বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ- ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বর্তমান সময়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের অন্যতম। যেটা আমাদের মাঝখান থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বিগত সময়ে।’ রোববার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মানবাধিকার নিশ্চিতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতিসঙ্ঘের রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্ব ঘৃণিত গণহত্যাকারী হিসেবে শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যা এবং এর প্রতিটি ডাটা সেখানে চিত্রায়িত আছে। বাংলাদেশের গণহত্যায় শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ ছিল এটি সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনাকে এখনো আমরা অনুশোচনা করতে দেখিনি। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এখন পর্যন্ত গণহত্যার দায় স্বীকার করে অনুশোচনা করে বাংলাদেশের রাজনীতি করবো একথা বলতে শুনিনি। এটা ভাবতে অবাক লাগে যে উল্টো তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানকারী সাধারণ মানুষদের যেন অপরাধ হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হলে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে। যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিক বাংলাদেশের মানুষ আনন্দে গ্রহণ করবে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অগতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে, যেকোনো অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে। যেন সকল মানুষ আপন করে নিতে পারে এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতিক চর্চা আমাদের চালু করতে হবে।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনারা শুধু আয়নাঘরের কথা শুনেছেন বা আমাদেরকে গুম করার কাহিনী শুনেছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের তো বক্তব্য দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা আয়নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তারা কথা বলছেন। কিন্তু যাদের এখনো কোসো হদিস পাওয়া যায়নি, তারা তো কথা বলতে পারছে না। আপনারা হয়তো শুনে আন্দাজ করতে পারেন, যাদেরকে গুম করা হয়েছিল তাদেরকে কিভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, গুম-খুনের ইতিহাস।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের অন্যতম। যেটা আমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বিগত সময়ে। সুতরাং অধিকারের বিভিন্ন ক্লাসিফিকেশন বা বিভিন্ন রকমের ধরন বা বিভিন্ন রকমের ইনক্লুশন হবে। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়বে, মৌলিক অধিকারের অবস্থাও একই হবে। যে মৌলিক অধিকার আগে পাঁচটি ছিল সামনে ছয়টি হবে, সাতটা হবে, এমন বাড়তে থাকবে।
রমজানে দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টাকে গরিব মানুষের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যাতে পরিস্থিতি এমন হয় যে সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষমতার মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পায়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। অন্যথায় মানুষ আপনাদের সমালোচনা করবেই।
সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধানে যদি মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারগুলো শক্তিশালী থাকে এবং তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের আইন প্রণীত হয়; সেই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যদি এমন কোনো সংস্থা থাকে যার উপরে সরাসরি প্রশাসন বিভাগের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না, তখনই মানবাধিকারগুলো নিশ্চিতভাবে বাস্তবায়িত হয়। মানবাধিকার বিকাশের যে ভূমিকা, ওই ভূমিকা অবশ্যই রাজনীতিবিদদেরই নিতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি বলেন, সংস্কার আমরা চাই, আমরাই সবার আগে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। এ সরকার (আওয়ামী লীগ) কিভাবে পতন হবে, সেটা জানতাম না। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যদি আমরা জয়ী হই, তাহলে সকলকে নিয়ে সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করব। সকল রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলোতে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কার করব।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে সরকার কী করবে, জনগণের সামনে তা দৃশ্যমান করা দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচন প্রক্রিয়া যতো দীর্ঘায়িত হবে, চলমান সমস্যা আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, জাতির মধ্যে যে অস্থিরতা রয়েছে, তা কাটাতে হলে একটি নির্বাচন প্রয়োজন। যতো দিন যাচ্ছে গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রা পথ বাধাগ্রস্থ করার কূটকৌশল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু পুলিশ দিয়ে নয়, রাজনীতি দিয়ে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করতে হবে। তাহলেই ফ্যাসিবাদের মূল উপড়ে ফেলা যাবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।