‘বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী থাকার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অপপ্রচার’ – ছবি : সংগৃহীত
ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার এক তদন্তে ভারতীয় গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন অপপ্রচার বলে প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশে টহল দিচ্ছে।
মঙ্গলবার সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, একটি বাহিনীর সদস্যদের একটি ভিডিও কনটেন্টে দেখানো হয়েছে এবং যা কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘আজ তক বাংলা’ তাদের প্রতিবেদনে ব্যবহার করেছে। তারা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত দল ক্রাইসিস রেসপন্স টিম বা সিআরটির সদস্য, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর নয়।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যেখানে দাবি করা হয় যে পাকিস্তানি বিশেষ বাহিনী রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে। একই ভিডিও ভারতীয় গণমাধ্যমে ঢাকা শহরের দৃশ্য হিসেবে প্রচারিত হয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, ভারতের ‘আজ তক বাংলা’ তাদের এক ভিডিও প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের এসডব্লিউএটি দলের সদস্যরা ঢাকায় পৌঁছেছেন এবং এর প্রমাণ হিসেবে ওই ভিডিওটি দেখিয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশী আইনজীবী নিঝুম মজুমদারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি (৬ মিনিট ২০ সেকেন্ড) দাবি করেন, ‘আমার কাছে এটি অভূতপূর্ব মনে হচ্ছে যে পাকিস্তানি সেনারা এমনভাবে ঢাকার রাস্তায় এসেছে এবং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সদস্য বা পাকিস্তানি সেনারা এসডব্লিউএটির ছদ্মবেশে বাংলাদেশে আসছে।’
রিউমার স্ক্যানার টিমের তদন্তে জানা গেছে, ভিডিওটি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর টহলের দৃশ্য নয়। বরং ভিডিওতে দেখা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ দল ক্রাইসিস রেসপন্স টিম বা সিআরটির সদস্য।
রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদকে ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট-১-এ নিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা প্রদানের কাজে এই সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তদন্তের শুরুতে ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পুলিশের ওই বিশেষ বাহিনীর এক সদস্যের ইউনিফর্মের পেছনে সিআরটি লেখা রয়েছে। এছাড়া, অন্য এক সদস্যের পোশাকে বাংলাদেশের পতাকাও দেখা যায়।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটি আলোচিত ভিডিওটির সাথে হুবহু মিলে যায়। ভিডিওর শিরোনাম থেকে জানা যায় যে এটি রাজশাহী আদালত প্রাঙ্গণে ধারণ করা এবং ভিডিওতে দেখা বাহিনীর নাম ক্রাইসিস রেসপন্স টিম বা সিআরটি।
পরে সিআরটি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, অনলাইন মিডিয়া জাগো নিউজ২৪-এর ইউটিউব চ্যানেলে ১৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কারাগারের গাড়ি ঘিরে উত্তেজনা : সাবেক এমপি আসাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ।’
জাগো নিউজ জানায়, ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদকে রাজশাহী মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট-১-এ নিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি-জামায়াতের ক্ষুব্ধ কর্মীরা তার প্রিজন ভ্যান আক্রমণ করে।
প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, ওই সময় তাকে নিরাপত্তা দানকারী বাহিনীর ইউনিফর্ম আলোচিত ভিডিওর বাহিনীর ইউনিফর্মের সাথে সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। ইউনিফর্মের পেছনে সিআরটি লেখাও স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
এছাড়া, ভিডিওর অবস্থানটি আদালত প্রাঙ্গণের সাথেও পুরোপুরি মিল রয়েছে। পরে সিআরটি নিয়ে আরো তদন্তে জাগো নিউজ২৪-এ ২০১৮ সালের ২৯ আগস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, সিআরটি বা ক্রাইসিস রেসপন্স টিম বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত দল।
প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, এই দলটি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা এবং মাদক চোরাচালান প্রতিরোধসহ বড় সহিংস পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর পর সিলেটে আনুষ্ঠানিক মহড়ার মাধ্যমে পুলিশের এই বিশেষ দলটি তার কার্যক্রম শুরু করে। অতএব, পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে টহল দিচ্ছে ইন্টারনেটে প্রচারিত এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা বা এক ধরনের অপপ্রচার।
সূত্র : বাসস
আপনার মতামত লিখুন :