রংপুরে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ - ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ভালো আছেন মন্তব্য করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আয়োজনে ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা, হাইকমিশনে হামলা ও পতাকা পোড়ানের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘পতিত হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানী দেয়ার চেস্টা করছেন। ভারত সরকারকে এই কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বক্তারা।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুরে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।
এ সময় মিছিলটি নগরীর গ্রান্ড হোটেল মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রেসক্লাব চত্বর ঘুরে আবারো গ্রান্ড হোটেল মোড়ে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ। সেখানে সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশে ফ্রন্ট নেতাদের পাশাপাশি সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু।
সমাবেশে হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ঐক্য ফ্রন্টের পীরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রবীন চন্দ্র মোহন্ত বলেন, ‘ভারতে সহকারী হাইকমিশনে মৌলবাদী হিন্দুরা হামলা করেছে। আমরা রংপুরের সকল হিন্দুদের পক্ষ থেকে তাই প্রতিবাদে মাঠে নেমেছি। আমরা ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি। শান্তি সম্প্রীতির দেশ আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের এই দেশে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমরা সবাই সম্প্রীতিতে বসবাস করি। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে যেকোনো শত্রুকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা আমাদের বাংলাদেশের আছে। আমরা ভারতকে বলতে চাই, তারা যেন আমাদের বিষয়ে নাক না গলায়। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটায়।’
ফ্রন্টের রংপুর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ সাহা জানান, ‘আমরা বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শান্তিতে আছি। আমরা ভারতীয় নাগরিকদের জানাতে চাই। হিন্দুরা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান করছে। আপনারা কোনো রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করবেন না।’
রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায় জানান, ‘বাংলাদেশে আমরা হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সবাই এক, অভিন্ন নই। আমরা সুন্দরভাবে বসবাস করছি কোনো সাম্প্রদায়িক ঝামেলা ছাড়াই। কিন্তু পতিত হাসিনা সরকার ভারতে পালিয়ে গিয়ে ভারত সরকারকে উস্কে দিয়ে আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাম্বাসিতে হামলা ও পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদ জানাতে মিছিল করছি। এরপর যদি কেউ এ ধরণের ঘটনা ঘটায় তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার মোকাবিলা করবো।’
তিনি বিপ্লব বলেন, ‘বাংলাদেশে সনাতনী সম্প্রদায়ের ওপর যে নির্যাতনের কথা বলা হচ্ছে তা মিথ্যা। পতিত আওয়ামী লীগের যে পেতাত্মারা আছে তাদের যোগসাজসে ভারতের কিছু মিডিয়া বিভিন্ন মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর মূল কারণ হলো সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নষ্ট করা। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা বেঁচে থাকতে তা হতে দিবে না।’
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ঐক্য ফ্রন্ট রংপুর জেলার সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং মুসলমান ভাইয়েরা আমরা আগে থেকেই ঐক্যবদ্ধ। তা আজকের নয়, এটা আমাদের শত বছরের ঐক্য। ভারতীয় যে দালালরা পতিত হাসিনার ইন্ধনে মিথ্যা প্রচারণা, হামলা ও জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছে। এরা হাসিনার পতনকে মেনে নিতে পারেনি। তাদেরকে জানাতে চাই, আমাদের ঐক্য এখন আগের চেয়েও মজবুত। আমরা ১০ ভাগ হিন্দু বাংলাদেশে যে সম্মানের সাথে বসবাস করি। পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে এ ধরণের সংখ্যালঘু লোক বসবাস করার নজির নেই। এরপর যদি আর ষড়যন্ত্র করা হয় আমরা সকলে মিলে এর জবাব দিব।’