আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন-ক্ষণ ঠিক না হলেও চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক তৎপরতায় বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জেলাজুড়ে বইছে এখন নির্বাচনি হাওয়া। পাঁচটি নির্বাচনি এলাকায় এখন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণায় সরগরম। প্রতিদিনই জেলার সব নির্বাচনি এলাকায় বিএনপি কিংবা তার অঙ্গসংগঠন নানা কর্মসূচি ও সাংগঠনিক সভা-সমাবেশ করছে। সাংগঠনিক ভিত শক্ত করতে নানা কর্মসূচি পালনে পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীও।
এছাড়া ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিসও এখানকার রাজনীতির মাঠে নানা কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় রয়েছে। এমনিতেই চাঁদপুরের সব কয়টি আসন বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসাবে পরিচিত। গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচেন এখানকার সব কয়টি আসন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ৫ আগস্টের পর পুরো জেলার পরিস্থিতি দ্রুত পালটে যায়। বিএনপির নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের কাউকে এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশেরই মোবাইল ফোন এখন বন্ধ।
এখন চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে বিএনপি নেতা সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন, বিএনপি মালয়েশিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, অস্ট্রেলিয়া বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান, রাজধানীর বনানী শাখা বিএনপির নেতা ইমাম হোসেন নুরের নাম বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে শোনা যাচ্ছে। এখানে বিএনপির স্থানীয় উপজেলাসহ অন্য কমিটিগুলো মোশারফ হোসেনের নিয়ন্ত্রিত বলে জানা যায়। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ) আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত নুরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, বিএনপি নেতা মাহবুব সরকার শামিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মো. জালাল আহমেদ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপুর নাম দলীয় প্রার্থী হিসাবে শোনা যাচ্ছে। অনেক নেতাকে মতলবের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেলেও তানভীর হুদা প্রায় প্রতিদিনই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকছেন বলে জানান স্থানীয় বিএনপি কর্মী আসগর আলী।
চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর-হাইমচর) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ও বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান শাহিন ও মোস্তফা খান সফরীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে প্রচার ও সাংগঠনিক তৎপরতায় জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক অনেক এগিয়ে ও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। প্রতিদিনই এ নির্বাচনি এলাকায় দলের নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তিনি। এখানে স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করছেন।
চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক লায়ন হারুনুর রশিদ, কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী, ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি এমএ হান্নানের নাম শোনা যাচ্ছে।
চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের নাম শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনি মাঠে এই দুই নেতা ও তাদের অনুসারীরা রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি পালনে তৎপর দেখা যাচ্ছে।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী অনেক আগে থেকেই তাদের চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছেন বলে জানানেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান। তিনি জানান চাঁদপুর-১ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা আবু নসর আশরাফী, চাঁদপুর-৩ আসনে দলের জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান, চাঁদপুর-৪ আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা বিল্লাল হোসাইন মিয়াজি, চাঁদপুর-৫ আসনে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল হোসাইনের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
চাঁদপুর-২ আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান। তবে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর ডা. আবদুল মবিন দেওয়ান, আবুল বাশার ও আবদুর রব পাটোয়ারীর নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে শোনা যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে বিএনপির প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্লা সেলিম যুগান্তরকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার অথবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই বিএনপির জন্ম হয়েছে। বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।