‘শোন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ (চতুর্দশ খ্রিস্টাব্দের বৈষ্ণব কবি চন্ডীদাস)। অথচ হিন্দুত্ববাদী ভারতের শাসকদের কাছে বাংলাদেশের মানুষের জীবনের চেয়ে ভারতের গরুর মর্যাদা অনেক বেশি! সীমান্তে প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশিদের হত্যা করছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ। অথচ ভারতের একটি গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করা নিয়ে ভয়াবহ কা- ঘটিয়েছে মোদির ভারত। একটি গরুর নিরাপত্তা এবং সন্মানের সঙ্গে গরুটি ভারতে ফিরিয়ে নিতে দুই দেশের বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক করতে হয়েছে।
জানা গেছে, দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় মালিকের কাছে গরু হস্তান্তর করেছে বিজিবি। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সীমান্ত অতিক্রম করেছিল বাংলাদেশে আসে গরুটি। একটি গরু বাংলাদেশে চলে গেছে এ নিয়ে ভারতের মোদি সরকারের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তৎপর হয়ে পড়ে দিল্লির প্রশাসনযন্ত্র ও বিএসএফ। গরুটি যাতে মর্যাদার সঙ্গে ভারতে ফেরত নেয়া যায় সে লক্ষ্যে দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) পতাকা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গতকাল দুপুরে হিলি সীমান্তের মেইন পিলার ২৮৫/০৩ এস সংলগ্ন শূন্য রেখায় বিজিবি ও বিএসএফের সদস্যদের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর গরুটি ফেরত দেয়া হয়। পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জয়পুরহাট-২০ বিজিবির হিলি বিজিবি সিপি ক্যাম্পের কমান্ডার শাহাদাৎ হোসেন ও ভারতের বিএসএফের হিলি-১ ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর শিবচারন নেতৃত্ব দেন।
হিলি বিজিবি সিপি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার শাহাদাৎ হোসেন জানান, গতকাল সন্ধ্যায় ভারতীয় এক মালিকের গরু সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে ভারতের পক্ষ থেকে গরুটি ফেরত চেয়ে আবেদন করলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে গতকাল দুপুরে গরুটি ফেরত দেয়া হয়েছে। এ সময় বিএসএফের সদস্য ও গরুর মালিক উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরো বলেন, সীমান্তে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে বিজিবি বরাবরই আন্তরিক। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
একটি ভারতীয় গরুর মর্যাদা রক্ষায় হিন্দুত্ববাদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যতো দায়িত্বশীল বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে তিনি ততই উদাসীন। এই ভারতীয় বিএসএফ কুড়িগ্রামের বাংলাদেশের ফেলানিকে গুলি করে হত্যার পর কাটাতারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছিল। প্রতিদিন গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর হন্তারকরা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের খবরে এসেছে, সীমান্তে গত ১৫ বছরে ছয় শতাধিক বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। অথচ ওই সময় দিল্লির নাচের পুতুল শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। সেই হাসিনা এখন পালিয়ে ভারতে গিয়ে দিল্লি আশ্রয়ে রয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে অন্তত ৬০৭ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অধিকার নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০৯ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিএসএফ সদস্যদের হাতে অন্তত ৫৮২ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে ৭৬১ জন।
সূত্র জানায়, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে ভারতকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যে সীমান্ত সম্মেলন বা পতাকা বৈঠক হয়। সেখানে প্রতিবারই সীমান্তে আর গুলি চালাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর রক্ষা হয় না। গত কয়েক বছরে সীমান্তে যতগুলো হত্যাকা- ঘটেছে তার একটিরও বিচার হয়নি। এমনকি বিএসএফ বা ভারত সরকার হত্যাকাণ্ডের কোনো ঘটনায় কখনো উদ্বেগও প্রকাশ করেনি। আন্তর্জাতিক আইন কোনো বাহিনীকে বিশ্বের কোথাও নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের গুলি বা নির্যাতন করার অনুমতি দেয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জবাবদিহির বাইরে থাকার কারণেই মূলত সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। তাই সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের একের পর এক হত্যা করে চলছে বিএসএফ। অথচ ভারতের একটি গরুর জন্য পতাকা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এটাই হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের চরিত্র।
কয়েক বছর আগে ভারতের আসামের জঙ্গলের একটি হাতি বন্যার পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বাংলাদেশে ভেসে এসেছিল। সে হাতিকে নিয়ে ভারত ভয়াবহ কা- করেছে, অথচ সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা করছে নির্বিচারে।