পূর্বাচলে প্লট পরিবারের মধ্যে ভাট-বাটোয়ারার দুই মামলায় ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ২৯ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে পরোয়ানা জারির আবেদন জানালে শুনানি শেষে আদালত সেটি মঞ্জুর করেন। পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য রাখা হয়েছে আগামি ২৯ এপ্রিল। দুদকের সহকারি পরিচালক (প্রসিকিউশন) আমিনুল ইসলাম জানান, একটি মামলায় ১২ জনম আরেক মামলায় ১৭ জন আসামি। আসামিরা পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এ নিয়ে দুদকের করা ৬টি মামলায় শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের নির্দেশ এলো।
শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছিদ্দিন ও সচিব মো: শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক সদস্য শফি উল হক, পরিচালক মো: কামরুল ইসলাম, পরিচালক মো: নূরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
আরেকটি মামলায় পরোয়ানাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা, পূরবী গোলদার, আনিছুর রহমান, নাসির উদ্দীন, সামসুদ্দীন, নায়েব আলী, খুরশীদ আলম, শরীফ আহমেদ, শহীদ উল্লাহ, ওয়াছি উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম দুই মামলাতেই অভিযুক্ত। এ হিসেবে দুই মামলায় মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো। এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক এস. এম রাশেদুল হাসান বাদী হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধান ও শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় আরও ১৩ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।
এ ছাড়া দুদকের উপ-পরিচালক মো: সালাউদ্দিন বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।
এজাহারের তথ্য মতে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজের মালিকানায় ও তার পুত্র, কন্যা, ছোট বোন, বোনের দুই মেয়ে এক ছেলের নামে ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার সত্ত্বেও তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে।
শেখ হাসি তার দফতর প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মচারীদের প্রভাবিত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
জানা যায়, পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের সদস্য, হাসিনার প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, হাসিনার একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৮টি চার্জশিট দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার ৬টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অর্ভুত্থানে উৎখাত হয়ে গত ৫ আগস্ট ভারতে আশ্রয় নেন হাসিনা।
আপনার মতামত লিখুন :