দেশের করপোরেট সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে আমলাতন্ত্রের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদী চক্র। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত চার্টার্ড সেক্রেটারি পেশায় সৃষ্টি করতে চাইছে নৈরাজ্য। যা ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার আদেশ-নির্দেশ ও আকাক্সক্ষারই বাস্তবায়ন। দেশের করপোরেট দুনিয়ায় বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে অবলম্বন করা হচ্ছে নানা কৌশল।
সুদূরপ্রসারী দুরভিসন্ধি নিয়ে তারা প্রথমত লঙ্ঘন করছে বিদ্যমান আইন ও বিধি-বিধান। হাসিনা ও আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করতে বন্দুক রাখছে আদালতের ঘাড়ে। আইন ও বিধি-বিধানের ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে মনগড়া। কখনো বা আদালতের রায়কে দেখাচ্ছে বৃদ্ধাঙ্গুলি। করপোরেট প্রফেশনালদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ’-আইসিএসবি’র একাধিক সূত্র জানিয়েছে এসব তথ্য।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি, ব্যাংক-বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় একটি ‘করপোরেট প্রশাসন’ দ্বারা। আর্থিক সেবা শিল্পের জন্য যথাক্রমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস, চার্টার্ড বিমাকারক এবং চার্টার্ড সেক্রেটারিগণ করপোরেট প্রশাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে আসছেন। তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও পেশাদার। বিশেষায়িত এই পেশাদার তৈরি করে সরকার নিয়ন্ত্রিত কিছু ইনস্টিটিউট।
এগুলো হচ্ছে- ‘ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’, ‘ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস্ অব বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ ইনসিওরেন্স একাডেমি’ এবং ‘ইনস্টিটিউট চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ’-আইসিএসবি। ৭০০ সদস্যের শেষোক্ত সংস্থাটি পেশাদার চার্টার্ড সেক্রেটারিদের লাইসেন্সিং অথরিটিও বটে।
আইনিএসবি ২০১০ সালে ১৬ জুন প্রণীত ‘চার্টার্ড সেক্রেটারিজ আইন’-এর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। চার্টার্ড সেক্রেটারি পেশার উন্নয়ন, বিকাশ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রণীত হয় এ আইন। আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, গঠিত ‘কাউন্সিল’ দ্বারা পরিচালিত হয় ‘আইসিএসবি’। ছয় ধরনের ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত হয় ১৮ সদস্যের কাউন্সিল। কাউন্সিলে ফেলো ও অ্যাসোসিয়েটদের মধ্য থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সদস্য হলেন ১৩ জন। ১৩ জনের মধ্য থেকে একজন আইসিএসবির প্রেসিডেন্ট, একজন সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
বাকিদের মধ্যে বাণিজ্য মণন্ত্রণালয় মনোনীত অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ মনোনীত একজন কর্মকর্তা, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ-বিষয়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনোনীত কমিশনের একজন সদস্য এবং রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অ্যান্ড ফার্মসের রেজিস্ট্রার রয়েছেন। তবে এ কাউন্সিলের প্রধান ব্যক্তি হচ্ছেন সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট। কাউন্সিলের মেয়াদ প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত। রাজনীতির আকাশে যতই ঝড়-ঝাপটা আসুক না কেন, অরাজনৈতিক আইসিএসবি পরিচালিত হচ্ছিল নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়েই।
কিন্তু গত ৫ আগস্ট হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতির সুযোগে ধ্বংসের চেষ্টা শুরু হয় পেশাদারদের এই সংস্থাটিতে। রাজনীতির সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই প্রতিষ্ঠানটির। তা সত্তে¡ও স্বার্থান্বেষী, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা মহল করপোরেট সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য উঠেপড়ে লাগে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে তারা মেতে ওঠেন প্রতিষ্ঠানটিকে কব্জা করে করপোরেট সেক্টরকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, আইসিএসবির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ। ২০২২ সালে তিনি তিন বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদ এক বছর অবশিষ্ট থাকতেই তাকে সরিয়ে দেয় স্বার্থান্বেষী চক্র। সংস্থার বিধান মতে, প্রথমে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সরাসরি ভোটে। পরে কাউন্সিলররা তাকে ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। কাউন্সিলরদের ভোটে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন যথাক্রমে- এম নূরুল আলম ও এ কে এম মুশফিকুর রহমান। ট্রেজারার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
