প্রাথমিকের ৬২ ভাগ বই এখনো ছাপা হয়নি, চার দিনে ৫ কোটি বই ছাপার চ্যালেঞ্জ!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪, ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ /
প্রাথমিকের ৬২ ভাগ বই এখনো ছাপা হয়নি, চার দিনে ৫ কোটি বই ছাপার চ্যালেঞ্জ!

– ছবি : সংগৃহীত

দিন যতই যাচ্ছে এবারের পাঠ্যবই ছাপার জন্য প্রেস মালিকদের ওপর চাপ ততই বাড়ছে। নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা এনসিটিবির উপরেও ক্রমেই বাড়ছে স্নায়ুচাপ। এ দিকে নতুন বছর শুরু হতে আর মাত্র চার দিন বাকি থাকলেও প্রাথমিকের পাঠ্যবই এখনো ছাপার বাকি পাঁচ কোটির বেশি। অর্থাৎ আগামী চার দিনে প্রাথমিকের জন্যই ছাপতে হবে বিশাল সংখ্যার এই পাঠ্যবই।

যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গতকাল বৃহস্পতিবারও বলছে জানুয়ারির ১ তারিখের আগেই তারা সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে সমর্থ হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে বই মুদ্রণের পর সেগুলো জেলা উপজেলায় এবং স্কুলে স্কুলে পৌঁছাতেও সময়ের প্রয়োজন আছে। কাজেই মুদ্রণের পাশাপাশি বই সরবরাহের বিষয়েও সীমিত এই সময়ের দিকে নজর দিতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিকের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৫ সালে মোট বই লাগবে ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৮২৫ কপি। এর মধ্যে গত বুধবার পর্যন্ত মোট ছাপা হয়েছে তিন কোটি ৯৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪২২ কপি। এখনো ছাপার বাকি আছে পাঁচ কোটির বেশি বই।

যদিও ছাপানো বইয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ইন্সপেকশন কোম্পানি কর্তৃক সার্টিফাই করা হয়েছে অর্থাৎ পিডিআই বা পোস্ট ডেলিভারি ইন্সপেকশন সম্পন্ন হয়েছে তিন কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার ৭৯২ কপি বইয়ের। সেই হিসেবে পিডিআই বাকি আছে ৬৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বই। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত আরো কিছু বই ছাপা ও পিডিআই শেষ করা হয়েছে। সেই হিসেবে এখনো ছাপা বা পিডিআই বাকি আছে ৬২ শতাংশ পাঠ্যবই।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ সালের জন্য প্রাক প্রাথমিকে বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৬২ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৪ কপি। প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীর (৭০ এবং ২৭ লট মিলে ) চার কোটি ৩৮ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৬ কপি। চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর জন্য বই লাগবে চার কোটি ৩৬ লাখ এক হাজার ৪০০ কপি। একই সাথে প্রাথমিকের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বই লাগবে (ব্রেইল বই) এক লাখ ৯২ হাজার ৮২৫ কোটি।

সূত্র আরো জানায়, প্রাথমিকের চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপার দিক দিয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাথমিকের দুই শ্রেণীর (চতুর্থ ও পঞ্চম) বই ছাপতে কয়েকজন প্রেস মালিক এসেছেন। তারা এখনো চুক্তিই সম্পাদন করেননি। ফলে বই ছাপা কবে থেকে শুরু হবে এটা অনিশ্চিত। যদিও নতুন বছর শুরু হতে আর মাত্র চার-পাঁচ দিন বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে বাকি বই ছাপানো এবং সেগুলোর পিডিআই করে জেলা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছতে দিতে যথেষ্ট সময়েরও প্রয়োজন।

এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, প্রেস মালিকরা আন্তরিকতা আর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে এখনো যে সময় আছে তাতে যথাসময়েই প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা সব বই হাতে পাবে। কেননা প্রাথমিকের পাঠ্যবই ছাপার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে প্রেস মালিকদের। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ বই ছাপা শেষ হয়েছে। বাকি বই দুই-তিন দিনের মধ্যেই ছাপা শেষ হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপার কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হলেও যথাসময়েই সব বই পাওয়া যাবে।

মাধ্যমিকের পাঠ্যবই ছাপার প্রস্তুতির বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা মাধ্যমিকের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তিনটি ধাপে পৌঁছতে চাই। প্রথমে বছরের প্রথম দিনেই মৌলিক তিনটি বই যেমন বাংলা ইংরেজি এবং গণিত এই তিনটি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে চাই। এরপর ১০ জানুয়ারির মধ্যে বাকি আরো পাঁচটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য আমরা প্রেস মালিক ও সব অংশীজনের সহযোগিতা চেয়েছি, আশা করছি- এটা সম্ভব হবে।

অপর দিকে কয়েকজন প্রেস মালিক জানান, প্রেসগুলো ঠিকমতো চালাতে পারলে বিশেষ করে সময়মতো কাগজের জোগান দেয়া সম্ভব হলে এবং নিবরচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে দৈনিক এক কোটি বই ছাপানো সম্ভব হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হবে মুদ্রিত বইগুলোর বাইন্ডিং, গাম লাগানো এবং কাটিং নিয়ে। বই ছাপতে হয়তো খুব একটা সময়ের প্রয়োজন হবে না কিন্তু বইগুলো সাজিয়ে রাখা এবং বাইন্ডিংয়ের জন্য প্রেসগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গারও সঙ্কট হবে। আবার একসাথে এত বিশাল সংখ্যার বই ছাপার কাজ করলে ভুলভ্রান্তিরও আশঙ্কা থাকবে।