সিলেটের বিয়ানীবাজার সীমান্ত দিয়ে ৩২ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ
শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার ভোরের মধ্যে মৌলভীবাজার, সিলেট ও মেহেরপুর জেলার সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ সর্বমোট ১৭২ বাংলাদেশীকে পুশইন করেছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশইনের ঘটনা থামছে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো সীমান্ত দিয়ে ঘটছে পুশইন। এটিকে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ারে পরিণত করেছে ভারত।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৪ মে) রাত থেকে গতকাল রোববার ভোরের মধ্যে মৌলভীবাজার, সিলেট ও মেহেরপুর জেলার সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ সর্বমোট ১৭২ বাংলাদেশীকে পুশইন করেছে। পরে সীমান্তবর্তী এলাকায় টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করেছেন।
মৌলভীবাজারে ১২১ জন পুশইন
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, গতকাল ভোর রাতে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের দু’টি পয়েন্ট দিয়ে বিএসএফ একযোগে ১২১ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করে। পরে টহলরত বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করেন।
আটকরা বাংলাদেশী নাগরিক বলে বিজিবি নিশ্চিত করেছে। এ নিয়ে বড়লেখা সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে ভারত থেকে অনুপ্রবেশকালে মোট ২৪০ জনকে আটক করল বিজিবি।
বিজিবি জানায়, রোববার ভোরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় নারী ও শিশুসহ ১২১ জনকে আটক করে বিজিবি। এর মধ্যে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন লাতু বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা ৭৯ জনকে এবং পাল্লাথল বিওপি ক্যাম্পের সদস্যরা ৪২ জনকে আটক করে।
বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান ১২১ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই শেষে সকালে বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বড়লেখা থানার ওসি ওসি আবুল কাশেম সরকার বলেন, আটকদের পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হয়েছে। স্বজনরা এলে তাদের জিম্মায় হস্তান্তরের করা হবে।
সিলেটে ৩২ জনকে পুশইন
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার সীমান্ত দিয়েও পুশইনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ৩২ জনকে বিএসএফ সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।
বিজিবি জানায়, বিয়ানীবাজার নয়াগ্রাম সীমান্তে আটক ৩২ জনের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৯ জন নারী এবং ১৪ জন শিশু। রোববার ভোরে বিয়ানীবাজার সীমান্তের নয়াগ্রাম বিওপির আওতাধীন এলাকার দুই দেশের ৫৩৮ একর অমীমাংসিত ভূমির একটি বিলে তাদের ছেড়ে দেয় বিএসএফ।
ভোরে বিজিবি টহল দল ও স্থানীয়রা তাদের দেখতে পেয়ে আটক করে নয়াগ্রাম প্রগতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে তাদের পরিচয় শনাক্ত করার পর বিয়ানীবাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই গুজরাটের ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক হয়ে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর হয়, পরে পুশইনের মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
মেহেরপুরে ১৯ জনকে পুশইন
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা এসব নারী, পুরুষ ও শিশুদের মুজিবনগর থানা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। রোববার (২৫ মে) ভোরে সীমান্তের কাঁটাতারের গেট খুলে তাদেরকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। আটকদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, পাঁচজন নারী এবং ৯ জন শিশু।
ভারত থেকে আসা কয়েকজন দাবি করেছেন, তারা সবাই বাংলাদেশী। অবৈধভাবে তারা বিভিন্ন সময় ভারতে যান। কিছুদিন আগে ভারতীয় পুলিশ তাদের আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। পরে গতকাল ভোরে বিএসএফ তাদের মুজিবনগরে সোনাপুর সীমান্তে নিয়ে আসে। সেখানে কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে জোরপূর্বক বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করে বিএসএফ।
মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, ১৯ জনই বাংলাদেশী বলে দাবি করেছেন। তবে তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় বাংলাদেশী কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। নীলফামারী ও কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা বলে তারা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। তাদের দেয়া পরিচয় যাচাই করার পর তাদের বিষয়ে আইনানুগ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিএসএফের গুলিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহত ২
ইউএনবি জানান, শনিবার (২৪ মে) রাত দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাদলা সীমান্তের শ্যামনগর এলাকার বিপরীত পাশে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশী আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান।
গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন কসবার শ্যামপুর এলাকার শের আলীর ছেলে মো: রবিউল ইসলাম (২৮) এবং মো: আজাদ হোসেন (২৬)। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তারা শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও বিজিবি সূত্র জানায়, রাত দেড়টার দিকে অন্তত ছয় ব্যক্তি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ভেতরে প্রায় দেড় শ গজ পর্যন্ত ঢুকে পড়েন। এ সময় বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে। এতে রবিউল ও আজাদ আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে গরু, মসলা, প্রসাধনী ও পটকা বাজি পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা। সীমান্ত চোরাচালান এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিজিবি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :