প্রায় দুই যুগ পর অবশেষে বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান হওয়ায় প্রায় ১৬ বছর প্রতিহিংসার আগুনে পুড়েছে বগুড়া। তবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন বাস্তবায়নের ঘোষণার পর বগুড়া বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ২০ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনের শেষ পৃষ্ঠায় ‘প্রতিহিংসায় বগুড়ায় ২৮ বছরেও উড়ছে না বিমান’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর আগে ‘কী অপরাধ ছিল বগুড়াবাসীর’ শিরোনামেও সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদগুলো নজরে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের। এর মধ্যে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন করার এবং বগুড়ায় বিমানবন্দরসহ থমকে যাওয়া উন্নয়ন কাজগুলোর সংস্কার ও বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা।
এরপর অন্তর্বর্তী সরকার বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সম্প্রতি সরেজমিন বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করে কমিটির সদস্যরা সরকারের কাছে বিমানবন্দর চালুর জন্য সুপারিশসহ প্রতিবেদনও দাখিল করেন। এরপর বাণিজ্যিকভাবে বগুড়া বিমানবন্দর চালু করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে বেবিচক। সে অনুযায়ী প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে বগুড়া বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, ডাম্বল এবং এপ্রোন সারফেস এরিয়াতে সারফেসের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বগুড়া বিমানবন্দর সচল হলে বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনা করা যাবে। তিনি আরও বলেন, দেশের পরিত্যক্ত বিমানবন্দর সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরে অন্তত তিনটি বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু করবে বেবিচক।
পরিত্যক্ত এসব বিমানবন্দর চালুর পাশাপাশি ফ্লাইট বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো পর্যায়ক্রমে সচল করতে অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যেখানে আগে শেষ হবে, সেগুলো আগে সচল হবে। তবে সবার আগে চালু হবে বগুড়া বিমানবন্দর। আসছে জুনে সব প্রস্তুতি শেষ হলে জুলাইয়ে বগুড়ায় উড়বে বিমান।
বগুড়া পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার উদ্যোগের পরপরই বিমানবন্দর চালুর খবরে বগুড়াসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে আনন্দ-উল্লাস। বগুড়াবাসী বলছেন, দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে চলছে। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু হলে উত্তরাঞ্চলে পর্যটন খাত ও অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। ঘুরে দাঁড়াবে ব্যবসাবাণিজ্য। চালু হবে পরিত্যক্ত শিল্পকারখানা।
বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের আমলে বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ জন্য ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও অনুমোদন পায়। ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার।
১৯৯৬ সালে প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০০০ সালে। কিন্তু ২৮ বছরেও বাণিজ্যিকভাবে বিমান আর ওড়েনি। বগুড়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সিপার আল-বখতিয়ার জানান, বগুড়ায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাড়ি হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ বছর বিমানবন্দর চালুর বিষয়টি আমলে নেয়নি।