পানি বন্ধের প্রকল্প করতে কুড়ি বছর লাগবে, ত্রিদেশীয় নদী সিন্ধুর পানি আটকে রাখার মতো ব্যবস্থা নেই ভারতের


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ১০:১৮ অপরাহ্ণ /
পানি বন্ধের প্রকল্প করতে কুড়ি বছর লাগবে, ত্রিদেশীয় নদী সিন্ধুর পানি আটকে রাখার মতো ব্যবস্থা নেই ভারতের

সিন্ধু নদের অববাহিকা ম্যাপ

কাশ্মীরের ঘটনার জেরে ভারত ‘সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও পাকিস্তানে যেতে দেবে না’ বলে যে হুমকি দিয়েছে সেটি বাস্তবে কতটুকু সম্ভব সে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।কাশ্মীরের ঘটনার জেরে ভারত ‘সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও পাকিস্তানে যেতে দেবে না’ বলে যে হুমকি দিয়েছে সেটি বাস্তবে কতটুকু সম্ভব সে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে জানা গেছে, চীন, পাকিস্তান ও ভারতের এই ত্রিদেশীয় নদী সিন্ধুর পানি আটকে রাখার মতো কোনো ব্যবস্থা ভারতের হাতে নেই। যদি গঙ্গায় ‘ফারাক্কা’ বাঁধের মতো কোনো পানি বন্ধের প্রকল্প করতে হয় তাতেও অন্তত কুড়ি বছর লাগবে বলে জানা গেছে।

ভারত সিন্ধুর পানিকে ‘প্রতিশোধমূলক’ ব্যবস্থা হিসেবে তিনটি অপশন নিয়ে আলোচনা করছে বলে জানা যায়। এটি স্বল্পকালীন, মধ্যকালীন এবং দীর্ঘকালীন ব্যবস্থার ওপর কাজ করছে যেন পাকিস্তানে এক ফোঁটা পানিও না যায়। সেই ব্যবস্থার অংশ হিসেবে শিগগিরই নদীর প্রবাহ বন্ধ করতে ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হবে এবং প্রবাহ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়া হবে। এ অবস্থায় পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারত যদি পানি প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তবে তারা তা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হিসেবে বিবেচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় জবাব দেবে।

সিন্ধু নদের মূল উৎস চীনের তিব্বতের মানস সরোবরে। এটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং দীর্ঘতম নদীগুলোর একটি। নদীর মোট দৈর্ঘ ৩ হাজার ১৯৯ কি.মি। এটি দামচোকের কাছে ভারতে প্রবেশ করে নাঙ্গা পর্বতের উত্তরে বুঞ্জিতে লাদাখ পর্বতমালা কেটে গভীর গিরিখাত তৈরি করে এবং চিল্লাসের কাছে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। এই নদী পাকিস্তানের মধ্যে প্রায় লম্বালম্বিভাবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আরব সাগরে পতিত হয়েছে।

১৯৬০ সালে সিন্ধু নদের পানি চুক্তি হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর দুটি যুদ্ধের ধাক্কা সামলেও টিকে ছিল এ চুক্তিকে আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিবেচনা করা হতো।

পানি আটকানো কি সম্ভব?

ভারত পানি বন্ধের হুমকি দিলেও যে কারণে পানি আটকাতে পারবে না, সেগুলো বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করে জানান, বর্ষাকালে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলো যখন ফুলেফেঁপে ওঠে, তখন সেগুলোর কোটি কোটি ঘনমিটার পানি আটকে দেয়া ভারতের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এ কাজের জন্য প্রয়োজন পানি সরিয়ে মজুত করে রাখার বিশাল অবকাঠামো আর অগণিত খাল-যা ভারতের নেই। একজন বিশেষজ্ঞ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ভারতের যেসব অবকাঠামো আছে, তার বেশিরভাগই বাঁধভিত্তিক পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প, যেগুলোর জন্য বড় ধরনের জলাধারের প্রয়োজন হয় না।’ ভারতীয় বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে ভারত এখনো চুক্তি অনুযায়ী তার জন্য ঝিলম, চেনাব ও সিন্ধুর বরাদ্দ করা ২০ শতাংশ পানিও যথাযথ কাজে লাগাতে পারছে না। মূলত এ কারণেই দেশটি পানি ধরে রাখার অবকাঠামো নির্মাণের দাবি তুলছে। তবে পাকিস্তান চুক্তির শর্ত উল্লেখ করে এ দাবির বিরোধিতা করছে।

শুষ্ক মওসুমে পানির প্রবাহ থাকায় ভারত হয়তো কিছুটা সুবিধা করতে পারবে। তবে এ পরিস্থিতিতে উজানের দেশ সাময়িকভাবে নদীর পানি আটকে রেখে পরে অকস্মাৎ একসঙ্গে সব পানি ছেড়ে দিতে পারে। ভাটির দেশে কোনো রকমের সতর্কতা দেয়া হয় না। এর ফলে ভাটির দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু ভারত তা করতে পারবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এতে প্রথম ঝুঁকিতে পড়বে ভারতই। কারণ, ভারতের বাঁধগুলো পাকিস্তান সীমান্ত থেকে অনেক দূরে। কাজেই পানি আটকে রাখলে ভারতের নিজের অঞ্চলই প্লাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

ভারতের একজন ‘গুরু’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, তিনি সিন্ধু নদের পানি বন্ধ করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে, এরকম কোনো ব্যবস্থা ভারতের হাতে নেই। সে রকম কোনো প্রকল্প করতে হলে অন্তত কুড়ি বছর সময় লাগবে।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, গঙ্গার পানি প্রত্যাহারে ভারত যতগুলো বাঁধ, ক্যানেল ও প্রকল্প নির্মাণ করতে পেরেছে সিন্ধু নদে তেমনটি নেই। সিন্ধুর উপনদীগুলোর উপর ভারতের অংশে বেশকিছু হাইড্রো-ইলেকট্রিক ও সেচ প্রকল্প থাকায় মূল নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। তবে মূল নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে পাকিস্তান ছাড়াও একই সঙ্গে ভারতের বিশাল ভূ-ভাগও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এর প্রভাব পড়বে একই সঙ্গে দুই দেশের উপনদী ও শাখা-প্রশাখাগুলোর উপরেও।

অন্যদিকে সিন্ধুর পানি প্রবাহ ভারত আটকাতে চাইলে চীন যদি তিব্বতে কোনো পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে মূল ক্ষতির শিকার হবে স্বয়ং ভারত। ফলে ভারত দীর্ঘ মেয়াদে কোনো পাল্টা ব্যবস্থার কথা ভাবলেও ভাবতে পারে। তবে স্বল্প বা মধ্য মেয়াদে কিছু করার অবস্থানে নেই বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।