কাউন্সিলের নির্বাচিত মেম্বাররা হলেন- মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, এম নাসীমুল হাই, মো. আজিজুর রহমান, সেলিম আহমেদ, অলি কামাল, মো. শরীফ হাসান, মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ, আবুল ফজল মোহাম্মদ রুবাইয়াত ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভুইয়া। সরকার মনোনীত প্রতিনিধিরা হলেন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. আমিরুল ইসলাম, আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ-বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. আসাদুজ্জামান নূর, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন কমিশনার এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠানে আসা সদস্যদের ভ‚মিকা অনেকটা আলঙ্কারিক। নীতিনির্ধারণে তাদের ভ‚মিকা নেই বললেই চলে।
আইসিএসবি পরিচালনা করেন মূলত বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে আসীন নির্বাচিত কর্মকর্তারাই। কিন্তু গত ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন আইসিএসবিতে থাকা হাসিনা সরকারের দোসররা। তারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই উল্টো আক্রমণ করে ‘আত্মরক্ষার’ কৌশল নেন। হাসিনার সরকার উৎখাত হওয়ার পর চট করেই ভোল পাল্টে ফেলেন সুবিধাবাদীরা। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম নূরে আলমের নেতৃত্বে সরকারপক্ষীয় দুই ফ্যাসিস্ট প্রতিনিধি অবতীর্ণ হন আক্রমণাত্মক ভূমিকায়।
আইসিএসবিতে তৈরি করেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অত্যন্ত ধূর্ত এই সিন্ডিকেট নিজেরা বাঁচতে উল্টো হাইপ তোলেন আইসিএসবিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত’ করার। অথচ এসভিপি এম নূরুল আলম ছিলেন হাসিনার প্রাতিষ্ঠানিক লোপাটতন্ত্রের বড় সিপাহসালার। আওয়ামী আমলে বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত ‘নগদ’-এর অর্থ লোপাটের মাস্টারমাইন্ড এম নূরুল আলম। এর আগে গ্লাক্সো ফার্মাসিউিটিক্যাল, প্রাইম ইসলামী লাইফ সিকিউরিটিজেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে শেয়ার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
এ হেন এম নূরুল আলম নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটে যুক্ত হন আইসিএসবির সচিব মো. জাকির হোসেন, হাসিনা সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ‘ডান হাত’-খ্যাত বিতর্কিত বিচারক (যুগ্ম-সচিব) আসাদুজ্জামান নূর এবং নৈশভোটের কারিগর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সম্প্রতি ওএসডি) মো. দাউদুল ইসলাম। হাসিনা-পরবর্তী ঘোলাটে পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদউল্লাহকে সরিয়ে আইসিএসবিকে কব্জায় নিতে শুরু করেন কূটচাল। তারা এই মর্মে ধোঁয়া তোলেন যে, আসাদউল্লাহ বেক্সিমকো গ্রুপে চাকরি করেন।
তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর! অথচ তিনি আইসিএসবির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে। বেক্সিমকোতে চাকরি করলেও ব্যক্তি জীবনে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক মতামদর্শ লালন করেন না। অথচ তার গায়ে রাজনৈতিক রঙ চড়ানো হয়।
গত ৫ অক্টোবর ছিল আইসিএসবির করপোরেট গভর্ন্যান্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান সফল করতে অর্থ উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ অতিথিদের দাওয়াত করেন প্রেসিডেন্ট আসাদউল্লাহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল তার। কিন্তু অনুষ্ঠানের দুদিন আগে থেকে বাধা সৃষ্টি করেন এসভিপি এম নূরুল আলম, সরকারপক্ষীয় প্রতিনিধি মো. দাউদুল ইসলাম এবং মো. আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে এলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে-মর্মে ভয় দেখানো হয় আসাদউল্লাহকে। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করতে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।
উদ্দেশ্য, অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে নূরুল আলমের সভাপতিত্ব করা। পরে সম্মান, আত্মমর্যাদাবোধ ও প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর শৃঙ্খলার স্বার্থে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ৭ অক্টোবর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন আসাদ। তবে তিনি কাউন্সিল সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করছেন না-মর্মে পরিষ্কার উল্লেখ করেন পদত্যাগপত্রে।
এসভিপি হিসেবে ১৮ অক্টোবর কাউন্সিল সভা ডাকেন এম নূরুল আলম। এতে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ। মিটিংয়ে তাকে কোনো কথাই বলতে দেয়া হয়নি; বরং মো. দাউদুল ইসলাম, নূরুল আলম, আসাদুজ্জামান গং মিটিং থেকে অত্যন্ত অসম্মানজনকভাবে বের করে দেন তাকে।
