বাংলাদেশে পুশ-ইন হওয়া সোনালি খাতুন ভারতে ফিরে নির্মমভাবে মারধরের সেই কথা জানালেন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ৬:৫৭ অপরাহ্ণ /
বাংলাদেশে পুশ-ইন হওয়া সোনালি খাতুন ভারতে ফিরে নির্মমভাবে মারধরের সেই কথা জানালেন

করেছিল ভারতীয় কর্তৃপক্ষ,

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক গর্ভবতী সোনালি খাতুনসহ ছয়জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছিল বিএসএফ। নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আটকে থাকার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি তাদেরকে ফিরিয়ে নেয় ভারত। ঘরে ফেরার পর বৃহস্পতিবার সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান সোনালি খাতুন।

‘আমি ভেতর থেকে ক্লান্ত। সবচেয়ে খারাপ দিক হল, সমস্ত নথি দেখানো সত্ত্বেও, কেউ আমাদের কথা শোনেনি,’ তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন।

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার পাইকার গ্রামের ২৬ বছর বয়সী গৃহকর্মী সোনালি খাতুনকে এই বছরের জুনের শেষের দিকে দিল্লির রোহিণীতে পরিচয় যাচাই অভিযানের সময় আটক করা হয়েছিল। তিনি বলেন, তিনি এবং তার স্বামী দানিশ শেখ তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছে থাকা সমস্ত নথিপত্র আধার, প্যান এবং রেশন কার্ড দেখান। ‘আমি সেই রাতেই হোয়াটসঅ্যাপে আমার শ্বশুরবাড়ির পরিচয়পত্রের প্রমাণপত্রও দ্রুত উপস্থাপন করি, কিছুই কাজ করেনি’।

‘আমরা আমাদের ক্ষমতায় সবকিছু করেছি,’ সোনালি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি নথিপত্র দেখিয়েছি। আমরা তাদের বারবার বলে চলেছি, আমরা বাংলাদেশী নই। আমরা ভারতীয়। আমাদের মতো মানুষের কথা কে শুনবে?’

বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিসের নির্বাসন আদেশের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গত ২৬ জুন পুলিশ তাদের ঘর থেকে জিনিসপত্র জব্দ করে এবং তাদের আট বছরের ছেলে সাবির শেখকে গুয়াহাটিতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে, তিনি বলেন, তাদের তাড়াহুড়ো করে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে পাঠানো হয়েছিল।

৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে স্থানীয় পালকার থানায় নিখোঁজ ব্যক্তির অভিযোগ দায়ের করার পর, সোনালির বাবা, ভোদু শেখ তিন দিন পরে কলকাতা হাইকোর্টে যান। ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে, তার মেয়ে, জামাই এবং নাতিকে হাজির করার জন্য তার হেবিয়াস কর্পাস আবেদন নথিভুক্ত করা হয়।

কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও তথ্য না পেয়ে এবং তার গর্ভবতী মেয়ের চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াই সন্তান প্রসবের আশঙ্কায় অজানা দেশে, ভোদু জরুরি হস্তক্ষেপের জন্য আবেদন করেছিলেন। তার আবেদনে তিনিও বলেছিলেন যে, পরিবার তাদের ভারতীয় বংশোদ্ভূত দেখানোর জন্য আধার, ভোটার আইডি, প্যান কার্ড এবং জমির রেকর্ড সরবরাহ করেছিল, তবুও কর্তৃপক্ষ তাদের বহিষ্কার করেছিল।

বাংলাদেশ থেকে ফিরতে পারলেও, সোনালি এবং তার পরিবারের জন্য ক্ষুধা, ভয় এবং অপমানিত হওয়ার কষ্ট ছিল। ‘আমরা নরকে রয়ে গেলাম। আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য আমাদের কাছে ৫ টাকাও ছিল না,’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এক সেট কাপড় ছিল, আমার হলুদ কুর্তা এবং নীল সালোয়ার। আমার ছেলের লাল টি-শার্ট এবং কালো হাফ প্যান্ট। খাবার এবং আশ্রয়ের জন্য, অপরিচিতদের করুণা ছিল।’

প্রথমে যখন তারা বাংলাদেশে প্রবেশের কয়েকদিন পর ফিরে আসার চেষ্টা করেছিল, তখন সে বলে যে ভারতীয় পক্ষ তাদের অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের নির্মমভাবে মারধর করেছিল। ‘আমাদের প্রোফাইল করা হয়েছিল কেবল কারণ আমরা বাংলাভাষী মুসলিম।’

আপাতত বাড়িতে খাতলেও সোনালি বলেন যে, তার হৃদয় ভয় এবং ভবিষ্যত নিয়ে দুঃচিন্তায় ভারী। ‘আমরা কি আর কোনও নথি পেতে পারি? যদি আমাদের আবার তাড়িয়ে দেওয়া হয়? এটা ভেবে আমি ঘুমাতে পারছি না।’

সূত্র: টিওআই।