স্টাফ রিপোর্টঃ ঘোষণা দিয়েও রাজধানীর জিরো পয়েন্টে এলো না আওয়ামী লীগ। ট্রাম্পের ছবি হাতে নতুন কৌশলে আসার ঘোষণা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের এই ঘোষণা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় ছাত্র-জনতা। পাল্টা কর্মসূচী দিয়ে শনিবার রাত থেকেই অবস্থান নেয় তারা। ফ্যাসিবাদে রূপ নেওয়া আওয়ামী লীগের ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে ছিল সরকারও। তবে একজন ছাত্র সমন্বয়ক আওয়ামী লীগকে এক মিনিটের জন্য হলেও জিরো পয়েন্টে আসার আহ্বান জানান। কিন্তু না। প্রকাশ্যে কেউ আসেনি। তবে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে জনতা এবং আাইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
গতকাল রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল রুখে দিতে এবং বিচারের দাবিতে শাহবাগ থেকে শুরু করে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে শনিবার রাত থেকেই তারা এখানে জড়ো হন। সকালে দলে দলে লোকজন আসতে দেখা যায়। দুপুরে স্থানগুলো লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়। রীতিমত জনতার ঢল নামে রাজধানীতে।
শহীদ নূর হোসেন স্মরণে ও ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবিতে বিকেলে জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বিপরীতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে একই জায়গায় গণজমায়েতের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার সকালে দেখা যায়, গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে অবস্থান নেন ছাত্ররা। পাশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখানে সাঁজোয়া যান ও জলকামানের গাড়ি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকে পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও আওয়ামী লীগকে কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ প্রস্তুতির কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার রাতে দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আওয়ামী লীগ জানায়, রোববার শহীদ নূর হোসেনের স্মরণে ও ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবিতে জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি।
প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, প্লিজ, আপার অনুসারী যারা আছেন, তারা একটা মিনিটের জন্য হলেও রাস্তায় নামেন। দেখা না হলে তো কথা হবে, তাই না। প্লিজ রাস্তায় নেমে আসেন, আপনাদের সঙ্গে আমরা একটু দেখা করতে চাই, কথা বলতে চাই। দেশের প্রত্যেকটি মানুষ আপনাদের একটু দেখতে চায়। আপনারা কোথায়?
আওয়ামী লীগ নেতাদের বিদেশে বসে না থেকে দেশে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা বলছেন, আপনাদের সঙ্গে নাকি দেশের জনগণ আছে। যদি জনগণ থাকে, তাহলে তাদের নেত্রী বিদেশে কেন পালিয়ে গেল? আপনারা সবাই পালালেন কেন? মূর্খের দল কিছুই বোঝে না। ওদের কোনো আত্মমর্যাদা নেই।
এদিকে কর্মসূচি ঘোষণা করলেও জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে দেখা নেই আওয়ামী লীগের। গতকাল সকাল থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ ছাত্র-জনতা সেখানে অবস্থান করছেন। আবশ্য আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সমর্থক সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
আওয়ামী লীগের এমন ঘোষণার পর পাল্টা কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা রোববার দুপুর ১২টা থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণা অনুযায়ী, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে তৈরি করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ। মঞ্চের সামনে দুপুর ১২টা নাগাদ উপস্থিত হন কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা দখলে নেন পুরো জিরো পয়েন্ট এলাকা।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে নেন বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এ ছাড়া গুলিস্তান এলাকায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে।
অন্যদিকে, বিকেল ৩টায় আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তাদের দেখা মেলেনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতাকর্মীকে গুলিস্তান এলাকায় আসতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে ৯ জন পুরুষকর্মী গণপিটুনির শিকার হন। মারধরের পর তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ৩ জন ছিলেন নারীকর্মী। তারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় এসে আবার চলে যান।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে যারা গণহত্যার সাথে জড়িত, যতদিন পর্যন্ত তাদের বিচার নিশ্চিত না হয় ততদিন তাদের জনসম্মুখে আসার কোনো অধিকার নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার লগি বৈঠা থেকে শুরু হতে হবে। তাদের নৃশংসতা দেখা গেছে পিলখানা হত্যাকা-ে, শাপলা চত্বরে তারা অনেক আলেমকে রক্তাক্ত করে মেরেছে। আলেম সমাজকে দাড়ি টেনে টেনে তারা বায়তুল মোকাররম থেকে বের করে দিয়েছে। গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
হাসনাত জানান, আওয়ামী লীগ ফিরবে তবে তারা বিচারের জন্য ফিরবে। গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের নেতাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। দুই হাজার শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে তাদেরও প্রতিহত করা হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে হাসনাত বলেন, হিন্দুস্থানে বসে হুংকার দেবেন আর গুলিস্তানে সংঘর্ষ করবেন, সেই সুযোগ ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের ছাত্রজনতা আপনাদের দেবে না। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ প্রাসঙ্গিক কি প্রাসঙ্গিক না সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে ৫ আগস্ট।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আগে রাষ্ট্রের যৌক্তিক সংস্কার হবে এবং নির্বাচন এর একটি অংশ। আওয়ামী লীগ সরকার পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিয়েছে। নির্বাচনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সেগুলোর সংস্কারের পরে নির্বাচন হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে বা আহত হয়েছে তারা শুধু ভোটের জন্য এসব করেনি। আহত অনেকের ভোটার আইডি এখনো নেই। তারা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে। আপনারা যদি ভাবেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে আপনাদের হাতে সংস্কারের কাজ দিয়ে আন্দোলনকারীরা ঘরে চলে যাবে তাহলে ভুল ভাবছেন।
জেনেভায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, জুলুমকারীর ওপর উদারতা দেখানোর সুযোগ নেই। তরুণ প্রজন্ম এবং বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিভাজনের রেখা না টানার আহ্বান জানান তিনি।