চার্টার্ড সেক্রেটারিজ আইন, ২০১০-এর (১০) ধারায় কাউন্সিল সদস্যের পদত্যাগের বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ১. সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বা, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ শূন্য থাকিলে, ভাইস প্রেসিডেন্টের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্টের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যগণ পদত্যাগ করিতে পারিবেন। ২. পদত্যাগপত্র গৃহীত হইবার তারিখ হইতে উহা কার্যকর হইবে এবং কাউন্সিলে সংশ্লিষ্ট পদটি শূন্য হইবে। কিন্তু এম নূরুল আলম গং আইনের এ ধারাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখান।
প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগের সাথে সাথে আসাদউল্লাহর কাউন্সিল সদস্য পদও থাকে না-মর্মে ভুল ব্যাখ্যা দেন তিনি। তার সঙ্গে সুর মেলান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দাউদুল ইসলাম ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান নূর। কাউন্সিলদের একটি অংশ এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চাইতে বললেন। মতামত চাওয়া হলে মন্ত্রণালয় নূরুল আলম ও দাউদের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী আইনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতেই মতামত দেয়। পরে কাউন্সিলের ১০৬তম সভায় মন্ত্রণালয়ের এ মতামতকে সমর্থন দেন সাত সদস্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতামতকে রিফিউজ করেন তিন সদস্য। দুজন এ বিষয়ে আইনগত মতামত চাওয়ার কথা বললেন।
আবারো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে একই ওপেনিয়ন দেয়া হয়। এর মধ্যে তড়িঘড়ি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নূরুল আলম গং। নিজেকে ‘ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা দিয়ে ডিরেক্টরিও প্রকাশ করেন। তাতে সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি আসাদউল্লার নাম। এ পর্যায়ে ১০৬তম সভার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মোহাম্মদ আসাদউল্লাহ। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আকরাম হোসন চৌধুরী এবং বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার ডিভিশন বেঞ্চ গত ২৪ ফেব্রæয়ারি আইসিএসবির ১০৬তম সভার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেন।
একই সঙ্গে এম নূরুল আলম নেতৃত্বাধীন কমিটির কার্যক্রমকে দুই মাসের জন্য স্থগিত করেন। এ আদেশের আপিল করেন নূরুল আলম। শুনানি শেষে আপিল বিভাগের চেম্বার জাস্টিস ‘নো-অর্ডার’ দেন। এর ফলে আসাদউল্লাহর আইনত সদস্য পদ ফিরে পান। তবে আপিল বিভাগের এ আদেশও বাস্তবায়নেও টালবাহানা করছেন এম নূরুল আলম। এর ফলে আইসিএসবির মধ্যে বিরাজ করছে অস্বস্তি ও নৈরাজ্যকর অবস্থা। এ পরিস্থিতির অবসান না হলে করপোরেট সেক্রেটারিজদের মধ্যে নেমে আসবে হতাশা ও বিশৃঙ্খলা। এতে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে বেসরকারি করপোরেট সেক্টর।
সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকরে গড়িমসি কেন? জানতে চাইলে আইসিএসবির স্বঘোষিত ‘ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট’ (যদিও আইনে এ নামে কোনো পদ নেই) এম নূরুল আলম বলেন, দু’জন সরকারি পর্যবেক্ষক সদস্য না থাকলে এ ঝামেলাগুলো হতো না। তিনি বলেন, আইসিএসবির সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান ছিল গত ৫ অক্টোবর। অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা অতিথি ছিলেন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হলো, আসাদউল্লাহ সাহেব দায়িত্বে থাকলে তারা অনুষ্ঠানে আসবেন না। এটি সরাসরি আমাকে জানানো হয়নি। জানানো হয় আইন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে দু’জন পর্যবেক্ষক সদস্য রয়েছেন তাদেরকে।
আইসিএসবির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার ওপর দায়িত্ব এসে পড়ে সভাপতিত্ব করার। হাইকোর্ট ১০৬তম সভার সিদ্ধান্ত বাতিল করলেও সেটির বিরুদ্ধে যে আপিল হয়েছে এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না বলে দাবি করেন এম নূরুল আলম। তিনি বলেন, আমি জেনেছি সরকার (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) চেম্বারকোর্টে গিয়েছে। সেখানে ‘নো-অর্ডার’ হয়েছে। এখন আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করছি। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর নীতিনির্ধারণী নয়- পরামর্শক ছিলেন বলে জানান নূরুল আলম। নিজে এবং পুরো পরিবার বিএনপি সমর্থক দাবি করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা বিএনপির কমিটিতে ছিলাম। বর্তমানে প্রাইভেট প্রাক্টিস করছি। সম্প্রতি বেক্সিমকো গ্রæপের তিনটি প্রতিষ্ঠানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে আমাকে রাখা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :