ফাইল ছবি
বাংলাদেশের জেলেরা যখন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখেন, তখন প্রতিবেশী দেশের জেলেরা ঠিকই মাছ ধরেন। শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমানায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যান এ সময়। এতে তাঁরা লাভবান হলেও দেশের জেলেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় বিধিনিষেধ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিধিনিষেধ কমিয়ে কীভাবে সাগরে মাছ ধরার সময় বাড়ানো যায়, সেটা ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ বন্ধের সময় পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মৎস্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির প্রধান প্রজনন মৌসুম এপ্রিল থেকে জুলাই মাস। সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সুষ্ঠু প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ ছাড়া প্রতিবছর অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বিপণন নিষিদ্ধ থাকে।
১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস সারা দেশে জাটকা ধরা নিষিদ্ধ। এর বাইরে জাটকা সংরক্ষণে অভয়াশ্রমগুলোয় আলাদা করে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এভাবে বছরজুড়ে বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে থাকেন বাংলাদেশের জেলেরা। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতের আওতাধীন বঙ্গোপসাগর এলাকায় প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬১ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকে। আর মিয়ানমারে (বঙ্গোপসাগর) মাছ ধরা বন্ধ থাকে প্রতিবছর ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ৯১ দিন।
মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখার সময় পুনর্নির্ধারণে সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয়ে অংশীজনদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সভায় অংশ নিয়েছিলেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন সাগরে মাছ ধরা বন্ধে অবরোধ ৬৫ দিন এবং ইলিশ ধরা বন্ধে ২২ দিন অবরোধ রয়েছে। আমরা দুটি অবরোধ মিলিয়ে ৬৫ দিন করার বিষয়ে মত দিয়েছি।’
জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ বন্ধের সময় পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে মৎস্যজীবী প্রতিনিধিসহ অংশীজনের মতামত নিয়েছি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি কমিটির তালিকা এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। ওই কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্নির্ধারণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞানভিত্তিক মাছের প্রজননও যাতে ঠিক থাকে এবং জেলেদের সমস্যাও যাতে নিরসন হয়, দুটি জিনিস মাথায় রেখে সময় পুনর্নির্ধারণ করা হবে।’
মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় কমানোর চেয়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমন্বয় বেশি জরুরি বলে মনে করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মৎস্য গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘মা ইলিশ ও অন্যান্য মাছের প্রজনন সময়ে নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে। সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় কমানোর চেয়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত।’