূপ রাহা বলেন, ‘‘পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ উভয় দিক থেকে সমন্বিত বা প্রায়-একযোগে সন্ত্রাসী চ্যালেঞ্জ আসার ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার জন্য ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’’তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘দুই দিক থেকে সন্ত্রাসী আক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে এবং এর বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’’
ভারতকে ‘‘অস্থিরতার মরুভূমিতে একটি মরুদ্যান’’ হিসাবে বর্ণনা করে রাহা দাবি করেন, দেশটির শক্তিশালী অর্থনীতি এবং স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থা এই অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশে বিরাজমান অস্থিরতার সম্পূর্ণ বিপরীত।তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি একটি অব্যাহত হুমকি।’’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশেও মতাদর্শগত বিচ্যুতির উদ্বেগজনক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’’
রাহার মত, ‘‘বাংলাদেশের সম্প্রতি মৌলবাদের দিকে ঝোঁক রাজনৈতিক উত্থান-পতনের সাথে যুক্ত।’’ তবে তিনি আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন, এই প্রবণতা হবে অস্থায়ী।তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃতিগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ এবং শান্তিকামী। ফলস্বরূপ, মৌলবাদের দিকে এই গতিপথ স্বল্পস্থায়ী হবে।’’
প্রাক্তন এই বিমান বাহিনী প্রধান আরও দাবি করেন, পাকিস্তান গোয়েন্দা এবং সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে ‘সমস্যা-সংকুল পানিতে মাছ ধরছে’। তবে, তিনি যুক্তি দেন, বাংলাদেশের সমাজে ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্মৃতি এখনও জনমতকে প্রভাবিত করে, যা একটি গভীর পাকিস্তান-বাংলাদেশ যোগসূত্রের সম্ভাবনাকে সীমিত করেছে।
রাহা জোর দিয়ে বলেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী আন্তঃসীমান্ত সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক টিকে থাকবে, তবে এর সাথে উচ্চ সতর্কতা যুক্ত করতে হবে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, পাকিস্তানের আইএসআই দ্বারা প্ররোচিত হতে পারে এমন নির্দিষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে লক্ষ্য করার ক্ষেত্রে আমাদের সক্রিয় হতে হবে।’’
ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে, রাহা বিমান শক্তিতে ভারতের আত্মনির্ভরশীলতার প্রয়োজনীয়তাকে দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দুবাই এয়ারশোতে একটি স্টান্ট মহড়ার সময় সম্প্রতি তেজেস এলসিএ দুর্ঘটনার পরে দেশীয় যুদ্ধবিমান কর্মসূচির যে কোনও পুনর্বিবেচনার বিরুদ্ধে তিনি সতর্ক করেন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘‘ভারতকে কোনো অবস্থাতেই দেশীয়ভাবে তৈরি যুদ্ধবিমান তৈরির লক্ষ্য ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এটি একটি অপরিহার্য প্রয়োজন।’’ তিনি বলেন, ধীর উৎপাদন সত্ত্বেও তেজেস মোটামুটি ভালো পারফর্ম করেছে এবং সতর্ক করেন, দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করা না হলে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে আইএএফের যুদ্ধবিমানের শক্তি ২৫ স্কোয়াড্রনে নেমে যেতে পারে।