স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী | ছবি - ইন্টারনেট
বাঁধার পরও ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা নতুন করে ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মিয়ানমার বাংলাদেশ বর্ডার নিরাপদ আছে দাবি করে তিনি বলেছেন, আমাদের সীমান্ত কিন্তু পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে। এখানে কোনো সমস্যা নাই। তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডারটা দখল করে আছে আরাকান আর্মি। ভবিষ্যতে এটা কার হবে? মিয়ানমার না কি আরাকান আর্মির, তা বলা তো মুশকিল। সেজন্য বিজিবি উভয়পক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। বাধার পরও ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা নতুন করে ঢুকে পড়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) প্রশিক্ষণ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নবসৃজিত উখিয়া ব্যাটালিয়নের (৬৪ বিজিবি) শুভ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন পরবর্তীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সাথে আরো চারটি ব্যাটালিয়ন যুক্ত হলো। এতে বিজিবির সক্ষমতা কিছুটা বৃদ্ধি পেল। আমরা চেষ্টা করছি আরো বাড়ানোর জন্য। কারণ পাশ্ববর্তী দেশের তুলনায় আমাদের বিজিবির সক্ষমতা আরো বাড়ানো দরকার।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই এলাকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি মাদক চলে আসে। রোহিঙ্গা সমস্যা তো রয়েই গেছে, মাদক চোরাচালান বন্ধে এখানে এই নতুন ব্যাটালিয়ন খুবই দরকার ছিল। আশা করি, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রয়োজনে আরো যদি ব্যাটালিয়ন দরকার হয়, তবে ভবিষ্যতে করব। তবুও বর্ডারে যেন নিরাপত্তা এবং মানুষ যেন শান্তিতে থাকে, সেটা আমরা করব।
বর্ডারের মানুষ আতঙ্কে আছেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডারে নিরাপত্তা প্রশ্নে আরাকান আর্মি নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখানে তো সত্যিই একটা সমস্যা আছে। কারণ অন্য দেশ মিয়ানমার। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত বর্ডারটা দখল করে আছে আরাকান আর্মি। ভবিষ্যতে এটা কার হবে? মিয়ানমার না কি আরাকান আর্মির- তা বলা তো মুশকিল। আমরা অফিশিয়ালি জানিও না। তাই আমাদের উভয়পক্ষের সাথেই সুসম্পর্ক রাখতে হচ্ছে, সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য।
তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দাবি করেছেন, আমাদের সীমান্ত কিন্তু পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে। এখানে কোনো সমস্যা নাই।
রোহিঙ্গা ও মাদককে সমস্যা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাধার পরও ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা নতুন করে ঢুকে পড়েছে। অনেক সময় মানবিক কারণে সেটা পারাও যায় না। সাথে বিদেশীদের একটা প্রেসার আছে, তাদের রাখার জন্য ফেরত না পাঠাই সেজন্য। এজন্য আমরাও তাদের সাহায্য সহযোগিতা বাড়াতে বলেছি। আর এটাও তো ঠিক যে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে একটা জায়গায় আটকা।
তিনি বলেন, সরকার কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ, সচেতন। এজন্য উপদেষ্টা সমমর্যাদার খলিলুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও চেষ্টা করে যাচ্ছেন, নেগোসিয়েশনের চেষ্টা চলছে। আশা করি, সমস্যাটা দু’টিই সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের বর্ডার কিন্তু অনেক নিরাপদ। ছোটখাটো একটা সমস্যা সব বর্ডারেই থাকে।
সীমান্ত নিরাপত্তার কথা যখন বলছেন, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবায় বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তারপরেও কিন্তু সীমান্ত হত্যার মতো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এটা কমানোর জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা পুরোপুরি আমাদের হাতে নাই, কারণ অস্ত্রটা তো তারা ব্যবহার করছে। আপনারা যা চাচ্ছেন, আমি তো সেটা অফিশিয়ালি বলতে পারছি না।
এর আগে নবগঠিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি), স্টেশন সদর দফতর, ঢাকা, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ঢাকা এবং কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এই বাহিনীর রয়েছে অত্যন্ত গৌরবময় ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাহসী অগ্রণী ভূমিকা মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি সদস্য ও জুলাই-আগস্ট ২০২৪ মাসে সংঘঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সকল শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ওপর ন্যাস্ত। সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা করা, চোরাচালান, নারী ও শিশু এবং মাদক পাচার সংক্রান্ত অপরাধসহ অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্র সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ, অভ্যন্তরীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রশাসনকে সহায়তাসহ সরকার কর্তৃক অর্পিত অন্য যেকোনো দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে বিজিবির প্রতিটি সদস্য অঙ্গীকারবন্ধ।
‘আমি আশা করি, নবগঠিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি), স্টেশন সদর দফতর, ঢাকা, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ঢাকা এবং কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, গাজীপুরের সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবেন। বিজিবি পূর্ণগঠনের আওতায় আজ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজিবিতে আরো নতুন চারটি ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হলো। নতুন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তায় বিজিবির যুগান্তকারী এ সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতে পেরে গর্বিত।’
নবসৃজিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি), স্টেশন সদর দফতর, ঢাকা, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ঢাকা এবং কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, গাজীপুরের সকল অফিসার, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার, বিভিন্ন পদবির সদস্য ও সৈনিক এবং অসামরিক কর্মচারীবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমার প্রত্যাশা, আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে দেশপ্রেম ও কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় দিবেন। নতুন এই ইউনিট সমূহ বিজিবির কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, বিশেষভাবে উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) সীমান্তে পাশ্ববর্তী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাটালিয়ন ও বিওপিগুলোর সাথে আমাদের ব্যাটালিয়ন বিওপির দায়িত্বপূর্ণ আনুপাতিক অসামঞ্জস্যতা কিছুটা কমে আসবে। তাই আপনারা আরো ভালভাবে দেশের সীমান্তে টহল ও নজরদারী করতে সক্ষম হবেন।
এছাড়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ ও মাদকের আগ্রাসনরোধে উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
‘এটা খুবই স্বাভাবিক যে নতুন ইউনিট হিসেবে কিছু সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাহিনী তথা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই সাময়িক অসুবিধা মেনে নিয়েই আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মনে রাখবেন, একটি আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যে বাহিনীর সাফল্য অর্জনে প্রত্যেককে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, নতুন ইউনিটের সীমাবদ্ধতাগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। সকলের কঠোর পরিশ্রম ও নিরলস প্রচেষ্টায় সব ধরনের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতা জয় করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নতুন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করব। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই নতুন ইউনিটসমূহ অচিরেই দক্ষ ও আদর্শ ইউনিটের মর্যাদায় সুপ্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হবে।’
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সীমান্ত রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী-শিশু পাচার রোধসহ যেকোনো ধরণের সীমান্ত অপরাধ দমন, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষাসহ সরকার কর্তৃক অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব সুশৃঙ্খলার সাথে পালন করে বিজিবির সুনাম ও মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করবেন।